শনিবার, 19 জুলাই 2025
Logo
  • শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

ভর্তি, নিয়োগে ফের জটিলতা, রাজ্যের নয়া ওবিসি তালিকা স্থগিত হাইকোর্টে

 ‌রাজ্যের জারি করা নতুন ওবিসি বিজ্ঞপ্তির উপর আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। সোমবার পোর্টাল চালু করে সমস্ত দপ্তরে কাস্ট সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার আবেদন করতে বলেছিল রাজ্য। 

ভর্তি, নিয়োগে ফের জটিলতা, রাজ্যের নয়া ওবিসি তালিকা স্থগিত হাইকোর্টে

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‌রাজ্যের জারি করা নতুন ওবিসি বিজ্ঞপ্তির উপর আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। সোমবার পোর্টাল চালু করে সমস্ত দপ্তরে কাস্ট সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার আবেদন করতে বলেছিল রাজ্য। তাতেও স্থগিতাদেশ জারি করেছে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ। আগামী ২৪ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি। হাইকোর্টের এদিনের নির্দেশের পর স্বাভাবিকভাবেই স্কুল-কলেজে ভর্তি থেকে শুরু করে নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত প্রক্রিয়ায় ফের জটিলতা তৈরি হল। মঙ্গলবারের নির্দেশের ফলে স্কুল-কলেজে ভর্তি এবং চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ১৪০টি শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করে জারি হওয়া ওবিসি সংক্রান্ত নয়া বিজ্ঞপ্তি কার্যকর হবে না। ওবিসি সংরক্ষণ ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৭ শতাংশ করার যে সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার নিয়েছিল, তাও স্থগিত হয়ে গেল। যদিও নতুন করে ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া ৭৬টি শ্রেণির ক্ষেত্রেই স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে। আগের ৬৬টি শ্রেণির জন্য নয়। ফলে স্নাতকে ভর্তির কেন্দ্রীয় পোর্টালের যাবতীয় প্রক্রিয়াও জারি থাকবে। হাইকোর্টের নির্দেশের পর বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় কি না, সে ব্যাপারে আইনি পরামর্শ নিচ্ছে রাজ্য সরকার।
অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ কমিশনের ভিত্তিতে রাজ্য নতুন ওবিসি বিজ্ঞপ্তি জারি করার পরই তাকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে। মঙ্গলবার বিচারপতি চক্রবর্তী এবং বিচারপতি মান্থার ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানিতে কেন্দ্রের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর অশোক চক্রবর্তী দাবি করেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে চেয়ারম্যান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল কমিশন অব ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস বা এনসিবিসি’র বৈঠকে ওবিসি নিয়ে দু’টি সম্প্রদায়ের মধ্যে পরিবর্তনের কথা উঠে আসে। আর সেই পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্য রাজ্যের কাছে তলব করেছিল এনসিবিসি। তা রাজ্য দেয়নি। কিন্তু দু’টি সম্প্রদায়ের মধ্যে ওবিসি সংক্রান্ত পরিবর্তনের ফলে ‘ডেঞ্জারাস ডেমোগ্রাফিক এফেক্ট’ পড়বে। রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণি কমিশন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফলে এটা গ্রহণযোগ্য কি না, সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত মামলাটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। সেখানে সমীক্ষার কথা জানানো হয়েছে। তালিকাও জমা দেওয়া হবে। ফলে অপেক্ষা করা উচিত। রাজ্যের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মান্থা ও বিচারপতি চক্রবর্তী বিজ্ঞপ্তি জারি করা নিয়ে নানান প্রশ্ন তুলে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের নির্দেশ দেন। যদিও অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনও সম্প্রদায়কে আমরা সুযোগ করে দিচ্ছি। কিন্তু মামলাকারী অমলচন্দ্র দাস কে? তাঁর কী উদ্দেশ্য রয়েছে? জনস্বার্থ মামলায় জনগণের স্বার্থ দেখা উচিত। তিনি আগে কোনও পদক্ষেপ করেননি। হঠাৎ আদালতে এসে বলছেন কেন? তিনি কোন সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্য নিয়ে আদালতে এসেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’ ডিভিশন বেঞ্চ তখন জানায়, মামলার গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে রায়ে আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। বিচারপতি মান্থা বলেন, ‘হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়ার আগে পর্যন্ত গত ১৫ বছর ধরে কিছু সম্প্রদায়কে ওবিসি তালিকাভুক্ত করে বাড়তি সুবিধা দিয়ে আসা হয়েছে। আইন বলছে, ১০ বছর অন্তর সমীক্ষা করতে হয়। তাহলে রাজ্য কেন সমীক্ষা করে দেখেনি যে, সুবিধা পাওয়ার ফলে তাদের কী সামাজিক পরিবর্তন হয়েছে? কেন আদালতের নির্দেশ মতো বিধানসভায় বিল পাশ করে বিষয়টি নির্ধারণ করা হল না?’ উত্তরে এজি জানান, বিষয়টি বিধানসভায় পেশ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এই বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। ড্রাফ্ট কপি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তখন গেজেট প্রকাশ হয়নি। বিচারপতি চক্রবর্তী তখন বলেন, ‘আমরা ৬৬টি সম্প্রদায়কে নিয়ে কিছু করিনি। তাদের নিয়ে প্রক্রিয়া চালিয়ে যান। আমরা কোনও নির্দেশ দিতে চাইনি। সুপ্রিম কোর্টে মামলা রয়েছে। আপনারা পদক্ষেপ নেওয়ায় আমাদের মামলা শুনতে হচ্ছে।’
এরপরই সওয়াল করতে গিয়ে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আপনাদের রায়ে কিছু গ্রে অর্থাৎ অস্পষ্ট অংশ রয়েছে। হতে পারে আমি ভুল। আমি সংসদের কমিটিতে রয়েছি। ২০১৫ সাল থেকে কেন্দ্রীয় কমিশন কোনও রিপোর্ট জমা দেয়নি।’ তিনিও সুপ্রিম কোর্টের জন্য অপেক্ষা করার কথা বলে আদালতের কাছে অন্তর্বতী নির্দেশ না দেওয়ার আর্জি জানান। বলেন, সুপ্রিম কোর্টের জন্য অপেক্ষা করা উচিত। যদিও মূল মামলাকারীদের আইনজীবী এস শ্রীরাম দাবি করেন, রায়ে কোনও ‘গ্রে’ অংশ নেই।

রাশিফল