পেশাদারি ও ব্যবসায়িক কর্মোন্নতি ও ধনাগম যোগ। শারীরিক সমস্যায় মানসিক অশান্তিভোগ। আঘাত লাগতে পারে। ... বিশদ
প্রথমেই একটি বহুল প্রচারিত ধারণায় আলোকপাত করা যাক। আজকাল, কলকাতা শহরে আর খাটাল দেখা যায় না, যাওয়া উচিতও নয়। কিন্তু একটু শহরতলির দিকে গেলেই মিলবে খাটাল। অনেকেই সামনে দাঁড়িয়ে থেকে গরুর দুধ কিনে নিয়ে আসেন। ভারতে গৃহপালিত প্রাণীর দেহে ইঞ্জেকশন দিয়ে দুধ উৎপাদন বাড়ানো খুব স্বাভাবিক ঘটনা। অনেকেই এই নিয়ে চিন্তিত। গোরুকে অক্সিটোসিন ইঞ্জেকশন দিয়ে দুধ নিলে সেই দুধে কিছুটা হর্মোন মিশতেই পারে। তাতে শারীরিক ক্ষতি হয় কী না, সেই বিষয়ে দুশ্চিন্তা থাকা স্বাভাবিক। এই নিয়ে সত্যিই সেইরকম গবেষণা ভারতে হয়নি। তবে দেখা গিয়েছে, অক্সিটোসিন হর্মোন মানব পাকস্থলীতে ঢুকেই নষ্ট হয়ে যায়। অন্ত্র থেকে রক্তে মেশার সুযোগ পায় না। ফলে এইরকম দুধ খেলেও হর্মোনের জন্য শারীরিক অসুস্থতার চান্স কম। কিন্তু অক্সিটোসিন হর্মোন দিয়ে কৃত্রিমভাবে দুধের উৎপাদন বাড়ালে সেই দুধে খাদ্যগুণ কতটা ঠিক থাকে, সেটা বলা যায় না।
তবে একটা কথা বলে দিই যে, এভাবে খাটাল থেকে দুধ আনলে সেই দুধ না ফুটিয়ে পান করবেন না। দুধ বা ডিমজাতীয় খাদ্য কিন্তু খুব ভালো কালচার মিডিয়াম। চট করে জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে পারে। প্যাকেটের দুধ পাস্তুরাইজ করা থাকে। না ফোটালেও চলে। কিন্তু প্যাকেট খুললে সেই দুধ বেশিদিন রাখবেন না। এরকমই দেখবেন কিছু কিছু দুধের প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে ইউ এইচ টি মিল্ক। এর মানে হল ১৪০ ডিগ্রিতে গরম করে দুধটি প্যাক করা। এদের প্যাকেটবন্দি অবস্থায় অনেকদিন রাখা যায়।
এবার আসি, বাজারের দুধের কথায়। আপনি দুধ কিনতে গেলেই দেখবেন রয়েছে হরেক রকমের দুধ— টোনড মিল্ক, ডাবল টোনড মিল্ক, স্কিমড মিল্ক ইত্যাদি। এমনিতে গোদুগ্ধে ফ্যাট থাকে ৪ থেকে ৫ শতাংশ। তবে এই মাত্রা সবার ক্ষেত্রে সমান নয়। গোরুর প্রজাতি, খাদ্য বা বয়সের উপর দুধের বিভিন্ন উপাদানের অনুপাত অনেকটাই পরিবর্তন হয়। কিন্তু যখন ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে দুধ উৎপাদন হচ্ছে, তখন পণ্যের মান একরকম রাখতেই হবে। ফলে কোম্পানি এখন গোরু বা মোষের দুধ সরাসরি ক্রেতার কাছে বিক্রি করবে না, কেননা প্রাকৃতিক দুধে বিভিন্ন উপাদানের অনুপাত পরিবর্তন হয়; কোম্পানির পক্ষে প্যাকেটের গায়ে তার উপাদান ছাপানো অসম্ভব। তাই ভারতে এখন গরু বা মোষের দুধ সরাসরি বিক্রি হয় না; দেওয়া হয় টোনড মিল্ক। এক্ষেত্রে মোষের দুধের সঙ্গে স্কিমড মিল্ক, জল এবং আরও কিছু উপাদান মিশিয়ে ফ্যাটের অনুপাত কমানো হয় (ফ্যাট ৩ শতাংশ)। এতে দুধের পরিমাণ বাড়ে, যেটা ভারতের মতো দেশে দৈনিক চাহিদা মেটাতে খুবই দরকার এবং সেই সঙ্গে স্নেহপদার্থ কমে দুধ সহজপাচ্যও হয়। অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে আরও একটু কম স্নেহপদার্থসম্পন্ন দুধ পান করতে চান। তাদের জন্য রয়েছে ডাবল টোনড মিল্ক (ফ্যাট ১.৫ শতাংশ) বা স্কিমড মিল্ক (ফ্যাট ১ শতাংশেরও কম)। নিয়ম হল যে এভাবে দুধ পরিশোধন করার সময় ফ্যাটের পরিমাণ কমলেও নন-ফ্যাট সলিড বা এস এন এফের পরিমাণ কিন্তু ঠিক রাখতেই হবে (ন্যূনতম ৮.৫ শতাংশ)। তাই এইরকম দুধ পান করলেও অন্যান্য যে সব অত্যাবশ্যকীয় উপাদান রয়েছে, যেমন প্রোটিন বা ল্যাকটোজ, তাদের ঘাটতি হওয়ার কথা নয়।
ল্যাকটোজ নিয়ে কিছু কথা বলি। আমাদের দেশে অনেকেরই দুধ খেলেই পেটে সহ্য হয় না। কারণ তাঁদের দুধে থাকা উপাদান ল্যাকটোজ সহ্য হয় না। কিন্তু চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সেই সম্পর্কে পরামর্শ না নিয়ে লোকে সারা জীবন মুঠো মুঠো গ্যাসের ওষুধ খেয়ে কাটিয়ে দেয়। এরকম অসুবিধা থাকলে প্রথম কাজ হল দুধ খাওয়া বন্ধ করা। কারণ আগেই বলেছি ল্যাকটোজ পরিপাক করার উৎসেচক এই সব মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রে থাকে না। ফলে দুধ হজম হয় না। এইরকম হলে এখন দুধের বদলে দু’টি খাদ্য রয়েছে, যেগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে। এক নম্বর হল সোয়াবিনের দুধ। অনেক দোকানেই পাওয়া যায়। এতে ল্যাকটোজ থাকে না। ফলে হজমের অসুবিধা হবে না। কিন্তু অনেকের সোয়াবিনের গন্ধে অসুবিধা হয়। তারা ফ্লেভার দেওয়া দুধ নিতে পারেন। আর দু’নম্বর হল অতিসম্প্রতি বাজারে আসা ল্যাকটোজ ফ্রি মিল্ক। এটি সাধারণ টোনড মিল্কের মতোই। শুধু ল্যাকটোজ কৃত্রিমভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।
হোল মিল্ক বা ফুল ক্রিম মিল্কে, নামেই বুঝতে পারছেন, যে ফ্যাট বেশি থাকবে। আপনার অন্যান্য শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে যে আপনি এরকম দুধ খাবেন কিনা। ডায়াবেটিস থাকলে এরকম দুধ না নেওয়াই ভালো।
শেষ করার আগে একটি কথা বলি। ভারতে ভেজালের সমস্যা খুব বেশি, সেটা আপনারা জানেন। প্যাকেটের গায়ে যেটা ছাপা থাকবে, সেই খাদ্যদ্রব্যই যে আছে, সে কথা কি জোর দিয়ে বলা যায়? সুতরাং অনামী কোম্পানির দুধ কিনতে হলে সাবধান। সম্প্রতি দুধেও নানা ভেজাল মেশানোর প্রমাণ মাঝে মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।