পেশাদারি ও ব্যবসায়িক কর্মোন্নতি ও ধনাগম যোগ। শারীরিক সমস্যায় মানসিক অশান্তিভোগ। আঘাত লাগতে পারে। ... বিশদ
এই কথাগুলো তো নতুন নয়! সকলেই জানে। তাহলে আবার এরকম বিবরণ দেওয়ার দরকার কী? এখানেই ভয়ের সূত্রপাত। এই যে উপরে বর্ণিত পরিস্থিতি, এটা আমরা সকলেই দিনযাপনে উপলব্ধি করছি। কিন্তু রাষ্ট্র অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার এই কথাগুলো মানতে চাইছে না। কখনও এই বিষয়গুলি নিয়ে আশ্বাস দিতে শুনি না। বরং উল্টে তাদের মনোভাব এমন হয় যেন, এগুলো আসলে সমস্যাই নয়। রাষ্ট্র এসব ক্ষেত্রে মানুষকে বলতেই পারে যে, হ্যাঁ, সত্যিই জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, আমরা পেট্রল ডিজেলের দাম কমাতে পারছি না, ব্যাঙ্কে আর একটু সুদ বেশি দেওয়া দরকার সেটা ঠিক। আমরা প্রাণপণে চেষ্টা করছি। যাতে একটা কোনও সুরাহার পথ দেওয়া যায়। কিন্তু এরকম কোনও সৎ স্পষ্ট স্বীকারোক্তিই পাওয়া যায় না। বরং একদিকে যেমন রাষ্ট্র স্বীকারই করছে না এগুলো মানুষের জন্য বিপুল সমস্যা, সেরকমই তারা আবার আমাদের দৃষ্টি এসব থেকে সরিয়ে দিচ্ছে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে।
আমরা দেখতে পাই, আমাদের দৈনন্দিন সমস্যা কমানোর চেষ্টার বদলে নেহরু কিংবা ঔরঙ্গজেব কতটা খারাপ ছিলেন, সেসব কথা বলা হয় সভাসমাবেশ, সরকারি মঞ্চে। আমরা ২০২২ সালে ওসব শুনে কী করব? বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির এই চরম সঙ্কটের সময় হঠাৎ হঠাৎ দেখতে পাই, দিল্লিতে, রাজস্থানে, উত্তরপ্রদেশে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, সংঘাত বেড়ে যাচ্ছে। আমরা হঠাৎ দেখছি, হিজাব পরে মেয়েরা স্কুলে আসবে কি না, ধর্মস্থানে লাউডস্পিকার চলা উচিত কি না, হনুমান চালিশা পড়া নিয়ে বিতর্ক, এসব জাতীয় স্তরের ইস্যু হয়ে যাচ্ছে। হিন্দি রাষ্ট্রভাষা কি না এসব হয়ে যাচ্ছে ন্যাশনাল বিতর্ক।
মাঝেমধ্যেই কেউ বলছে হিন্দি রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। সেটা নিয়ে অহিন্দি রাজ্য বনাম হিন্দিভাষী রাজ্যগুলির নাগরিকদের মধ্যে চলছে অবিরত ঝগড়া। রমজান অথবা রামনবমী। বেছে বেছে ধর্মীয় উৎসবের দিনেই কোনও না কোনও রাজ্যে দেখা যাচ্ছে সাম্প্রদায়িক সংঘাত তৈরি হচ্ছে নিয়ম করে। কেন?
এসব থেকে ভয় বাড়ছে। কারণ, প্রতিদিনের সমস্যাগুলি থেকে আমাদের মন সরিয়ে নেওয়ার এই সব চেষ্টার পিছনে কোনও অন্য উদ্দেশ্য নেই তো? আমাদের দেশ আর্থিকভাবে যথেষ্ট সচ্ছল, যথেষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ, যথেষ্ট শক্তিশালী আছে তো? সরকারি অর্থভাণ্ডারের সত্যিই অবস্থাটা ঠিক কেমন? ব্যাঙ্কগুলির কাছে পর্যাপ্ত অর্থ গচ্ছিত আছে তো? আমাদের সামান্য টাকাগুলো সব নিরাপদে রাখা থাকবে তো ভবিষ্যতের জন্য? আমরা যখন হিন্দু মুসলমান, জাতপাত, ভাষাগত সংঘাতে ক্রমেই নিজেদের বেশি করে যুক্ত করে ফেলছি, যখন রাজ্যস্তরেও অবান্তর সব ইস্যুতে নিরন্তর সময় নষ্ট করে চলেছি সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ হয়ে, তখন আড়ালে ঠিক কী ঘটছে? আমরা শ্রীলঙ্কার ঘটনাক্রম ঠিকভাবে লক্ষ্য করছি তো?
২০১৫ সাল থেকে ভারতের সরকারি ব্যাঙ্কগুলি লাগাতার লোকসান করে চলেছে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে প্রত্যেকটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কই মুনাফা করেছে। তাহলে সরকারি ব্যাঙ্ককে বেসরকারি হাতে বিক্রি করার পরিকল্পনা কেন? আমরা বেসরকারি ব্যাঙ্কের পরিবর্তে সরকারি ব্যাঙ্কেই অ্যাকাউন্ট করেছি কিংবা ফিক্সড ডিপোজিট রেখেছিলাম সরকারি ব্যবস্থায় আস্থার কারণে। তাহলে আমাদের সেইসব টাকা আগামী দিনে বেসরকারি হাতে চলে যাবে কেন? যেমন এলআইসির শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। আমাদের প্রভিডেন্ড ফান্ডের টাকা শেয়ার বাজারে খাটানো হচ্ছে। সরকারি সংস্থা, সরকারি জমি বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন হল, হঠাৎ এত টাকার দরকার পড়ছে কেন সরকারের? ঘটিবাটি বিক্রি করে দেওয়ার মতো একটা মনোভাব তৈরি হওয়ার পিছনে কারণ কী? সরকার, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সরকারি ব্যাঙ্ক, সকলের আর্থিক অবস্থাটা আসলে কেমন আছে এখন? আমরা জানতে পারছি না। তাই এই আচরণগুলো দেখে ভয় পাচ্ছি। আমরা যখন কর্মক্ষম থাকব না, তখন আমাদের কীভাবে দিন কাটবে? চাকরি অথবা ব্যবসাটাও কতদিন থাকবে? আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎটা ঠিক কতটা সুরক্ষিত? কেন আমাদের অলক্ষ্যে ইনসলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাংরাপ্টসি আইন এসে যায়? যেখানে যে কোনও সংস্থা অনেক সহজে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে দিতে পারবে! ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলে গ্রাহক ১ লক্ষ টাকার বদলে এবার থেকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে, এই আইন হঠাৎ কেন করতে হল?
রাষ্ট্র যখন তার মস্তিষ্কহীন অনুগত সেনাদের দিয়ে আমাদের মধ্যে নানারকম বিভাজনের বীজ বপন করতে থাকে, তখন ভয় হয় যে, আসলে বোধহয় কিছু গোপন করতে চায় রাষ্ট্র। তাই এভাবে আমাদের চিন্তাকে ডাইভার্ট করে দিতে চায়। রাষ্ট্র চায়, আইডেন্টিটি নিয়ে দেশবাসী যেন নিজেদের মধ্যে সারাক্ষণ ঝগড়াঝাঁটি, মারামারি, সংঘর্ষ, সংঘাত লিপ্ত থাকে। আইডেন্টিটি অর্থাৎ হিন্দু, মুসলিম, দলিত, উচ্চবর্ণ, হিন্দিভাষী, অহিন্দিভাষী, জেনারেল কাস্ট, সিডিউলড কাস্ট ইত্যাদি। এসব নিয়ে বিভাজন, অশান্তি বেড়েই চলেছে। আমরা কোনও না কোনও পক্ষ নিয়ে রাষ্ট্রের সুবিধা করে দিচ্ছি। আমাদের বুদ্ধিহীনতায় রাষ্ট্রের সুবিধা ও আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাচ্ছে। আর আমাদের জন্য কী বাড়ছে? জিনিসপত্রের দাম এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা!