পেশাদারি ও ব্যবসায়িক কর্মোন্নতি ও ধনাগম যোগ। শারীরিক সমস্যায় মানসিক অশান্তিভোগ। আঘাত লাগতে পারে। ... বিশদ
কামরাজ এখন আর নেই। কিন্তু তাঁর প্ল্যানটি পুরোমাত্রায় রয়ে গিয়েছে। সেই পরিকল্পনা এখন অবশ্য কংগ্রেস কার্যকর করছে না! বরং ওই পথে হাঁটা শুরু করেছে তাদেরই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী—বিজেপি। দশ বছর সরকারে থাকার পর প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া গায়ে লাগবেই। আর তার সঙ্গে যদি থাকে বেকারত্ব, বেহাল অর্থনীতি, আকাশছোঁয়া পেট্রল-ডিজেল, অগ্নিমূল্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। তারপরও ছাতি উঁচিয়ে বিজেপি কীভাবে সরকার চালিয়ে যেতে পারছে? কারণ একটাই, দীর্ঘদিন ধরেই লাট খাচ্ছে প্রধান বিকল্প কংগ্রেস। নেতৃত্বহীনতায় তারা পক্ষাঘাতগ্রস্ত। ঢাকঢোল পিটিয়ে হচ্ছে চিন্তন শিবির। তবে সেখান থেকে কিন্তু কোনও নেতা উঠে আসছেন না! ঘোষণা হচ্ছে, এক পরিবার এক টিকিট। ব্যতিক্রম গান্ধীরা। তাঁদের জন্য বেশি টিকিট ধার্য। বছরের পর বছর ধরে যোগ্যতা প্রমাণে ব্যর্থ রাহুল গান্ধীকেই নেতৃত্বে ফেরানোর জন্য ঝুলোঝুলি চলছে। আর নিভৃতে বসে হাসছেন নরেন্দ্র মোদি। সমস্যা তিনি জানেন। উপায়? নিজেরা মাথা খুঁড়ে বের করতে নাই পারেন, ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে রয়েছে মারাত্মক সব বিশল্যকরণী প্ল্যান। তারই মধ্যে অন্যতম কামরাজের থিওরি। বিজেপি শাসিত কোনও রাজ্যে ভোট এলেই ইদানীং দেখা যাচ্ছে, সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীকে বদলে দিচ্ছেন মোদি-শাহ। তাঁরা জানেন, আদপে তাঁদের দলের এইসব সরকার ব্যর্থ। যদি মুখ বদলে ব্যর্থতাকেই একটা মোড়কে সাজিয়ে পেশ করা যায়? পাবলিক খেয়ে যাবে। কারণ তারাও জানে, বিকল্প নেই। এই গেরুয়াদের ধরেকরেই চলতে হবে। নতুন মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই ভালো হবেন! ঠিক যেমনটা করলেন ত্রিপুরার ক্ষেত্রে। দিনের বেলা বিপ্লব দেব দেখা করলেন অমিত শাহের সঙ্গে, আর বিকেলে ফিরেই রাজ্যপালের কাছে পৌঁছে দিলেন ইস্তফাপত্র। কারণ কী? তিনি নাকি দলের জন্য কাজ করতে চান। একই নজির বিজেপি সম্প্রতি রেখেছিল গুজরাত, উত্তরাখণ্ড (দু’বার), কর্ণাটকে। শুধু কি তাই? কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতেও একদফা রদবদল করে ফেলেছেন মোদিজি। বহু নতুন মুখ এসেছেন, অনেক পুরনো মুখকে বিদেয় দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, চব্বিশের লোকসভা ভোটের আগেও বড়সড় আর একদফা রদবদল তিনি করতেই পারেন। সেটাও হবে কিন্তু ওই কামরাজ প্ল্যানেরই অঙ্গ। মোদিজি নিজে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী থেকে যাবেন। তিনি নিজেই সেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। অনেক কাজ বাকি তাঁর। ফলে ৭৫ ঊর্ধ্বদের জন্য যে রাজনৈতিক সন্ন্যাস তিনি দলের মধ্যে বাধ্যতামূলক করেছেন, মোদিজি নিজেই নিজেকে সে সব থেকে ছাড় দিয়েছেন। ফলে রাজা থাকবেন, বদলে যাবে তাঁর নীচের তলা। ঠিক যেমন নেহরু করেছিলেন। মোদি জানেন, এভাবে অন্তত মানুষের সামনে একটা সংস্কারমুখী ক্যানভাস সাজাতে পারলেই কেল্লা ফতে। আপামর ভোটারকুল বলবে, ‘এই তো মোদিজি অযোগ্যদের পোষেন না। দুর্নীতির সঙ্গে আপস করেন না। ক্ষমতার লোভ তাঁর একটুও নেই। সব বদলে দিতে হাত কাঁপে না তাঁর।’ বড় বড় নেতাদের দলের কাজে নামাবেন তিনি। আরও বেশি প্রচার হবে বিজেপি সরকারের সাফল্যের। প্রকাশ্যে আসবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির এজেন্ডা, হিন্দুত্ব রাজনীতি, বিভাজন। দেশের ছোট ছোট জনপদে বাধবে অশান্তি... ফলে দেশ, রাজনীতি, অপদার্থতা নিয়ে ভাবার সময়ও আর থাকবে না। মানতেই হবে, এটা কামরাজ প্ল্যানের একটা নয়া রূপ। আর সেই ফাঁকে কংগ্রেস কী করবে? চিন্তন শিবির?
কংগ্রেস হল শতাব্দীপ্রাচীন পার্টি। একটু ঠাঁটবাট থাকবেই। কিন্তু তার সঙ্গে রাজনৈতিক বোধ এবং বাস্তবতা থাকাটা বাঞ্ছনীয়। সেটারই বড্ড অভাব। তারপরও হাঁকডাকের শেষ নেই। উদয়পুরের মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাহুল গান্ধী কী বলছেন? আঞ্চলিক দলগুলিকে দিয়ে নেতৃত্ব হবে না। ওই ভারটা কংগ্রেসের কাঁধেই থাক। কিন্তু রাহুল মহাশয়, আপনার নিজের দলেরই তো নেতৃত্বের ঠিকঠিকানা নেই। অসুস্থ সোনিয়া গান্ধীকে এখনও দলের হাল ধরতে হিল্লি দিল্লি করতে হয়। বাঘা বাঘা ‘প্রাচীন’ নেতারা আলাদা অংশ তৈরি করে বিদ্রোহ করেন। আর প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘আমাকে নেতৃত্বে টেনে পরিবারের মধ্যে ঝগড়া বাধাবেন না’! এই দলই নাকি মহাজোটের নেতৃত্বে অটোম্যাটিক চয়েজ?
আসলে বিজেপির এটাই এজেন্ডা। কংগ্রেসকে লাগাতার নিশানায় রেখে যাওয়া। তারা জানে, কংগ্রেস ছাড়া মহাজোট এবং মোদিজিকে পর্যুদস্ত করার কাজটা কঠিন। আঞ্চলিক দলগুলি ফুলেফেঁপে উঠতেই পারে, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া এখনও কেউ নেতৃত্বের স্বার্থচিন্তা ছেড়ে বেরিয়ে আসার সাহস দেখাতে পারেননি। তাই কংগ্রেসকে নিশানা করে গেলেই হবে। এই ধুঁকতে থাকা অবস্থাতেও তারা নিজেদের মহান দল হিসেবে ভাববে, আর তার ফল? রাহুল গান্ধীরা তোয়াক্কাই করবে না আঞ্চলিক শক্তিগুলির। রাজনীতির ময়দানে গুরুত্বহীন করে রাখার ছকটাই অনন্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেন কিছুতেই বিরোধী শক্তির সামনের সারিতে আসতে না পারেন—এটাই লক্ষ্য বিজেপির। বরং এলেবেলের স্তরে পৌঁছে যাওয়া কংগ্রেস যত খুশি গুরুত্ব পাক, ক্ষতি নেই। কিছুতেই যেন জোটের জমি শক্ত না হয়। তাহলেই মানুষ বিকল্প না খুঁজে মোদিজিতে ফের আস্থা রাখবেন। চব্বিশেও পদ্ম ফুটবে সংসদে।
নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ছুটছেন মোদি—তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রিত্ব। আঞ্চলিক দলগুলি যেন জাতীয় রাজনীতির মূল মঞ্চে উঠে আসার সুযোগ না পায়। তাহলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। শাসক যা বলবে, তাকেই ধ্যানজ্ঞান হিসেবে মানুষ আর মানবে না। হ্যাটট্রিকের ক্ষেত্রে এ যে বিরাট বাধা! ইন্দিরা গান্ধী দু’বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনবারের শিরোপা একজনেরই—জওহরলাল নেহরু। চীনের চোখরাঙানি আজও আছে। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় রয়েছে যে কামরাজ প্ল্যানও! রাহুল গান্ধী চিন্তন শিবির করুন... ভারত জোড়োর স্লোগান তুলুন। মোদির লক্ষ্য স্পষ্ট—বিভাজনেই ধরা দেবে নেহরুর রেকর্ড।