বিদ্যার্থীরা মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
ভারত সহ বিশ্বজুড়েই দেখা যাচ্ছে, বহু রোগী কোভিড থেকে উঠলেও পরবর্তীকালে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে হার্ট, ফুসফুস, কিডনিতে দীর্ঘকালীন কুপ্রভাব ফেলে কোভিড। তাই রোগ থেকে সেরে ওঠার পরও শারীরিক ও মানসিক কিছু বিষয়ে নজর দিলে এড়ানো যাবে বড় বিপদ।
কোন দিকে নজর, কী কী টেস্ট?
ফুসফুস: সংক্রমণের কারণে ফুসফুস যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পরেও সপ্তাহখানেক অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপুন। শ্বাসের সমস্যা হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
হার্ট: করোনার কারণে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হলে হার্টেও অক্সিজেন পৌঁছয় কম। হার্ট দুর্বল হতে থাকে। এই কারণে হার্ট ফেলিওর, ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজের রোগীদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। স্টেন্ট বা বাইপাস সার্জারি হয়ে থাকলেও সাবধান থাকুন। শুধু তাই নয়, হার্টের রোগ না থাকা ব্যক্তির কোভিড হলে, তিনিও সমস্যায় পড়তে পারেন। তাই হার্ট রেট একটানা একশোর বেশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে রোগী মায়োকার্ডাইটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পর বুকে খুব চাপ অনুভব করলে ইসিজি, ইকো করিয়ে নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে করান লিপিড প্রোফাইল। নিয়মিত ব্লাড প্রেশার মাপুন। বিপদ বুঝলে ডাক্তার দেখান।
সুগার: হাসপাতাল থেকে ছুটির পর বাড়িতে গিয়েও স্টেরয়েড নিচ্ছেন, চিকিৎসকের পরামর্শমতো নিয়মিত সুগার মাপুন। প্রয়োজনে ওষুধ বা ইনসুলিন নিন। এমনকী স্টেরয়েড বন্ধ করে দেওয়ার পরেও চিকিৎসকের পরামর্শমতো বেশ কিছুদিন রক্তে সুগারের মাত্রা দেখুন ও সেই বুঝে ওষুধ খান।
কিডনি, লিভারের সুস্থতা: বাড়ি ফেরার দুই সপ্তাহ পর ব্লাড ইউরিয়া-ক্রিয়েটিনিন, লিভার ফাংশন টেস্ট করাতেও হতে পারে রোগীকে।
ব্যায়াম: কোভিডজয়ীরা সাধারণ শ্বাসের ব্যায়াম ও প্রাণায়াম করতে পারেন। ধীরে ধীরে আগের রুটিন অর্থাৎ জগিং, স্কিপিং বা যোগাভ্যাসে ফিরুন। দুর্বলতা ও ওজন হ্রাসের সমস্যা দূর করতে পাতে রাখুন পর্যাপ্ত শাকসব্জি। সঙ্গে ডিম, মাছ, মাংস বা ডাল। রোজ একটা করে মরশুমি ফল খেলে কথাই নেই!
মনের জোর বাড়ান
শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সমস্যা: করোনা আক্রান্ত শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা বেশিরভাগ সময় ঘরে শুয়ে-বসে মোবাইলকে সম্বল করে বাঁচছে। এই অতিরিক্ত ডিজিটাল প্রীতির জন্য মনোযোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক বাচ্চা একনাগাড়ে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারে না। মনোযোগ দিতে পারে না। পড়তে বসালে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। এছাড়া অসুখের স্মৃতিও বহু বাচ্চার মনে আতঙ্ক তৈরি করছে যা কাটাতে না পারলে গোটা জীবন ছোটরা এই স্মৃতি বয়ে বেড়াবে। আতঙ্কের প্রভাব পড়বে তার ব্যক্তিত্বের গঠনে। তাই বাচ্চার মধ্যে অস্থিরতা, খিটখিটে ভাব, অকারণে কান্নাকাটি, মুখ গোমড়া করে থাকা, খিদে কম, ভালোলাগার কাজ না করার প্রবণতা দেখা দিলে সতর্ক হন। সন্তানকে মনোবিদের কাছে নিয়ে যান।
সমাধান: করোনা হওয়ার সময় থেকেই ব্যবস্থা নিন। বাচ্চার সামনে রোগ নিয়ে অহেতুক আতঙ্ক তৈরি করবেন না। আর পাঁচটা রোগের মতো দেখুন। অভিভাবকরা মানসিক দৃঢ়তা দেখালে শিশু-কিশোর-কিশোরীর উপরও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাচ্চার মনের জোর বাড়ান। বুঝিয়ে বলুন, তুমি করোনা থেকে সেরে উঠেছ। তুমি এই রোগের থেকেও শক্তিশালী। তাই তোমার চিন্তার কিছুই নেই। যত শীঘ্র সম্ভব ওদের নিজস্ব রুটিনে ফেরাতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে বসানো, স্নান, খাওয়া, টিভি দেখা সব চলুক। আঁকা, গান গাওয়া, লেখার মতো সৃষ্টিশীল কাজে বাচ্চাকে ব্যস্ত রাখতে পারলে তো খুব ভালো। চিকিৎসকের পরামর্শমতো বাড়িতেই ওকে খেলতে দিন। ওর সঙ্গে সময় কাটান, গল্প করুন, খেলুন, টিভি দেখুন। ভালো কাজের প্রশংসা করে পিঠ চাপড়ে দিন। আদরে জড়িয়ে ধরুন, মাথার চুলে বিলি কেটে দিন। এতে ওদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্ম নেবে। মনও থাকবে ভালো।
বড়দের সমস্যা: করোনা হাসপাতালের বেড, মুখে অক্সিজেন মাস্ক, গুচ্ছের ওষুধ-ইঞ্জেকশন, রাতদিন টেস্ট, আইসিইউ, মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া— এইসব স্মৃতি সহজে মন থেকে যেতে চাইছে না করোনা জয়ীদের। জন্ম নিচ্ছে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি)। কিছু মৃদু উপসর্গ থাকা বা উপসর্গহীন ব্যক্তিও করোনা নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। আবার কোভিডে বহু পরিবার স্বজনহারা হয়ে অবসাদের শিকার হয়ে পড়ছেন।
অন্য ধরনের সমস্যাও হচ্ছে। অনেকে অতিরিক্ত শুচিবাইগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। মিনিটে মিনিটে হাত ধোয়া, স্যানিটাইজ করা, স্নান করা ইত্যাদি অভ্যেস তৈরি হচ্ছে। এই সমস্যার নাম অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি)।
সমাধান: মনে রাখবেন, যত কষ্ট হোক, আপনি রোগকে হারিয়েছেন। নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন। মানুষের সঙ্গে মিশুন। গল্প করুন, প্রাণখুলে হাসুন। যুদ্ধজয়ের পরও অনেককে মানুষ কিন্তু মেনে নিচ্ছে না। এমনটা করবেন না। দ্রুত দৈনন্দিন জীবনে ফিরুন। অবসরে বই পড়ুন, ছবি আঁকুন, গান করুন, বাগানের যত্ন নিন, পরিবারকে সময় দিন। মনকে সতেজ রাখতে মাইন্ড ফুলনেস থেরাপি করুন। নিজের শ্বাসপ্রশ্বাসের উপর মনোযোগ দিন। সমস্যা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে মনে হলে মনোবিদের পরামর্শ নিন।
লিখেছেন :
সুপ্রিয় নায়েক, সায়ন নস্কর