শত্রুরা পরাভূত হবে। কর্মে পরিবর্তনের সম্ভাবনা। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের জন্য ব্যয়-বৃদ্ধির যোগ আছে। কোনও ... বিশদ
অনিয়ন্ত্রিত সুগারে বিপদ বেশি
ডায়াবেটিস থাকলেই করোনা সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেশি এমন তথ্য সর্বৈব ভুল। সুস্থ মানুষ এবং সুগার রোগীর সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা সমান সমান। তবে হ্যাঁ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগীর দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হয়ে পড়লে তাঁর শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে! অতএব চিকিৎসকের বলে দেওয়া নিয়ম মেনে চলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তাহলেই করোনার সঙ্গে লড়াইও সহজ হবে।
কেমন লড়াই?
লড়াইয়ের জন্য দরকার দুটি বিষয় মেনে চলা—
ক্যালরি মেপে খাবার খাওয়া ও এক্সারসাইজ করা।
ডায়েট: সাধারণ শাকসব্জি, মাছ, ডাল পরিমিত ভাত অথবা রুটি খেয়ে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে না কমে, তার জন্য পাতে প্রোটিনজাতীয় খাদ্য অর্থাৎ ডিম, মাছ, মাংস, ডাল, সোয়াবিন পর্যাপ্ত মাত্রায় রাখতে হবে। কারণ প্রোটিনজাতীয় খাদ্য দেহের রোগপ্রতিরোধী ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সাইট্রাসজাতীয় ফলে ভিটামিন সি থাকে। তাই পাতি লেবু, কমলা লেবু, মুসুম্বি খেতে পারেন রোগী।
শরীরচর্চা
বাড়িতেই একজায়গায় দাঁড়িয়ে জগিং করার মতো ডান-পা, বা-পা ওপরে তুলে-নামিয়েও এক্সারসাইজ করা যায়।ঘাম ঝরানো যায় ওঠ-বোসের মতো এক্সারসাইজ করেও। এভাবে প্রতিদিন অন্তত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট এক্সারসাইজ করতে হবে।
টেনশন কমানো
দুশ্চিন্তা করলে শরীরে কর্টিজল নামে হর্মোন বেরয় যা রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমায় দুশ্চিন্তা। তাই দুশ্চিন্তার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য ধ্যান করতে পারেন। নিতে পারেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শও।
ওষুধ ও ইনসুলিন
কোভিড পরিস্থিতিতে, গত কয়েকমাসে ওষুধ নিয়ে নানারকম সিদ্ধান্তহীনতা কাজ করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এসিই ইনহিবিটর, অ্যাঞ্জিওটেনসিন রিসেপটর ব্লকার নিয়ে সন্দেহ ছিল গবেষকদের মধ্যে। প্রথম দিকে বলা হচ্ছিল, এই ওষুধ সেবনকারীর কোভিড হলে শারীরিক জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা আছে! অথচ পরবর্তীকালে গবেষণায় দেখা যায়, ওষুধগুলি হার্ট, কিডনি, ফুসফুসের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করছে। ফলে ওষুধগুলি সেবনে রোগীর ক্ষতি নেই।
যখন ওষুধ অমিল
প্রেসক্রিপশনে যে ব্র্যান্ড নেমের ওষুধ লেখা আছে, তা দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না জানাচ্ছেন বহু রোগী। প্রশ্ন হল সেক্ষেত্রে করণীয় কী? সাধারণত চিকিৎসকরা একই ওষুধ উলটেপালটে ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডনেম-এর কিনে খেতে উৎসাহ দেওয়া দেন না।তার মূল কারণ হল, বায়ো অ্যাভেলেবিলিটি। অর্থাৎ যে ডোজের ট্যাবলেট রোগীকে দেওয়া হল, সেই ট্যাবলেট থেকে কত পরিমাণ ওষুধ রোগীর শরীরে ঢুকছে তার মাত্রা। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। ধরা যাক ‘ক’ সংস্থার তৈরি ১০০ মিলিগ্রাম শক্তির ট্যাবলেটে মূল রোগের ওষুধ আছে ৯০ মিলিগ্রাম। আবার ‘খ’ সংস্থার তৈরি ১০০ মিলিগ্রাম শক্তির ট্যাবলেটে মূল রোগের ওষুধ রয়েছে ১১০ মিলিগ্রাম! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে, দুটি ওষুধই রোগীর জন্য কার্যকরী। ট্যাবলেট প্রস্তুতের ক্ষেত্রে এটুকু বেশি বা কম মাত্রায় ওষুধ রাখা যায়। অর্থাৎ নিয়ম অনুযায়ী, মোটামুটি প্রতি ১০০ মিলিগ্রাম শক্তির ট্যাবলেটে ৯০ থেকে ১১০ মিলিগ্রাম মূল ওষুধ ব্যবহার হলে বুঝতে হবে, ওই ব্রান্ডগুলি ওষুধের গুণগত মান বজায় রাখছে। তবে সম্পূর্ণ অপরিচিত কোনও সংস্থা কেমন ওষুধ তৈরি করছে, তা সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকলে মুশকিল।
এছাড়া ট্যাবলেট তৈরির সময় মূল ওষুধ ছাড়াও অন্যান্য উপাদান লাগে। ব্র্যান্ড নেম ভেদে এই উপাদানগুলিরও পরিবর্তন হয়। এইরকম নানা কারণে চিকিৎসকরা হুট করে ভিন্ন ব্রান্ডের ওষুধ রোগীকে প্রেসক্রাইব করেন না।তবে একান্তই নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ওষুধ না পাওয়া গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অন্য সংস্থার তৈরি একই ওষুধ খাওয়া যায়।
ইনসুলিন
২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ইনসুলিন রাখতে পারলে ভালো হয়। তবে সবসময় তা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই বলে দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই। ঘরের সাধারণ উষ্ণতাতেও এক মাস পর্যন্ত ইনসুলিন ভালো থাকে। তবে খুব ভালো হয়, সরাসরি আলো, তাপ থেকে বাঁচাতে পলিথিনের প্যাকেটে ইনসুলিন রেখে প্যাকেটিটিকে একটি মাটির জালার ভেতর রাখতে পারলে।
সুগার টেস্ট
সম্ভব হলে সুগার মাপক যন্ত্রের সাহায্যে নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দেখে একটা কাগজে লিখে রাখুন। তবে যাঁদের বাড়িতে এই সুবিধা নেই, তাঁরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ফোন করতে পারেন। কোভিড সংক্রান্ত নিয়ম মেনে বাড়িতে এসে সেন্টারের স্বাস্থ্যকর্মীই নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে পারেন।
এছাড়া শারীরিক সমস্যা নিয়ে সরাসরি চিকিৎসকের চেম্বারে যেতে না পারলে টেলিমেডিসিন ব্যবস্থার সাহায্য নিন। ফোনে কথাও বলতে পারেন চিকিৎসকের সঙ্গে। এভাবেই সুস্থ থাকুন। ভালো থাকুন। ভয় দূরে রাখুন।
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে