পুজোপাঠে ও সাধুসঙ্গে মানসিক শান্তিলাভ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কর্মোন্নতি ও উপার্জন বৃদ্ধি। ... বিশদ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সর্বপ্রথম ‘বিশ্বকবি’ অভিধায় ভূষিত করেছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়। কিছুকাল শান্তিনিকেতনে শিক্ষকতাও করেন তিনি। পরবর্তীকালে ঝাঁপিয়ে পড়েন দেশমুক্তি আন্দোলনে। ‘সন্ধ্যা’ ও ‘করালী’ নামক দু’টি পত্রিকায় নিয়মিত ক্ষুরধার লেখনীতে ব্রিটিশ বিরোধিতায় শান দেন তিনি। রাজদ্রোহমূলক প্রবন্ধ লেখার অপরাধে ইংরেজ সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে। স্বল্পকাল পরে ব্রহ্মবান্ধব পাড়ি দেন জীবনের পরপারে। দেশভক্ত অকুতোভয় এই প্রণম্য ব্যক্তির প্রকৃত নাম ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
আমরা ক’জন চিনি গন্ধর্বনারায়ণ মিত্রকে? তাঁর লেখা একটি নাটক নীলকর ইংরেজের অত্যাচারে বিধ্বস্ত বাংলার পল্লিগ্রামের দুর্দশার কথা সোচ্চারে তুলে ধরেছিল। নাটকটির নাম— ‘নীলদর্পণ’। নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র। তিনি ছাত্রাবস্থাতেই গন্ধর্বনারায়ণ নাম পরিত্যাগ করে দীনবন্ধু নাম নিয়েছিলেন।
স্নাতক পাঠরত প্রবোধ বন্দ্যোপাধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে বাজি লড়ে ‘বিচিত্রা’ পত্রিকায় পাঠিয়ে দিলেন একটি গল্প। অবশ্য গল্পটির নীচে স্বাক্ষর করলেন অন্য নামে। ‘অতসী মামি’ গল্পটি প্রকাশিত হতেই সাড়া পড়ে গেল পাঠক মহলে। পরবর্তীতে ‘পদ্মানদীর মাঝি’, ‘দিবারাত্রির কাব্য’, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র মতো সাড়া জাগানো উপন্যাসের মাধ্যমে সেই ছদ্মনামেই সাহিত্য জগতে স্থায়ী আসন পেলেন তিনি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামের আড়ালে হারিয়ে গেল লেখকের প্রকৃত নাম প্রবোধ।
‘মরুতীর্থ হিংলাজ’, ‘উদ্ধারণপুরের ঘাট’-এর ঔপন্যাসিক অবধূত। তাঁর প্রকৃত নাম দুলালচন্দ্র মুখোপাধ্যায়।
‘সব পেয়েছির আসর’-এর প্রতিষ্ঠাতা শিশুসাহিত্যিক স্বপন বুড়ো। তাঁর বিখ্যাত রচনা— ‘বাবুইবাসা বোর্ডিং’। ছদ্মনামের জনপ্রিয়তায় আড়ালে রয়ে গেল তাঁর আসল নাম অখিলবন্ধু নিয়োগী।
বিখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষের প্রকৃত নাম যে চিত্তপ্রিয় ঘোষ তাও অনেকেরই অজানা! মহালয়ার ভোরে বেতারে চণ্ডীপাঠ বঙ্গজীবনের অঙ্গ। এই সুন্দর অনুষ্ঠানটি যাঁর লেখনীতে সমৃদ্ধ তিনি হলেন বাণীকুমার। প্রকৃত নাম বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য।
১৯৬২-তে জাকার্তায় এশিয়ান গেমসে এক বঙ্গসন্তানের নেতৃত্বে স্বর্ণপদক পায় ভারতীয় ফুটবল দল। তিনিই আবার বাংলা দলের হয়ে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন ক্রিকেট মাঠে। নজিরবিহীন এই দৃষ্টান্তের অধিকারী সুবিমল গোস্বামী। চেনা যাচ্ছে? চুনী গোস্বামী নামটি নিশ্চয়ই অচেনা নয়!
গানে গানে ভুবন ভরিয়েছেন সরস্বতীর বরপুত্র দুই বাঙালি গায়ক। মান্না দে ও কিশোরকুমার। তাঁদের প্রকৃত নাম যথাক্রমে প্রবোধচন্দ্র দে ও আভাসকুমার গঙ্গোপাধ্যায়।
চলচ্চিত্র জগতে এক অনন্য কৃতিত্বের অধিকারী ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নিজের নামেই দু-দু’টি বাংলা ছবি হয়েছে। ‘ভানু পেল লটারি’ ও ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্টেন্ট’। ব্রিটিশের রোষানলে পড়ে রাতারাতি পূর্ববঙ্গ থেকে কলকাতায় চলে আসতে হয়েছিল শহিদ দীনেশ গুপ্তের স্নেহধন্য ভানুকে। অনন্যসাধারণ ভানুর প্রকৃত নাম ছিল সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রকৃত নাম অন্তরালে রেখে সুকর্মের জেরে ছদ্মনাম বা ডাকনামে বিখ্যাত হয়েছেন এমন অনেকেই। এ তালিকায় বাঙালির হৃদয়ের মহানায়কও আছেন। উত্তমকুমার নামেই বাঙালির হৃদয়ে আজও অধিষ্ঠিত অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়।