দুর্ঘটনা আর আঘাত যোগ আছে; সতর্ক হোন। মানসিক উত্তেজনায় লাগাম দিন, বাক বিতণ্ডা এড়িয়ে চলুন। ... বিশদ
দিগম্বরীরূপ: আসল বস্তুকে দেখার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে বস্ত্র। তাই সেটি মায়া। কিন্তু মা ব্রহ্মময়ী মায়ার অতীত। তাই তিনি আবরণহীনা দিগম্বরী।
কৃষ্ণবর্ণা: যে কোনও রংই মিশে যায় কালো রঙে। সেইরকম সর্বভূত বিলীন হয় কালীর মধ্যে। যে মহাশক্তির মহাজ্যোতি আমাদের চোখে ধারণ করা যায় না, তা দেখতে কৃষ্ণবর্ণ।
মুক্তকেশী: জগৎ সংসারকে মায়ার বন্ধনে বাঁধলেও তিনি মায়া আর বন্ধনহীন। এরই প্রতীক তাঁর মুক্ত কেশ।
কপালে অর্ধচন্দ্র: অমৃতক্ষারক চন্দ্রের সতেরোটি কলা দেবীর কপালে থাকে। মহাদেবী তাঁর সাধক সন্তানকে দান করেন অমৃততত্ত্বরূপ মোক্ষ। তাই দেবীর কপালের শোভা পায় অর্ধচন্দ্র।
ত্রিনয়নী: সূর্য, চন্দ্র আর অগ্নির মাধ্যমে কালী ভূত, ভবিষ্যৎ আর বর্তমানকে দেখছেন— তাই তিনি ত্রিনয়নী।
করালবদনা: মাকালী মহাকাল রূপে জগৎ সংসারকে কলন বা গ্রাস করেন। পরে মহাকালকেও ভক্ষণ করেন। তাই কালী করালবদনা।
ঘোরদংষ্ট্রা: দক্ষিণাকালীর মূর্তিতে দেখা যায় তিনি তাঁর লেলিহান জিহ্বা দংশন করে আছেন। দেবীর দাঁত সাদা স্বপ্রকাশ ‘সত্ত্ব’ গুণের প্রতীক। রক্তবর্ণের ঠোঁট রসনাময় ‘রজঃ’ গুণসূচক। দেবীর লেলিহান জিহ্বার অর্থ রজঃ গুণ বাড়িয়ে ‘তমঃ’ গুণকে ধ্বংস করেন। তিনি সন্তানের জন্য খুলে দেন মুক্তির পথ।
শবকর্ণভূষণা: কালীর কর্ণভূষণ হল দু’টি বালকের শব। এর অর্থ— বালকস্বভাব সাধকই হল ব্রহ্মরূপিণী কালীর সব থেকে প্রিয়।
মুণ্ডমালিনী: মা কালীর মুণ্ডমালায় পঞ্চাশটি মুণ্ড থাকে। যা এক একটি মাতৃকাবর্ণরূপী বীজমন্ত্র। দেবীর থেকেই জগতের সৃষ্টি আর লয়। এই তত্ত্বের সঙ্কেতই হল মুণ্ডমালা।
চতুর্ভুজা: কালীর হাতের খড়্গটি আসলে ‘জ্ঞান খড়্গ’। তিনি সাধকের মায়াময় মোহকে ছিন্ন করেন। অন্য হাতে ধরে থাকা অসুরের মাথাটি তত্ত্বজ্ঞানের প্রতীক। মোহমুক্ত সন্তানকে তিনি পরম স্নেহে নিজের সঙ্গে স্থান দেন।
দেবীর ডানদিকে ওপরের হাতে অভয়মুদ্রা আর নীচের হাতে বরমুদ্রা। এর অর্থ কাঙ্ক্ষিত অভয় আর বরদান। এভাবে মা দক্ষিণাকালী ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন।
শবরূপী শিবের বক্ষস্থিতা: শব প্রেতরূপ ব্রহ্ম। শিব নির্গুণ ব্রহ্ম। শব আর শিব শুদ্ধ চিৎরূপ, নির্গুণ আর নিষ্ক্রিয় ব্রহ্ম। তাই শিবের উপর অধিষ্ঠাত্রী দেবী।
এছাড়াও দক্ষিণাকালীর এই রূপের মাধ্যমে বোঝানো হয়— তিনি সন্তানকে অন্ন রূপ দুগ্ধদান করে বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং তাঁর কল্পিত কটি দেশেই বদ্ধ জীব দেহ থেকে দেহান্তরে কর্ম অনুসারে আবর্তিত হয়।
মাহাত্ম্য
মাকালীর অনন্ত মাহাত্ম্যের প্রকাশ জগতের সর্বত্র। অনন্ত তাঁর রূপ আর গুণ। তিনি সন্তান বৎসল। নানাভাবে তিনি সন্তানকে কৃপা করেন। বিভিন্ন শাস্ত্রে মায়ের মাহাত্ম্য বর্ণিত। কলি কালে তিনিই একমাত্র ফলদাত্রী মহাদেবী।
যোগ্য ব্যক্তি, যিনি তাঁর একাক্ষরী বীজমন্ত্রে দীক্ষিত তাঁকে দিয়ে দক্ষিণাকালীর পুজো করলে মা তাঁদের সর্ব দুঃখ নাশ করেন। সহস্রনাম স্তোত্র পাঠ করলে সব আকাঙ্ক্ষাই পূর্ণ হয়। ধন-মান-ঐশ্বর্য, শত্রুদমন সহ সৌভাগ্য লাভ হয়। ভক্তি ভরে কালীপুজোর আয়োজন করলে নাশ হয় অশুভ শক্তির। দক্ষিণাকালীর পুজোয় সন্তানের বিদ্যাশিক্ষার বাধা কাটে। অনেক পণ্ডিত বিয়ের বাধা দূর করতে কালীপুজোর বিধান দেন।
কালী নাম জপ, স্মরণ-মনন ও স্তবপাঠে বিশেষ শুভ ফল পাওয়া যায়। কালরূপী সময় কখন যে কাকে কোপ মারে তা কেউ জানে। তা জানেন কেবল মহাশক্তি মহামায়া কালী। সদা তাঁর শরণ নেওয়া, দৃষ্টিপথে থাকাতেই জীবের ইহকাল আর পরকালের মঙ্গল। এটাই মানব জীবনের লক্ষ্য। তাই সবাই তাঁর রাঙা চরণে প্রার্থনা জানায়, মা, তুমি সদা প্রসন্ন হও এবছর যেন আমরা বাধা আর ব্যাধি মুক্ত হয়ে সুখ-প্রাচুর্যে থাকতে পারি, ক্ষণিকের জন্যও তোমাকে বিস্মৃত না হই।