উত্তম বিদ্যালাভের যোগ আছে। কাজকর্মে উন্নতি ও কাজে আনন্দলাভ। অর্থাগমের উত্তম যোগ। ... বিশদ
উটি থেকে মুন্নার আসতে চাইলে কোয়েম্বাটুর হয়ে আসাই সুবিধে। এই পথের দূরত্ব নব্বই কিলোমিটার। যেতে সময় লাগে ঘণ্টা তিনেক। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি উটি থেকে বিকেলের দিকে রওনা দিয়ে কোয়েম্বাটুরের কোনও হোটেলে রাতটা কাটিয়ে পরদিন সকালে উটকামণ্ড বাস স্ট্যান্ড থেকে মুন্নার রওনা দেওয়া যায়। যেতে যেতে দেখবেন কোয়েম্বাটুর শহর ছাড়িয়ে বাস ঢুকবে ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় উদ্যানের মধ্যে। দেখবেন পথের দু’ধারে কেমন নিশ্চিন্তে চরে বেড়াচ্ছে হরিণ, হাতি ও বানরের দল। দু’-একটা সম্বর, ইন্ডিয়ান গাউড়ও চোখে পড়বে বইকি! এভাবেই উদ্যান একসময় শেষ হবে তামিলনাড়ুর সীমান্তে এসে। তারপর চেকপোস্ট পেরিয়ে গেলেই শুরু হবে কেরল রাজ্য।
কেরল সত্যিই চিরসবুজের দেশ। ঈশ্বরের আপন দেশ। চেকপোস্ট পেরিয়েই চিনার ফরেস্টের মধ্য দিয়ে ক্রমাগত এগিয়ে চলবে বাস। পথেই পড়বে ছোট ছোট গ্রাম। মাঝেমধ্যে দেখতে পাবেন বেগুনি জাকারান্ডা ফুলের গাছ। মুন্নার যাওয়ার সময় পথের ধারের এই মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যটুকুই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে সবচেয়ে বেশি। সবুজ চা বাগানও এই পথের আর এক বিশেষত্ব। পথের দু’ধারে পাহাড়ের ঢালে বিস্তীর্ণ চা বাগান। শাড়ির পাড়ের মতো, রাস্তার দু’ধারে বর্ডার হিসেবে লাগানো হয়েছে এক রকমের গাঢ় লাল পাতাবাহার গাছ। প্রকৃতির এই অকৃপণ রূপ দেখতে দেখতে প্রায় সাড়ে চার পাঁচ ঘণ্টা চলার পর এসে পৌঁছবেন মুন্নার বাসস্ট্যান্ড।
হোটেল, দোকানপাট, ট্যাক্সি, অটো সব মিলিয়ে বেশ জমজমাট এই জায়গা। তবে হোটেল ভাড়া এখানে একটু বেশি। নিরিবিলিতে থাকতে চাইলে অটো ভাড়া করে দেড় কিলোমিটার দূরে ওল্ড মুন্নারে চলে যেতে পারেন। এক অপার্থিব নির্জনতা ভোরের কুয়াশার মতো ঘিরে রেখেছে ওল্ড মুন্নারকে। ওখানে হোটেল ভাড়াও তুলনামূলক কম। বাসস্ট্যান্ডের গায়েই রয়েছে লেডি কারমেল চার্চ । খুব সুন্দর চার্চটি। পরদিন সকালে কেরল পর্যটন দপ্তরের বানানো ট্যুর প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বেরিয়ে পড়ুন মুন্নার দর্শনে।
লাক্সারি বাসে করে ভ্রমণ শুরু হবে সকাল দশটায়। চলবে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত। বাস প্রথমেই আপনাকে নিয়ে যাবে মাট্টুপেট্টি বাঁধ দেখাতে। আনামুড়ি চূড়ার কাছে অবস্থিত এই বাঁধটির ঠিক মাঝখানে রয়েছে এক অসাধারণ হ্রদ। বোটিং করার সুবিধাও পাবেন। মন চাইলে কিছুক্ষণ নৌকা বিহার করে রওনা দিন ইকো পয়েন্টে। দেখবেন এখানে একটু জোরে কথা বললে সেই কথাই আপনার কাছে ফিরে আসবে প্রতিধ্বনি হয়ে। ইকো পয়েন্ট সেরে এরপর চলুন কুণ্ডলা লেক। শহর থেকে মাত্র কুড়ি কিলোমিটার দূরে নির্জন পাহাড়ের কোলে ইউক্যালিপটাসে ঘেরা অসাধারণ এই লেকটিতেও রয়েছে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা।
মুন্নার দর্শনে গিয়েছেন আর চা বাগানের দৃশ্য চোখে পড়বে না তা কি হয়? চলার পথেই দেখবেন পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ধাপে ধাপে গড়ে ওঠা দিগন্তজোড়া সবুজ চা বাগানগুলিতে কেমন আপনমনে চা-পাতা তুলছেন শ্রমিকরা। দৃশ্যটি দেখার মতো। কুণ্ডলা হ্রদে নৌকাবিহার সেরে বাস আবার আপনাকে নিয়ে আসবে মুন্নার শহরে। দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পর আবার শুরু হবে পথচলা। বাস এবার রওনা দেবে আনামুড়ির পথে। কেরলের তো বটেই, সমগ্র দক্ষিণ ভারতের সর্বোচ্চ শিখর ‘আনামুড়ি’। যেতে যেতে দেখবেন কেমন নিশ্চিন্তে পাহাড়ের ঢালে চরে বেড়াচ্ছে নীল গাই। ফেরার পথে ‘আটুকাড’ জলপ্রপাত দেখিয়ে সন্ধে ছ’টা নাগাদ বাস ফিরবে শহরে। মুন্নার দর্শন সেরে পরদিন সকালের বাস ধরে চলুন ১২০ কিলোমিটার দূরের পেরিয়ার কিংবা ১৬২কিলোমিটার দূরের মাদুরাই। আর তা যদি না চান তাহলে ফিরে চলুন ১১৯ কিলোমিটার দূরের বন্দরনগরী কোচি। সেখান থেকে ত্রিবান্দ্রম মেল ধরে ফিরতে পারেন কলকাতা।
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে মুন্নার পৌঁছনোর সহজতম উপায় বিমান বা রেলপথে কোচি পৌঁছে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করা। ভ্রমণের ভালো সময় ডিসেম্বর থেকে মার্চ।