শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা। গুপ্ত শত্রুতার মোকাবিলায় সতর্কতা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষায় বিলম্বিত ... বিশদ
প্রযোজনা: অবেক্ষণ
পরিচালনা: মানবেন্দ্র গোস্বামী
আমরা প্রায়শই কারও দুর্ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হয়ে বলে থাকি — তুই তো জন্তুর মতো ব্যবহার করছিস! প্রশ্ন হল, সত্যি কি এখন এই উপমাটি ব্যবহার করা চলে? কেন না, বর্তমানে এই সমাজবদ্ধ জীবটি, অর্থাৎ মানুষ, সবচেয়ে বেশি হিংস্র, ভয়ঙ্কর, স্বার্থপর এক প্রাণী। যার সঙ্গে কোনও জন্তুরই তুলনা চলে না। হানাহানি, খুনোখুনি, দলাদলি, নৃশংসতা, পাশবিকতা, এখনকার মানুষের প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু, যদি এই মানুষের শরীরে কোনও জন্তুর অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়, তাহলে কেমন হয়? ক্ষয়িষ্ণু, মূল্যবোধহীন সমাজের প্রতিনিধিত্ব করা মানুষের ব্যবহারের কি কোনও বদল ঘটবে? পশু শরীরের প্রভাবে কি তার স্বভাবে পরিবর্তন আসবে? সম্প্রতি ‘অবেক্ষণ’ প্রযোজিত ‘বালাই ৬০’ নাটকটি দেখতে বসে এই কথাগুলোই মনে ঘোরাফেরা করছিল। অভিনব এই বিষয়টিকে এক মজাদার স্যাটায়ারের মধ্যে দিয়ে নাটকে রূপান্তর ঘটিয়েছেন নির্দেশক মানবেন্দ্র গোস্বামী। নাট্যকার জয়দীপ চক্রবর্তী।
মজার ছলে, ক্ষয়িষ্ণু সমাজের অবক্ষয়ের এক নগ্ন চিত্র তুলে ধরেছেন নির্দেশক। যা ভাবায়, নাড়া দেয় মনকে। বার্ধক্যের গোড়ায় পা রাখা তিন অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। সন্তানরা তাদের বোঝা ভেবে দূরে ঠেলে দিয়েছে। মূল চরিত্র, বিশ্বনাথের ছেলে, সুদূর বিদেশে বসে বসত বাড়িটি বেচে দেবার ব্যবস্থা করে পাড়ার এক প্রমোটারের কাছে। কিন্তু বিশ্বনাথ, তার দুই বন্ধুর সহযোগিতায় এই বাড়িতে বৃদ্ধাশ্রম খুলতে চান। যার হাতের মুঠোয় প্রশাসন থেকে পুলিশ, সেই প্রমোটারের সঙ্গে পেরে ওঠেন না বিশ্বনাথ এবং তাঁর দুই বন্ধু। তিনজনেই শারীরিকভাবে দুর্বল। বয়সের ভারে নুজ্ঝ্য। এমতাবস্থায় আসরে হাজির ডাক্তার রূপান্তর কর। যিনি, মানুষের শরীরে জন্তুর অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে দক্ষ। যার সাহায্যে বিশ্বনাথ তাঁর দুর্বল হাঁটুর পরিবর্তে পান ঘোড়ার হাঁটু। তারুণ্যের আবেশে টগবগ করে ফুটতে থাকেন। একইভাবে তাঁর অপর দুই বন্ধুর, একজনের চোখে বাঁদরের তীক্ষ্ণতা, এবং অন্যজনের শরীরে কুকুরের ফুস্ফুস প্রতিস্থাপন করেন ডাক্তার রূপান্তর। তিনজনেই একেবারে তরতাজা, ভয়শূন্য। তাঁদের চমকাতে এসে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন স্বয়ং প্রমোটার। তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। তিন বন্ধু তাঁকে নিয়ে আসেন ডাক্তার রূপান্তরের কাছে। ডাক্তার তাঁর হার্টের জায়গায় শুয়োরের হার্ট লাগিয়ে দেন। সুস্থ হয়ে সম্পূর্ণ এক অন্য মানুষে পরিবর্তিত হয় প্রমোটার।
মানুষের জীবন মানে প্রতিযোগিতা। ঘোড়ার মত ছোটো, গাধার মতো খাটো আর মোষের মতো ঘুমোয়। বৃদ্ধ বয়সে কুকুরের সমতুল্য হয়ে যাওয়া। এই উদাহরণ গুলো মানুষের ক্ষেত্রে কতটা সমুচিত, বা আদৌ যুক্তিযুক্ত কিনা, সেই ভাবনাটাকেই উসকে দেয় ‘বালাই ৬০’। অভিনব চিন্তাভাবনা সম্বলিত নাটকটি সর্বার্থে সার্থক। নাটকটি উপভোগ্য হয়ে ওঠে শিল্পীদের মিলিত অভিনয়ে। বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখেন সুকান্ত মুখোপাধ্যায় (বিশ্বনাথ), সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় (অমরনাথ), সন্তোষ দেবনাথ (বৈদ্যনাথ), জয়িতা দে মজুমদার (ক্রুণা), ত্রিলোকনাথ থান্ডার (ধনঞ্জয়), শুভাশিস মুহুরী (ডাক্তার) এবং ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (প্রমোটার)। নাটকটি সম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে বিজয় চট্টোপাধ্যায় ও প্রাণকৃষ্ণ কুণ্ডুর আলো এবং অমিত ঘোষের আবহ ও মঞ্চ ভাবনায়।
অজয় মুখোপাধ্যায়