শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা। গুপ্ত শত্রুতার মোকাবিলায় সতর্কতা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষায় বিলম্বিত ... বিশদ
প্রযোজনা: শ্যামবাজার নাট্যচর্চা কেন্দ্র
পরিচালনা: সমরেশ বসু
ধর্ম ও মানুষের ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে সারা পৃথিবীজুড়ে এক ব্যবসা চলছে। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে, নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করতে কাজে লাগাচ্ছে সাধারণ মানুষের এই আবেগকে। আর ধর্মভীরু, সংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ কিছু পার্থিব সুখের লোভে তাদের কাছে নিজেদের বিক্রি করে দিচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই জঘন্য ব্যবস্থার শিকার হচ্ছে তারাই। নবদ্বীপ শ্রীচৈতন্যদেবের লীলাভূমি। তার কাছেই রয়েছে দয়াপুর নামে একটি ছোট্ট গ্রাম। সেই গ্রামের কৃষ্ণলোচনবাবুর ভিটের একটি গাছের নীচে বসে কোনও এক সময়ে নাকি মহাপ্রভু জল, বাতাসা খেয়েছিলেন। সেই থেকে এটি মহাপবিত্র স্থান বলে মনে করে গ্রামবাসীরা। কৃষ্ণলোচনবাবুও যথাযোগ্য মর্যাদায় তাঁর ভিটেয় নিত্য মহাপ্রভুর পুজো, অর্চনা, নামগান করে থাকেন। এতে তাঁর আত্মতৃপ্তি হলেও সংসার এবং দৈনন্দিন চাহিদা কোনওটাই ঠিকমতো পূরণ হয় না। ফলে তাঁর কোনও অভিযোগ না থাকলেও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে স্ত্রী চন্দ্রাবতী ও পুত্র শ্যামলোচন প্রায়শই তাঁকে নানা কথা শোনায়। মা-ছেলের ইচ্ছা এই ভিটেটা বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়া। কিন্তু সৎ, গরিব ব্রাহ্মণ কিছুতেই তাতে রাজি নন। ভাগীরথীর অপর প্রান্তে অবস্থিত এক বিদেশি মঠের লোক আসে কৃষ্ণলোচনবাবুর জমিটি কিনতে। অরাজি কৃষ্ণলোচনবাবুকে রাজি করাতে নানারকম টোপ দেয় তারা। কিন্তু কিছুতেই তিনি মত পরিবর্তন করেন না। অগত্যা ব্রজকিশোর নামের এক ব্যক্তি অন্য কৌশল করে। সে একদিন দয়াপুর গ্রামে কৃষ্ণলোচনবাবুর বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ওঁর গান শুনে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। নানা কথোপকথনে আলাপ জমিয়ে বলে, আমি আপনার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে গেছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপনার কাছ থেকেই দীক্ষা গ্রহণ করব। প্রথমে রাজি না হলেও চন্দ্রাবতীদেবী ও শ্যামলোচনের উৎসাহে এবং ব্রজবাবুর পীড়াপীড়িতে দীক্ষা দিতে তিনি সম্মত হন। এরপর থেকে মাঝে মাঝে এসে সে যোগমায়াকে প্রণাম করে ৫০০ টাকা প্রণামি দিয়ে যায়। যোগমায়াও খুব খুশি হয়। হঠাৎ একদিন কৃষ্ণলোচনের বন্ধু অধর হালদার নামগানের সময় তাদের বাড়িতে উপস্থিত হয়। জিনস, গেঞ্জি পরে ব্রজকে জোড় হাত করে ভজনা করতে দেখে অবাক হয়ে তার পরিচয় জানতে চান। যোগমায়া তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এরপর বেশ কথাচ্ছলে ব্রজ তার আসল উদ্দেশ্যের কথাটা বলেন। তার গুরু কৃষ্ণলোচনের নাম কীভাবে সে সারা দেশে ছড়িয়ে দেবে, যার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসবে এই পুণ্যতীর্থে এবং এটা একটা তীর্থক্ষেত্রের স্থান পাবে সেই সব কথা বলেন। অধরের কথাটা পছন্দ হলেও কৃষ্ণবাবু সেটা মেনে নিতে চান না। তিনি নিজেকে মহাপ্রভুর শিষ্য বলেই ভাবতে চান। নিজেকে শ্রীচৈতন্যের সমগোত্রীয়রূপে দেখতে চান না। গুরুর এই ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ব্রজ হাল ছাড়ে না। সে নানা প্রলোভনে গুরুমা ও তার ছেলেকে হাত করে। তারা এই প্রস্তাবে রাজি হয়। সবকিছু না বুঝেই শ্যামলোচন ব্রজর দেওয়া চুক্তিপত্রে সই করে দেয়। ব্রজ এবার চক্রান্ত করে তার বাবাকে হত্যা করে। যে হত্যাকাণ্ডে অনিচ্ছা সত্ত্বেও শামিল হয় শ্যামলোচন।
শ্যামবাজার নাট্যচর্চা কেন্দ্রের প্রযোজনায় নির্মিত নাটক ‘দখলনামা’ একটি গবেষণা প্রসূত উপস্থাপনা। পৃথিবীর সব স্থানেই আজ মানুষ বড় অসহায়। রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা থেকে সর্বত্রই চলছে এক ধরনের মানবিক শোষণ। কিংকর্তব্যবিমূঢ় অসহায় মানুষ জেনে শুনেই নিরুপায় হয়ে ঝাঁপ দেয় এই বৃহৎ খেলায়। বিষয়ের মধ্যে গভীরতা রয়েছে সন্দেহ নেই। অনেক সত্যিই তুলে ধরা হয়েছে নাটকে। মানুষের আবেগ অক্ষুণ্ণ রেখে যুক্তি দিয়ে মঞ্চে বলার মধ্যেও সাহসিকতার প্রয়োজন। যেটা দলের নির্দেশক সমরেশ বসুর মধ্যে দেখা গেল। নিটোল গল্প বাঁধা ও বিন্যাসের দ্বারা খুব সুন্দর মঞ্চ উপস্থাপনা সত্যিই প্রশংসনীয়। কোথাও কোনও ত্রুটি নজরে পড়ে না। গানগুলিও সুপ্রযুক্ত। কৃষ্ণলোচন ও ব্রজকিশোর দুটি বলিষ্ঠ চরিত্রকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন শ্যামাশিস পাহাড়ি ও প্রসেনজিৎ বর্ধন। চৈতন্যপ্রেমে আকুল কৃষ্ণলোচনের ভক্তিভাব তাঁর, রসবোধ ভীষণভাবে ফুটে ওঠে অভিব্যক্তি ও চালচলনে। শ্যামলোচনের ভূমিকায় ঋক দেব, চন্দ্রাবতীরূপী যোগমায়া, অধর হালদারের চরিত্রে নীলাভ চট্টোপাধ্যায়, শ্রীজীব গোঁসাইয়ের ভূমিকায় সমরেশ বসু এককথায় অনবদ্য। নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসাবে শ্যামাশিস, পারমিতা, তানিয়া, স্পন্দন, কোরক, অনীক, বিনয়, তূণক, পূবালী, শ্রীলা, সমরেশ যথাযথ রূপ দিয়েছেন। কঙ্কণ ভট্টাচার্য আবহে প্রতিটি সিকোয়েন্স অন্য মাত্রা পেয়েছে। নাটক সৌমেন পাল ও আলো সৌমেন চক্রবর্তী।
কলি ঘোষ