হঠাৎ পাওয়া যোগাযোগের মাধ্যমে কর্ম জটিলতার অবসান ও মানসিক চিন্তামুক্তি। আয় ব্যয়ের ক্ষেত্র ঠিক থাকবে ... বিশদ
মুখের যত্নে সকলেই একটু বেশি সচেতন থাকেন। মুখের ত্বক বা ফেসিয়াল স্কিনে যে কোনও ধরনের সমস্যা হলে সেটা চোখে পড়ে খুব তাড়াতাড়ি। তাই মুখচ্ছবিটি নিখুঁত রাখার চেষ্টা থাকে সবারই। মুখের অবাঞ্ছিত রোম বা অত্যধিক ফেসিয়াল হেয়ার সে পথের বাধা। হেয়ার রিমুভ করার অনেক উপায় এমনিতে রয়েছে। কিন্তু সব উপায় মুখের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় না। কারণ মুখের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে মুখের ত্বকের হেয়ার রিমুভ করার কথা একেবারেই ভাববেন না।
এ বিষয়ে কথা হচ্ছিল কসমেটোলজিস্ট ডাঃ রেশমা বানুর সঙ্গে। মহিলাদের ফেসিয়াল হেয়ার রিমুভাল সম্পর্কে তিনি বলেন, যেটুকু রোম স্বাভাবিকভাবে মুখের ত্বকে থাকে, অনেকেই খুব পরিষ্কার নিখুঁত ত্বকের জন্য সেটুকুও নির্মূল করার কথা ভাবেন। এই স্বাভাবিক হেয়ারকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বলা হয় ‘ভেলাস হেয়ার’। আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে এই হেয়ারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেকে কসমেটিক চেঞ্জ-এর কথা ভেবে এই হেয়ার রাখতে চান না।
তাঁদের জন্য রেশমার পরামর্শ, এই বিষয়ে সবচেয়ে নিরাপদ রেজার। বাড়িতে রেজার ব্যবহার করা বিজ্ঞানসম্মত এবং এতে কোনও ক্ষতি হয় না। যদিও বাজারচলতি ধারণা এর ঠিক বিপরীত, বলছিলেন চিকিৎসক। অথচ ঠিকমতো অ্যাঙ্গেল রেখে ডিরেকশন মেনে রেজার ব্যবহার করলে অমসৃণ বা খোঁচা খোঁচা হেয়ার গ্রোথ হবে না। রেজার অনেকে ব্যবহার করতে চান না কারণ এতে দ্রুত আবার গ্রোথ হয়। ফলে অনেক ঘন ঘন ব্যবহার করতে হয়। এতে ধৈর্য হারিয়ে অনেকে মুখের স্বাভাবিক হেয়ার রিমুভ করাতে লেজার ট্রিটমেন্ট-এর কথা ভেবে ফেলেন। সেটা ঠিক নয়। এছাড়া ফেসিয়াল হেয়ার নির্মূল করার জন্য মুখে ওয়াক্স, ব্লিচ, বা হেয়ার রিমুভাল ক্রিম বা হেয়ার রিমুভাল স্ট্রিপ থেকেও নিজেকে দূরে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। এই ধরনের ক্রিমে থাকে থায়ো গ্লাইকোলিক অ্যাসিড যা ত্বকের ক্ষতি করে। ব্লিচও তাই। এতে ফেসিয়াল হেয়ার কালার করে একটা ছদ্ম এফেক্ট দেওয়া হয়, দেখানো যেন কোনও হেয়ার নেই (ইনভিসিবল)। ব্লিচিং-এ থাকে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। এই অ্যাসিডও ত্বকের ক্ষতিই করে। কারণ এগুলোর সবেতেই রাসায়নিক দ্রব্য মিশে থাকে। হেয়ার স্ট্রিপেও কেমিক্যাল থাকে। তাছাড়া কীরকম প্রেসার দেওয়া হচ্ছে, এসবের ওপর নির্ভর করে অন্য জটিলতা তৈরি করে। ফলে সব দিক খতিয়ে দেখলে ফেসিয়াল হেয়ার রেজার দিয়ে দূর করাই শ্রেয়। মনে রাখতে হবে লেজার ট্রিটমেন্টও এক্ষেত্রে কার্যকরী নয়। অমসৃণ ও মোটা হেয়ার সরাতে লেজার ট্রিটমেন্ট করা হয়। সেটি পুরোটাই মেডিক্যাল কারণে।
যেমন কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক সমস্যার কারণে মুখের ত্বকে অতিরিক্ত হেয়ার গ্রোথ (হারস্যুটিজম) দেখা যায়। তার চিকিৎসায় লেজার ব্যবহার করা হতে পারে। কারণ এই হেয়ার অনেক বেশি ঘন এবং অমসৃণ হয়। যেমনটা পুরুষদের থাকে। পিসিওডি-র (পলিসিস্টিক ওভারি) সমস্যা থাকলে, নিয়মিত স্টেরয়েড খেলে বা অ্যান্টি সাইকোটিক ড্রাগ থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে এমন অবাঞ্ছিত হেয়ার গ্রোথ দেখা যায়। এক্ষেত্রে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের কারণে এটা বেশি হয়। এই সমস্যা জিনঘটিত কারণেও দেখা যেতে পারে। এছাড়া মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের সময় কারও কারও ফেসিয়াল হেয়ার বাড়ে। কারণ এই সময় ইস্ট্রোজেন কমে যায়। এই সময় হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করতে অ্যান্ড্রোজেন বেড়ে যায় শরীরে। তাই তখন এই মেল হরমোনের কারণে ফেসিয়াল হেয়ার গ্রোথ হয়। এই সব হেয়ার দূর করতে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে সিটিং করে লেজার ট্রিটমেন্ট করা উচিত। তা না হলে হিতে বিপরীত হবে। হেয়ার গ্রোথ কমার বদলে আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
রেশমা জানালেন, লেজার করানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় একটি বিম লাইট। এটা মেলানিনকে টার্গেট করে। সেখানে তাপ তৈরি হচ্ছে। সেটা হেয়ার ফলিকল নষ্ট করে দেয়। অনেকেই জানতে চান, এর জন্য ক’টি সেশন প্রয়োজন? এটা নির্ভর করে কার ত্বকে হেয়ার গ্রোথ কীরকম, তার উপর। হেয়ার গ্রোয়িং ফেজ-এ অর্থাৎ যখন জন্মাচ্ছে লেজার কাজ করে। চুল পড়ার স্তরে থাকলে লেজার কাজ করে না। সাধারণভাবে মোটামুটি ৬-৮টি সিটিং লাগে। একটি সিটিং-এর পরে ১০-১৫ শতাংশ হেয়ার রিমুভাল হয়। এক্ষেত্রে আরও একটি জিনিস বলা যায়— রিমুভাল বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে হেয়ার রিমুভাল হয় না। হেয়ার রিডাকশন হয়। অর্থাৎ কমানো হয়। কারণ চুলের স্বাভাবিক গ্রোথ তো হবেই। কিছু মাস পর আবার সেটা ফিরে আসবে। আবার ট্রিটমেন্ট করাতে হবে। এছাড়া এক্ষেত্রে কোন কারণে অতিরিক্ত হেয়ার গ্রোথ হয়েছে, সেটাও দেখা হয়। অর্থাৎ শুধু বাইরে থেকে লেজার ট্রিটমেন্ট নয়। হরমোনাল সমস্যা থাকলে ভেতর থেকে তার চিকিৎসা করাতে হবে। প্রয়োজনে গাইনোকলজিস্ট-এর পরামর্শ নিতে হবে। এর সঙ্গে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অতিরিক্ত ওজন থেকে অনেক সময়ই হরমোনের ভারসাম্য এদিক-দিক হয়। অনেকের তেমন কোনও শারীরিক বিশেষ জটিলতা না থাকলেও অতিরিক্ত হেয়ার গ্রোথ হতে পারে। সেটার কারণ হিসেবে রেশমা বললেন, স্বাভাবিক অ্যান্ড্রোজেন লেভেল থাকা সত্ত্বেও হেয়ার ফলিকল অতিরিক্ত সংবেদনশীল হতে পারে। তখনও অতিরিক্ত হেয়ার মুখে আসতে পারে। তখনও লেজার ট্রিটমেন্টই সমাধানের উপায়
ভেলাস হেয়ার যাদের আছে, তাঁরা রেশমার কাছে লেজার করার জন্য এলেও তিনি এই পরামর্শ দেন না। কারণ স্বাভাবিক হেয়ার ওই পদ্ধতিতে রিমুভ করলে উল্টো ফল হবে। বরং শরীরের অন্য অংশ যেমন আন্ডার আর্মস-এ লম্বা সময় ওয়াক্স না করানোর বিকল্প হিসবে লেজার করানো যেতে পারে।