সামাজিক কল্যাণকর্মে সামাজিক স্বীকৃতি আর সন্মান। গৃহ পরিবেশে চাপ। আর্থক প্রগতি বজায় থাকবে। ... বিশদ
বউমা জিনস পরে! কয়েক দশক পিছিয়ে গেলে বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে এ ছিল স্বাভাবিক উষ্মা। জিনস পরা বউ যেমন একদিকে ফ্যাশন সচেতন বলে মনে করা হতো, তেমনই আত্মীয়বৃত্তের একাংশ আবার সেই নতুন বউয়ের সমালোচনাও করতেন। বাড়ির মেয়ে স্বচ্ছন্দে জিনস পরে কলেজ যেতে পারে। কিন্তু বিয়ের জল গায়ে পড়লেই সে যেন অন্য গ্রহের প্রাণী! এসব এখন অতীত। যে কোনও বয়সের মেয়ের কাছে পকেটসই দামে আরামদায়ক পোশাকের তালিকায় জিনস প্রথমসারির পছন্দ। যেমন সহজে পরা যায়, তেমন পরিপাটি করে রাখাও সম্ভব। সহজে নষ্ট হবে না।
ফিরে দেখা
১৮৪৮-এর আশপাশে ক্যালিফোর্নিয়ার সোনার খনিতে যেসব শ্রমিক কাজ করতেন, তাঁদের প্যান্ট ক্রমাগত ছিঁড়ে যেত। সেই প্যান্ট তাপ্পি মারার কাজ করতেন পেশায় দর্জি জ্যাকব ভেনিস। ১৮৫২-য় জার্মানি থেকে নিউ ইয়র্কে পাড়ি জমান লেভি স্ট্রস। বিভিন্ন জিনিস সাপ্লাইয়ের ব্যবসা শুরু করেন। যার মধ্যে ছিল কাপড়ও। জ্যাকব এবং লেভি পার্টনারশিপে মোটা কাপড়ের প্যান্ট তৈরিতে মন দেন। ওই কাপড়কে জার্মান ভাষায় বলা হয় জিনিয়া। যা থেকে জিনসের জন্ম। একসময় তাঁবু তৈরির কাজে এই ধরনের কাপড় ব্যবহার করা হতো। নীলরঙা ডেনিম সুতো দিয়ে কাপড় বোনা হতো। এই কাপড়ে তৈরি পোশাকের দাম কম থাকায় ও সহজে না ছেঁড়ায় তা পিছিয়ে থাকা শ্রেণির মধ্যে জনপ্রিয় হয়। পরে কুলীন পোশাক হয়ে ওঠে জিনস। গরমে জিনসের কোন কোন পোশাক বা অ্যাক্সেসরিজ ট্রেন্ডে রয়েছে?
জিনস স্কার্ট
একসময় বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে শুধুমাত্র স্কুল বা বড়জোর কলেজ পড়ুয়ারা স্কার্টে অভ্যস্ত ছিল। যুগ পাল্টেছে। এখন স্কার্ট পরে স্বচ্ছন্দে অফিসও করা যায়। এই আবহাওয়ায় বেছে নিতে পারেন জিনসের স্কার্ট। এই ধরনের স্কার্টের সঙ্গে আরামদায়ক স্নিকার্স বেছে নিয়ে সাজ সম্পূর্ণ করুন। শুধু গরম নয়, সারা বছরই এই পোশাক ক্যারি করতে পারেন।
সাদা জিনস
গরমকে কুপোকাত করতে চাইলে সাদা রঙের জুড়ি মেলা ভার। পোশাকের তালিকায় রাখতেই হবে একজোড়া সাদা জিনস। সাদা মেনটেন করার সমস্যা মনে হলে আইভরি অথবা ক্রিম রঙা জিনস পরুন। সঙ্গে পাতলা স্যান্ডেল ভালো মানাবে। যেহেতু পোশাকে হালকা রং তাই রকমারি রঙের অ্যাক্সেসরিজ ব্যবহার করতে পারেন।
ব্যাগি জিনস
ডেনিম ট্রেন্ডের মধ্যে ব্যাগি নীল জিনস বোধহয় সবথেকে বেশি নম্বর পাবে। কারণ এর আরাম। কিটেন হিল আর মিনিমালিস্টিক হ্যান্ডব্যাগেই সাজ সম্পূর্ণ হতে পারে। যে কোনও বয়সে ব্যাগি জিনস পরা যেতে পারে। শুধু আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ক্যারি করতে হবে।
ডেনিম ডে ড্রেস
ধরুন দিনভর অফিসের পর কোনও জন্মদিনের পার্টিতে যেতে হবে আপনাকে। অথবা অফিস অ্যাসাইনমেন্টে ভোরে বেরিয়ে রাতে ফেরার রুটিন। সেক্ষেত্রে সবথেকে আরামদায়ক ডেনিম ড্রেস। এটা কখনও ফ্যাশনের বাইরে যায় না। আবার এই ধরনের পোশাক পরে দৌড়ঝাঁপের কাজও স্বচ্ছন্দে করা যায়। হালকা অ্যাক্সেসরিজে সাজান নিজেকে।
ডেনিম স্যুট ভেস্ট
গ্রীষ্মপ্রধান দেশে আমাদের বাস। তাই নতুন করে ডেনিমের উপর খরচ করতে চাইলে আদর্শ পোশাক ডেনিম স্যুট ভেস্ট। ম্যাচিং নীল জিনস দিয়ে এই পোশাক ক্যারি করুন। ব্র্যান্ডেডও কিনতে পারেন। আবার নিজস্ব মাপে চেনা ডিজাইনারের কাছ থেকে কাস্টমাইজও করে নিতে পারেন।
কার্পেন্টার জিনস
কার্পেন্টার জিনসের ইতিহাস নতুন নয়। কাজের জায়গায় আরামদায়ক পোশাক হিসেবে পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষ জিনস বেছে নেন। আধুনিক স্কিনি জিনসের তুলনায় বহু পকেটযুক্ত কার্পেন্টার জিনস বেশি জনপ্রিয়। বিভিন্ন পকেটে বিভিন্ন জিনিস রেখে কাজের সুবিধের জন্যই এই পোশাক বেছে নেওয়া। আসলে ফ্যাশনের থেকেও এক্ষেত্রে আরাম প্রাধান্য পায়। ডেনিম ব্লু, অলিভ গ্রিনের মতো রং ট্রেন্ডের শীর্ষে রয়েছে।
ডেনিম ট্রাউজার্স
ট্র্যাডিশনাল জিনসের বিকল্প হিসেবে ডেনিম ট্রাউজার্স এখন পছন্দ করছেন টিনএজার-রা। পকেট ফ্রেন্ডলি ডেনিম ট্রাউজার্স প্রতিদিন ব্যবহার করলেও টেকসই। টিনএজারদের পকেটমানি থেকেই যা কেনা হয়ে যায় এবং দীর্ঘদিন যেমন খুশি তেমন ব্যবহারের লাইসেন্সও দেয় এই পোশাক।
ওভারসাইজড ডেনিম জ্যাকেট
ওভারসাইজড পোশাক হালফিলের ফ্যাশনের চেনা সংজ্ঞা। চেহারা একটু ভারীর দিকে হলেই বঙ্গললনারা হাতে তুলে নেন ওভারসাইজড ড্রেস। সেই তালিকায় ডেনিম জ্যাকেটেরও কদর। ক্যাজুয়াল লুকে আরামের সন্ধান যাঁরা করেন, তাঁদের কাছে এই পোশাক আদর্শ। ওভারসাইজড জ্যাকেট কখনও কাঁধ থেকে ঝুলেও পড়তে পারে।
স্টোনওয়াশ ডেনিম
ডেনিম পরলে দিনভর আপনার সঙ্গে জুড়ে থাকবে নস্টালজিয়া— এই যদি আপনার চাহিদা হয় তাহলে চোখ বন্ধ করে বেছে নিন স্টোনওয়াশ ডেনিম। এর টেক্সচারের মধ্যে এমন বিশেষত্ব রয়েছে যাতে ক্যাজুয়াল এবং ড্রেসি- দু’ধরনের আউটফিটেই সমান গ্রহণযোগ্য। স্কিনি, স্ট্রেট অথবা ওয়াইড কাটে স্টোনওয়াশ ডেনিম বেশি জনপ্রিয়।
অ্যাক্সেসরিজ
অ্যাক্সেসরিজেও থাকুক ডেনিমের ছোঁয়া। টোট ব্যাগ বা সাধারণ পার্স হতে পারে ডেনিমের। একটু বড় ধরনের অফিস ব্যাগও ডেনিমের কিনতে পারেন। ডেনিম কাপড়ে তৈরি পাতলা স্যান্ডেল পরলে গরমে আরাম পাবেন। ডেনিমের রকমারি ইয়ারিংসও সংগ্রহে রাখতে পারেন। বিভিন্ন পোশাকের সঙ্গে ঘুরিয়েফিরিয়ে পরবেন। চুল উঁচু করে বেঁধে ডেনিমের ব্যান্ডানা দিয়েও তৈরি করতে পারেন নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট।
যত্নের হাল হকিকত
• জিনস প্যান্ট বা পোশাক কাচার সময় উল্টে নিন। পকেট খালি করে চেন টেনে রাখুন।
• ফ্যাব্রিক এবং রঙের যত্ন নিতে হালকা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করে ধুয়ে নিন। জিনসের কাপড়ে দাগ লাগলে সেই অংশ আগেই আলাদা করে ধুয়ে নিন।
• অন্য ধরনের ফ্যাব্রিকের সঙ্গে জিনসের পোশাক ধোবেন না।
• ইস্ত্রির সময়ও তাপমাত্রা কমের দিকেই থাকবে। এতে ফ্যাব্রিক সফট থাকবে।
ছবি: রোহিত সরকার
(অভিনেত্রীর ইনস্টা অ্যাকাউন্ট থেকে)