সামাজিক কল্যাণকর্মে সামাজিক স্বীকৃতি আর সন্মান। গৃহ পরিবেশে চাপ। আর্থক প্রগতি বজায় থাকবে। ... বিশদ
আর তিন দিন পরে জন্মদিন ফেলুদা-স্রষ্টার। বিশ্ববরেণ্য পরিচালক ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিনের আগে বিশেষ কিছু কাজ বরাবরই করে থাকেন ঘুড়ি-র ডিজাইনার দেবযানী রায়চৌধুরী। সত্যজিতের পরিচালিত ছবির পোস্টার নিয়ে কাজ করেছেন আগে। যেগুলির প্রিন্ট রয়েছে কটন শাড়িতে। অপরাজিত, অপুর সংসার, জয় বাবা ফেলুনাথ, প্রতিদ্বন্দ্বী, ঘরে বাইরে, নষ্টনীড়, সীমাবদ্ধ, নায়ক— নিয়েছেন এই সব ছবির পোস্টার।
আর ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-ছবির পুরো কাহিনিটা জামদানিতে বুনে তুলেছেন গল্পের মতো। এটা তিনি করেছেন বছর দুই আগে।
তারপর অসুস্থতায় একটু থমকে গেলেও এ বছর সত্যজিতের জন্মদিনের আগে তিনি এনেছেন নতুন কাজ। পোস্টার থেকে সরে এসে এবার ‘আরও সত্যজিৎ’ এবং ‘সেরা সত্যজিৎ’-এর বিভিন্ন গল্পে সত্যজিতের চরিত্রাঙ্কন থেকে বেছে নিয়েছেন বিভিন্ন ছবি। অর্থাৎ সরাসরি আঁকা থেকেই কাজ। সেগুলোই এবার প্রিন্টে এনেছেন তিনি। পাশাপাশি রয়েছে জনপ্রিয় চরিত্র, শঙ্কু সংক্রান্ত বেশ কিছু ছবিও।
সত্যজিতের ছবির পোস্টার বা অন্য কোনও চরিত্র কীভাবে শাড়িতে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটা করেন দেবযানী? ‘ওঁর বেশিরভাগ কাজই মোনোক্রোমে করা। অরিজিনাল প্রিন্টে কখনও আবার দেখেছি বেস থাকে ইয়েলো, ব্লু বা রেডে। কখনও আবার ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটে। ইয়েলো বেসড কিছু কাজ নিয়েছি। তারপরে করেছি রেড নিয়ে। যেমন ‘সীমাবদ্ধ’। এটা লাল-কালোয়। ফেলুদা-শাড়ি করেছি পুরো ব্লক প্রিন্টে। গুপী-বাঘা আবার বোনানো। সত্যজিতের খেরোর খাতার আঁকা থেকে বিভিন্ন জিনিস এঁকে ফোটোশপে ডেভেলপ করা হয়েছে। আমরা যেভাবে যে কোনও প্রিন্টেড প্যাটার্ন ডেভেলপ করি, ঠিক সেইভাবে। সেই ছবি থেকে আদল তুলে তবে তাঁতি বুনতে পারেন। এভাবে গ্রাম হতে গুপী-বাঘাকে বের করে দেওয়া থেকে পরপর মুহূর্ত তুলে এনেছি শাড়ির পাড় বরাবর। ভূতের রাজার দেওয়া মিষ্টির হাঁড়ি, বা দলে দলে ভূত— সবই এসেছে। হাতে বোনা বলে এটা পার্ট বাই পার্ট হয়। যাকে ‘মিডল জামদানি’ বলে। আর এবারের কাজের পুরোটাই প্রিন্ট। খাদি শাড়িতে। তবে প্রিন্টের ক্ষেত্রে ভাগ ভাগ করা থাকে। কোনওটা স্ক্রিন প্রিন্ট। কোনওটা ব্লক। আঁচলটাকে ভেঙে দিই। স্ক্রিন বা ব্লক দিয়ে।’
এসব শাড়ির চাহিদা কেমন? বাংলার ঐতিহ্য, বাংলার লেখক, সত্যজিৎ মহিমা যাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তাদের কাছে এসব শাড়ির চাহিদা মারাত্মক— জানালেন দেবযানী। তাই মাটি ছেড়ে চলে যাওয়া বাঙালির কাছে এসবের কদর একটু বেশিই। প্রবাসে থাকলে যেন বেশি করে মনে হয়, ফেলে আসা সেই সব দিন গায়ে লেপ্টে থাকুক। ছবির পোস্টার দিয়ে প্রিন্টেড শাড়িটির চাহিদা সারাবছরই বেশ ভালো, বললেন তিনি। আগে এই শাড়িতে রং সংক্রান্ত কাস্টমাইজ করার সুযোগ ছিল না, এখন সেটাও হচ্ছে। জামদানিতে গুপী-বাঘার সূক্ষ্ম কাজের শাড়িটি নিতে একটু বেশিই রেস্ত লাগবে। কারণ অনেকটা কাজ রয়েছে তাতে। এই শাড়ির কতটা ছুঁতে পারবে ক্রেতার মন, তা নিয়ে একটু সন্দিহান ছিলেন দেবযানী। আদতে দেখা গেল, প্রবাসী বাঙালির মন ভালোই জয় করতে পেরেছে শাড়িটি। ডিজাইনারের মতে, ‘মাটির গন্ধমেশা শৈশব মিস করার পাশাপাশি আরও একটা বিষয় কাজ করছে। এখন বিদেশের মাটিতে নানা ধরনের মিলনোৎসবের সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে। সেখানে বাঙালি ঐতিহ্যকে তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে এইভাবেই।’