কর্মক্ষেত্রে অশান্তির সম্ভাবনা। মাতৃস্থানীয় কার শরীর-স্বাস্থ্যের অবনতি। প্রেমে সফলতা। বাহন ক্রয়-বিক্রয়ের যোগ। সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় উন্নতি।প্রতিকার: ... বিশদ
দীক্ষার সময় গুরু শিষ্যের দক্ষিণ কর্ণে ইষ্টমন্ত্র দান করিয়া থাকেন, ইহা সকলেই জানেন। বস্তুত গুরু যে বাহির হইতে সাধারণ ব্যক্তির ন্যায় শিষ্যকে শব্দ-বিশেষ শুনাইয়া দেন তাহা নহে—তিনি দীক্ষার সময় অন্তরে প্রবিষ্ট হইয়া অন্তর্যামি রূপে শব্দব্রহ্মময় জ্ঞান দান করেন। এই জন্যই দীক্ষাদাতা গুরুকে জ্ঞানদাতা রূপে শাস্ত্রকারগণ বর্ণনা করিয়া থাকেন। এই জ্ঞান পরোক্ষ জ্ঞান, কারণ ইহা শব্দ হইতে উত্থিত হয়।
জ্ঞান দুই প্রকার। একটি শব্দজ অর্থাৎ উপদেষ্টা গুরুর উপদেশ-বাণী হইতে শিষ্যের হৃদয়ে পরোক্ষরূপে উদ্ভূত। ইহাকে আগমোত্থ অথবা আগমজন্য জ্ঞান বলা হয়। কেহ কেহ ইহাকে ঔপদেশিক জ্ঞান বলিয়া থাকেন। দ্বিতীয় প্রকার জ্ঞান শব্দ হইতে উত্থিত হয় না অর্থাৎ গুরু বাক্য হইতে জন্মে না, কিন্তু শিষ্যের বিবেক হইতে আপনা আপনি উদ্ভূত হয়। ইহাকে বিবেকজ জ্ঞান বলে—প্রাতিভ জ্ঞান ইহার নামান্তর। ইহা অনৌপদেশিক। কারণ ইহা অন্যের মুখ-নিঃসৃত উপদেশ-বাণী হইতে উৎপন্ন হয় না। এইটি প্রত্যক্ষ জ্ঞান। সদ্গুরুর বিশিষ্ট কৃপার উদয় না হওয়া পর্য্যন্ত এই দ্বিতীয় প্রকার জ্ঞান আবির্ভূত হয় না। বস্তুতঃ এই জ্ঞানই তারক জ্ঞান—ইহার অবিষয় কিছুই থাকে না। ইহাতে একই ক্ষণে অতীত অনাগত ও বর্ত্তমান সকল পদার্থের সর্ব্বাবিধ জ্ঞান বিদ্যমান থাকে। এই জ্ঞানে ক্রমে থাকে না, দেশ-গত অথবা কলাগত ব্যবধানের প্রশ্ন থাকে না,— সর্ব্বজ্ঞত্ব ইহারই নামান্তর। গুরুর মৌখিক উপদেশ হইতে এই প্রকার প্রত্যক্ষ জ্ঞান জন্মে না। এই মহাজ্ঞানের সঞ্চার-কালে সদ্গুরু বাহ্যতঃ কোন বাক্য প্রয়োগ করেন না, কিন্তু মৌনী থাকেন, অথচ ইহার এমনি প্রভাব যে ইহাতে যাবতীয় সংশয় ছিন্ন হইয়া অখিল কর্মবন্ধন ক্ষীণ হয় এবং হৃদয়ের মর্ম্ম-প্রবিষ্ট গ্রন্থি সকল ছিন্ন হয়। ‘‘গুরোস্তু মৌনং ব্যাখ্যানং শিষ্যস্তু ছিন্নসংশয়ঃ।’’
পরোক্ষ জ্ঞান লাভ করার পর সাধকের চিত্তে যতদিন পর্য্যন্ত ইষ্ট-সাক্ষাৎকারের জন্য ব্যাকুলতা না জন্মে ততদিন সদ্গুরুর কৃপার উদয় হয় না এবং অপরোক্ষ জ্ঞানের আবির্ভাব হইতে পারে না। কঠোর তপস্যা, কৃচ্ছ্র সাধন, অভাবের বেদনা, লাঞ্ছনা, আধি ও ব্যাধি এবং নানা প্রকার পরীক্ষা অতিক্রম করিতে না পারিলে প্রত্যক্ষ জ্ঞানের জন্য উৎকট তৃষ্ণা জন্মে না। গুরুর মঙ্গলময় ইচ্ছাতে সাধককে বহুপ্রকার অবস্থা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়া অগ্রসর হইতে হয়। কেহ কেহ এই সকল অবস্থাকে প্রারব্ধের ফল ভোগ বলিয়া ব্যাখ্যা করিয়া থাকেন।