হঠাৎ পাওয়া যোগাযোগের মাধ্যমে কর্ম জটিলতার অবসান ও মানসিক চিন্তামুক্তি। আয় ব্যয়ের ক্ষেত্র ঠিক থাকবে ... বিশদ
কোটি কোটি মানুষের দর্শনস্থানে এমন অব্যবস্থাকে কোনও গুরুত্বই দিতে নারাজ যোগী সরকার। এমনকী যে পুণ্যার্জনের আশায় অর্ধশত কোটি মানুষ সঙ্গমে স্নান করলেন, সেই জল রোগ-জীবাণুতে দূষিত বলে যে রিপোর্ট দিয়েছে মোদি সরকারেরই সংস্থা, তাকে অস্বীকার করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী! গত নভেম্বরে জাতীয় পরিবেশ আদালত জানিয়েছিল, প্রয়াগে গঙ্গার জলে প্রতিদিন অপরিশোধিত মানব বর্জ্য মিশছে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছিল, প্রায় আড়াইশোটি নালা থেকে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বর্জ্য এসে মিশছে গঙ্গা ও তার শাখা নদীগুলিতে। এই সতর্কবার্তা সত্ত্বেও উদাসীন থেকেছে যোগীর প্রশাসন। এর চূড়ান্ত পরিণতি হল, কুম্ভ শুরুর পর জলে দূষণের মাত্রা পরীক্ষা করে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে, গঙ্গা-যমুনায় মানুষ ও পশুর বর্জ্য ত্যাগের কারণে দূষণের মাত্রা যা দাঁড়িয়েছে, সেই ফিকাল কলিফর্ম লেভেল অনুমোদিত ঊর্ধ্বসীমার কয়েকগুণ বেশি। ফলে এই জল পান করা তো দূরের কথা, স্নানেরও অযোগ্য। এই জল ব্যবহারে নানা চর্মরোগ, ই-কোলাই, সালমোনেলা সহ নানা ধরনের আন্ত্রিক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গোটা দেশে চাঞ্চল্য ফেলে দেওয়া এই রিপোর্ট বহু ভক্তের মনে আতঙ্ক ছড়ালেও উত্তরপ্রদেশ সরকারের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ মোদি সরকারের কেন্দ্রীয় পর্ষদের উল্টোপথে হেঁটে দাবি করেছে, সঙ্গমের জলে ফিকাল কলিফর্মসহ অন্যান্য উপাদান নির্ধারিত মাপকাঠির মধ্যেই রয়েছে।
স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় পর্ষদের ধারাবাহিক সতর্কতা ও বিজ্ঞানসম্মত রিপোর্টকে পুরোপুরি অস্বীকার করে দাবি করেন, কুম্ভের জল শুধু পবিত্র নয়, পুরোপুরি বিশুদ্ধ। এই জলে স্নান করায় কোনও সমস্যা নেই। এমনকী পানীয় জল হিসেবেও গ্রহণযোগ্য। একথা ঠিক যে, কুম্ভে যাওয়া ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে গঙ্গাস্নান এক পবিত্র কাজ। অনেকেরই বিশ্বাস, এই পুণ্যস্নানে যাবতীয় পাপ ধুয়েমুছে যাবে। অনেক মনোবাসনা পূর্ণ হয়। তাঁদের মানসলোকে তাই গঙ্গা কলুষিত হতে পারে না। কিন্তু বিশ্বাস আর বিজ্ঞান এক নয়। শুধু প্রয়াগ নয়, গঙ্গাকে দূষণ মুক্ত করতে মোদি সরকারের ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্প চলছে সেই ২০১৮ সাল থেকে। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হলেও এখনও যে গঙ্গার দু’ধারে বর্জ্য শোধনের প্রক্রিয়াকরণের কাজ শেষ হয়নি সরকারি তথ্যেই তা জানানো হয়েছে। প্রয়াগে বহমান গঙ্গাও তার ব্যতিক্রম নয়। যোগী আদিত্যনাথও নিশ্চয়ই এসব ভালোই জানেন। কিন্তু মানুষের কিছু অন্ধবিশ্বাসই তাঁর ভরসা, রাজনীতির পুঁজি। একদিকে সফল ব্যবসা, অন্যদিকে হিন্দুত্বের জাগরণ— কুম্ভ থেকে যোগীর লাভ কম হল না। তা বলে কি ‘অমৃতে’ সঙ্কট অস্বীকার করা যাবে?