মাতৃকুল থেকে সম্পত্তি প্রাপ্তির যোগ। ডাক্তার, আইনজীবী, প্রমুখের পেশার প্রসার, সুনাম ও উপার্জন বৃদ্ধির সম্ভাবনা। ... বিশদ
সকলের চোখে ‘গুরু পাপে লঘু দণ্ড’-এর এই কারণগুলি নিশ্চয় অস্বীকার করা যায় না। আইনের এই সীমাবদ্ধতা অবশ্য রাজ্য সরকারের নজরে ছিল গোড়া থেকেই। তাই ‘অভয়া’ কাণ্ডে দোষীর যথোপযুক্ত শাস্তি ‘মৃত্যুদণ্ড’ দিতেই আইনি পথে উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছাতেই গত সেপ্টেম্বরের গোড়ায় বিধানসভায় পেশ করা হয় ‘অপরাজিতা’ বিল। আর জি কর ইস্যুতে উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যেই, ৩ সেপ্টেম্বর বিনাবাধায় পাসও হয়ে যায় সেটি। বিলটির পুরো নাম ‘অপরাজিতা নারী ও শিশু পশ্চিমবঙ্গ অপরাধ সংশোধনী বিল ২০২৪’। কেন্দ্রের ন্যায় সংহিতায় সংশোধনী এনে ধর্ষণ, গণধর্ষণ এবং নারী ও শিশুদের উপর যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে এই প্রথম পৃথক বিল পাস করেছে কোনও একটি রাজ্য। তবে ‘আইন’ হিসেবে কার্যকর হতে তাতে প্রয়োজন রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর। এই বিলে ধর্ষণ এবং ধর্ষণসহ খুনের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। অ্যাসিড হামলার ক্ষেত্রেও মৃত্যুদণ্ডের বিধান এনেছে রাজ্য। কিন্তু ‘ঐতিহাসিক’ বিলটিতে যথাসময়ে রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির সই পড়েনি। কেন্দ্রের ন্যায় সংহিতার চেয়ে এই বিল কতটা আলাদা, সাজা কতটা বর্ধিত ও গুরুতর করা হয়েছে, তার বিশদ ব্যাখ্যা মুখ্যমন্ত্রীই দিয়েছিলেন। তিনি জানান, নতুন বিলের তাৎপর্য তিনটি: (১) বর্ধিত শাস্তি, (২) দ্রুত তদন্ত এবং (৩) দ্রুত ন্যায় বিচার। ধর্ষণ এবং নারী ও শিশুদের উপর যৌন হিংসার শাস্তি হবে ‘চরম’। ‘ন্যায় সংহিতা’ এবং ‘পকসো’ আইনের শাস্তির বিধান এখানে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ধর্ষণ ও গণধর্ষণে ১০-২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে ন্যায় সংহিতায়, বিশেষ ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন। ‘অপরাজিতা’য় তা বাড়িয়ে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড এবং গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে প্রাণদণ্ডের বিধান রয়েছে। ধর্ষণ এবং গণধর্ষণে নির্যাতিতার মৃত্যু হলে বা তিনি কোমায় চলে গেলে ন্যায় সংহিতায় ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের উল্লেখ রয়েছে। অপরাজিতায় তার জায়গায় প্রাণদণ্ড এবং জরিমানার ব্যবস্থা করা হয়েছে; ধর্ষিতা বা নির্যাতিতার চিকিৎসা এবং আত্মীয়স্বজনকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ারও বিধান রয়েছে; অ্যাসিড হামলার ঘটনায় আমৃত্যু কারাদণ্ড ও প্রাণদণ্ডের সংস্থান রাখা হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত দ্রুত সারতে অপরাজিতা টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে। প্রাথমিক রিপোর্ট আসার ২১ দিনের মধ্যেই শেষ করতে হবে তদন্ত। ব্যতিক্রমী ঘটনার ক্ষেত্রে সময়সীমা আরও ১৫ দিন বাড়ানো যেতে পারে। শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে সাতদিনের মধ্যে সেরে ফেলতে হবে সাক্ষ্যগ্রহণ। দ্রুত বিচারের জন্য গঠিত হবে বিশেষ আদালত। চার্জশিট জমা পড়ার ৩০ দিনের মধ্যেই শেষ করতে হবে বিচার।
দ্রুত বিচার এবং যথোপযুক্ত শাস্তি প্রদানই হল শ্রেষ্ঠ পদক্ষেপ। এরপর বুঝতে বাকি থাকে না, অভূতপূর্ব ‘অপরাজিতা’ বিল কেন অবিলম্বে আইন হিসেবে কার্যকর হওয়া কাম্য। এই বিল উত্থাপনের ভিতরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরদর্শিতা এবং বাংলায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতি তাঁর ঐকান্তিকতার প্রমাণ মেলে। অভয়া মামলায় নিম্ন আদালতের হতাশাজনক রায় থেকেও যদি কেন্দ্রীয় সরকার শিক্ষা না নেয় তবে বুঝতে হবে যে নারীর সম্ভ্রমরক্ষা এবং নিরাপত্তা বিধান নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা নেই।