মাতৃকুল থেকে সম্পত্তি প্রাপ্তির যোগ। ডাক্তার, আইনজীবী, প্রমুখের পেশার প্রসার, সুনাম ও উপার্জন বৃদ্ধির সম্ভাবনা। ... বিশদ
কিন্তু রাজনৈতিক বিরোধীদের একটি মহল অমনি বেসুরো গাইতে লাগল। তারা প্রচার করল যে, এই ঘটনা নিছক একজনকে খুন এবং ধর্ষণের নয়, এর নেপথ্যে রয়েছে বিরাট দুর্নীতি এবং চক্র। ওই চক্রের পান্ডারা নাকি শাসক দলের ঘনিষ্ঠ কিছু লোক। তাদের মধ্যে কিছু ডাক্তার এবং অন্য শ্রেণির লোকজনও রয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রশাসন নাকি তাদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। তারা এই দাবিও করল যে, প্রভাবশালী সন্দেহভাজনদের বাঁচাতেই বস্তুত বলির পাঁঠা করা হচ্ছে সঞ্জয় রায়কে। ‘নাগরিক সমাজের’ বকলমে, অতএব এই বিরোধী মহল দাবি তুলে দিল—তদন্তে মমতার পুলিস, এমনকী স্বাস্থ্য বিভাগকেও যুক্ত রাখা চলবে না। তদন্তের পুরো দায়িত্বটাই তুলে দিতে হবে ‘অতিশয় দক্ষ’ ও ‘নিরপেক্ষ’ সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে। দাবিটা উত্থাপন করানো হল মৃতার পরিবারকে দিয়েই। তিক্ততা বাড়াতে কিংবা সংকীর্ণ রাজনীতি করতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী। এমন দাবি ওঠামাত্রই, স্পর্শকাতর বিষয়টির তদন্তে তিনি সিবিআই’কেই স্বাগত জানান। তদন্তের দায়িত্ব সিবিআই নেয় ১৩ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে। আদালতের নজরদারিতেই তারা টানা তদন্ত করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে, এই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে লাগাতার পূর্ণ সহযোগিতা করেছে কলকাতা পুলিস এবং রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর। কলকাতা পুলিসের তাৎক্ষণিক তদন্তের ফলাফলকে সিবিআইয়ের চার মাসের তদন্তের আউটকামের পাশে রেখেই হতাশ মানুষ। কেননা, কলকাতা পুলিসের পর বস্তুত এক-পা’ও এগতে পারেনি সিবিআই। অন্য একাধিক অভিযোগে কিছু লোককে ডেকে তারা হেনস্তা করেছে বটে, কিন্তু তরুণী ডাক্তারকে ধর্ষণ-খুনে দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তিকে চিহ্নিতই করতে পারেনি তারা। রাজ্যের উপর অনাস্থা প্রকাশ করেছিলেন যাঁরা—এই হতাশার সূচনা এবং চার মাস ব্যাপী তার বৃদ্ধিই সার হয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে। সিবিআই’কে সামনে রেখে যাঁরা বিচারের আকাশ কুসুম ফুটিয়েছিলেন, ওই কেন্দ্রীয় এজেন্সির গত এক দশকের ‘ধারাবাহিক ব্যর্থতার রেকর্ড’ নিশ্চয় মনে রাখেননি তাঁরা।
১৮ জানুয়ারি শিয়ালদহ আদালত অভয়া কাণ্ডে সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে। তখনও মৃতার পরিবারসহ সকলেই ধরে নিয়েছিলেন যে সঞ্জয়ের চরমতম সাজাই হতে চলেছে। সোমবার বিচারক অনির্বাণ দাসের এজলাসে প্রবেশের সময় অভয়ার মা-বাবাকে সিবিআইয়ের আইনজীবীরা আশ্বস্ত করেন যে, ‘নিশ্চিন্তে থাকুন, ফাঁসি হবেই।’ অতএব ‘জাস্টিস’-এর প্রত্যাশায় বিচারকের মুখ থেকে শুধু ‘মৃত্যুদণ্ড’ শব্দটিই শুনতে চেয়েছিলেন সকলে। কিন্তু শেষমেশ ঘোষিত হল রায়, ‘দোষী সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হল!’ অমনি অপার বিষণ্ণতা নেমে এল অভয়ার বাবা-মা থেকে শুরু করে টিভি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখা সকলের চোখে-মুখে। কিন্তু কেন এইভাবে হতাশ করল ন্যায়ালয়? ‘বচ্চন সিং বনাম স্টেট অব পাঞ্জাব’ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অনুসরণে বিচারক পরিষ্কার করে দিলেন, ‘সাক্ষ্য-প্রমাণের প্রেক্ষিতে এই অপরাধ বিরলের মধ্যে বিরলতম পর্যায়ে পড়ে না!’ দোষীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তার সমস্ত দোষ প্রমাণের দায়িত্ব যার, সেই সিবিআই’কেই এই চরম ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। সিবিআই মানেই বাঘ, সিংহ—কিছু মানুষের এমন ভ্রান্ত ধারণা আগামী দিনে এই হতাশাই দূর করে দেবে হয়তো।