মাতৃকুল থেকে সম্পত্তি প্রাপ্তির যোগ। ডাক্তার, আইনজীবী, প্রমুখের পেশার প্রসার, সুনাম ও উপার্জন বৃদ্ধির সম্ভাবনা। ... বিশদ
কে না জানে, কোনও সরকারকে হেনস্তা করার মোক্ষম জায়গা হল স্বাস্থ্যক্ষেত্র। এ রাজ্যে যেহেতু মুখ্যমন্ত্রীই স্বাস্থ্যমন্ত্রী, তাই কান টেনে নিয়ে যাওয়ার গুজবও আকাশছোঁয়া। কিন্তু সত্যিই কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের কোনও উন্নতি হয়নি? উত্তর লুকিয়ে আছে সরকারি পরিসংখ্যানে। যেমন, বাম জমানার শেষ স্বাস্থ্য বাজেটে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা থেকে এখন বেড়ে তা হয়েছে ২০ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছিল ১১টি। এখন ৩৭টি। এর মধ্যে সরকারি ২৪টি। রাজ্যে এমবিবিএস-এ আসন সংখ্যা ১৩৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৬৫০। এমডি আসনের সংখ্যা বেড়েছে ১৮৪৮টি। সরকারি হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭ হাজার। ডাক্তার নিয়োগ হয়েছে ১৪ হাজার। একইহারে বেড়েছে নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও তার আসন সংখ্যাও। এর বাইরে রয়েছে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প, যার সুবিধা পাচ্ছেন রাজ্যের ৯ কোটি মানুষ। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, সবস্তরের লোকবল বাড়ানোর দায়িত্ব অবশ্যই প্রশাসনের। ওবিসি নিয়ে আদালতে মামলা চলায় বহুদিন ধরেই ডাক্তার নিয়োগ করা যাচ্ছে না। তবু একথা ঠিক, সুষ্ঠভাবে হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়ন ও শূন্যপদ পূরণে আরও তৎপরতা দরকার। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসার বিষয়টি দেখার কাজ তো ডাক্তারদের। সব ডাক্তারই কি ঠিকঠাক মতো দায়িত্বপালন করেন? সে কাজ তো স্বাস্থ্যমন্ত্রী বা স্বাস্থ্যসচিব করে দিতে পারবেন না। দুর্ভাগ্যের হলেও এক্ষেত্রেও তথ্য বলছে, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার ত্রুটি নিয়ে যত অভিযোগ ওঠে, তার সিংহভাগই চিকিৎসা সংক্রান্ত। এর দায় কার? ডাক্তারবাবুরা কি তা অস্বীকার করতে পারেন?
অন্যান্য রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে একজন চিকিৎসক কতক্ষণ ডিউটি করেন? হাসপাতাল ছাড়াও কেন্দ্র-রাজ্যে বিভিন্ন সরকারি অফিসে প্রতিদিন ডিউটির সময় কতক্ষণ? এসব প্রশ্নের উত্তর কম-বেশি সকলেরই জানা। এ রাজ্যেও একজন ডাক্তারের দৈনিক আট ঘণ্টা হাসপাতালে থাকার কথা। কিন্তু এই নিয়ম যে দিনের পর দিন লঙ্ঘিত করে চলেছেন বহু চিকিৎসক তা সরকার ও ভুক্তভোগী মাত্রই জানে। প্রসূতি মৃত্যুকাণ্ডে যাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে দু’জন ওইদিন বেসরকারি হাসপাতালে ‘সিজার’ করতে ব্যস্ত ছিলেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। শুধু জেলা নয়, সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় ‘মক্কা’ এসএসকেএম হাসপাতাল, মুখ্যমন্ত্রীসহ ভিভিআইপিদের চিকিৎসায় যাঁদের নিশ্চিত উপস্থিতি দেখা যায়, তাঁদের মধ্যেও কেউ কেউ সরকারি ডিউটির সময়ের মধ্যেই বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন, অপারেশনও করেন। সরকারি অব্যবস্থা নিয়ে যেসব ডাক্তারবাবু সরব, তাঁদের ‘আপনি আচরি ধর্ম’ শেখাবে কে? বৃহস্পতিবারও সরকারি ডাক্তারদের আট ঘণ্টা ডিউটির কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে! এজন্য একটু লজ্জিত তো হওয়াই যায়।