কাজকর্মে নতুন সুযোগ আসতে পারে। কর্ম সাফল্যে আনন্দ লাভ। ব্যবসায় উন্নতি। গবেষকদের পক্ষে শুভ। ... বিশদ
এমন দিনকে রাত, রাতকে দিন করে দিতে অভ্যস্ত প্রধানমন্ত্রীকে দেখা গেল গ্রামের গরিব মানুষের ‘ত্রাতার’ ভূমিকায়! দিন তিনেক আগে এক সরকারি অনুষ্ঠানে দাবি করেছেন, স্বাধীনতার পর কোনও সরকার যা পারেনি, তিনি তা করে দেখিয়েছেন। দশ বছরে গ্রাম-শহরের দারিদ্র্য কমিয়ে দিয়েছেন! বছরের শুরুতেই এটাকে প্রধানমন্ত্রীর জোকস হিসেবে না ভেবে তার ব্যাখ্যাও শুনতে হবে। ২০১২ সালে ভারতে গ্রামীণ দারিদ্র্যের হার ছিল ২৬ শতাংশ। এখন তা ৫ শতাংশের কম। দশ বছরে ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে এসেছে—বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর হিসাব মতো, এই মুহূর্তে গ্রামীণ জনতার ৯৫ শতাংশকে আর গরিব বলা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই দাবির উৎস স্টেট ব্যাঙ্কের একটি সমীক্ষা রিপোর্ট। ওই সমীক্ষায় গ্রামীণ অর্থনীতির মূল উপাদান ১০০ দিনের কাজ কিংবা দরিদ্র পরিবারের শিশুদের স্কুলমুখী করতে চালু মিড ডে মিল প্রকল্প নিয়ে একটি শব্দও খরচ করা হয়নি। তবে বলা হয়েছে, মোদির ভারতে ভাত-রুটির থালায় খাবারের বৈচিত্র্য ক্রমেই কমছে। আসলে সরকারি তথ্যই বলছে, এই দুটি প্রকল্পেই সরকার বরাদ্দ বছর বছর কমিয়েছে। অবহেলিত হচ্ছে প্রকল্প দুটি। মোদির আরও দাবি ছিল, তাঁর আমলে গ্রাম-শহরের ভোগব্যয় বেড়েছে। গ্রামের মানুষ খাদ্যের বাইরেও অনেক টাকা খরচ করছে। তিনি বলেছেন, মাঝারি ও ছোট শিল্পের হাত ধরে গ্রামাঞ্চলে এখন বাড়তি রোজগারের ব্যবস্থা হয়েছে। কমেছে কৃষি নির্ভরতা। কিন্তু আসল সত্য হল, তাঁর জমানায় দেশে লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধু ২০২২ সালেই বন্ধ হয়েছে ১৩ হাজারেরও বেশি। এর বেশিটাই গ্রামীণ। মোদির দাবিকে অতিরঞ্চিত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। তাঁদের মতে, গত এক দশকে জিনিসপত্রের দাম দুই থেকে চার গুণ বেড়েছে। টাকার মূল্য কমেছে। এই প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি যোগ করলেই প্রকৃত ভোগব্যয় বেড়েছে কি না বোঝা যাবে। ভোগ্যপণ্য উৎপাদক সংস্থাগুলিও পাল্টা দাবি করেছে, তাদের বিক্রি কমেছে।
রং চড়ানো বিষয়কে সামনে রেখে ‘ফকিরের’ এই কেরামতি দেখানোকে অবশ্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। তাদের সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বে ১১০ কোটি মানুষ তীব্র দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে। এর অর্ধেক মূলত পাঁচটি দেশে, যার শীর্ষে রয়েছে ভারত। এদেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৫ কোটি। তালিকায় বাকি চারটি দেশ পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, নাইজিরিয়া ও কঙ্গো। এই দরিদ্রদের ৮৩ শতাংশই গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন। বিশ্বের ১১২টি দেশের ৬৩০ কোটি মানুষের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে এই রিপোর্ট তৈরি হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি এই তথ্য না মানতে চাইলেও তাঁর সরকারই দেশের ৮২ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে আসল সত্যটা কী।