পারিবারিক ক্ষেত্রে কলহের আশঙ্কা। ঠান্ডা মাথায় চলুন। বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী, সাহিত্যিকদের শুভ সময়। ... বিশদ
কিন্তু বিনিময়ে কী পেয়েছিল দেশবাসী? প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালের ১৫ আগস্ট তাঁর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে ‘প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা’র (পিএমজেডিওয়াই) সূচনা করেন। ওই স্কিমে সমস্ত গরিব মানুষের জন্য ‘জিরো ব্যালান্স’-এর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করা হয়। সেইমতো দেশজুড়ে অতি দ্রুত কয়েক কোটি মানুষ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলেনও। একটি অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণ থেকে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে ‘দুষ্টচক্র থেকে গরিব মানুষের মুক্তির উৎসব’ বলেও বর্ণনা করেন। কিন্তু বাস্তবে কী দেখা গেল? ওই সমস্ত অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা কেন মাথাপিছু ১৫ টাকাও জমা করেনি ‘দরদি’ সরকার, উল্টে প্রত্যেককে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল ব্যাঙ্কের সামনে সুদীর্ঘ লাইনে! কেননা ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বিনা নোটিসের এক ঘোষণায় দেশজুড়ে বাতিল হয়ে গিয়েছিল প্রত্যেকের হাতে থাকা ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটগুলি! বিনা মেঘের ওই বজ্রাঘাতে বহু মানুষের বেঘোরে মৃত্যুও হয়েছিল। আচমকা নগদের খরায় চৌপাট হয়ে গিয়েছিল বহু ছোটখাটো ব্যবসা, যেটা এই গরিব দেশের কয়েক কোটি মানুষের একমাত্র রুটিরুজির উপায়। তারপরেও মানুষ ‘আর একটি সুযোগ’ দেওয়ার মতো করে ২০১৯-এ নরেন্দ্র মোদিকেই পুনর্বহাল করেছিল রাষ্ট্রক্ষমতায়।
কিন্তু এবারও কথার খেলাপে কোনরকম খামতি রাখেননি তিনি। গত পাঁচ বছরে মোদি সরকার সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার দিকে নজর দেওয়ার পরিবর্তে চমকের উপরেই জোর দিয়েছিল সবচেয়ে বেশি। যেমন ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’র (সর্দার প্যাটেলের সুউচ্চ মূর্তি) পর নয়া সংসদ ভবনসহ সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প ও অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা (সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ) খারিজ প্রভৃতি। আর এসব করতে গিয়েই গৌণ হয়ে যায় কৃষকের আয় দ্বিগুণ করার এবং যুবদের হাতে হাতে কাজ দেওয়ার সংকল্প। বিঘ্নিত হয়েছে নানা ধরনের উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং জিনিসপত্রের দাম সাধারণের সাধ্যের মধ্যে বেঁধে রাখার উদ্যোগ। ফলে মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারত্বের রেকর্ডে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মানুষের জীবন। একইসঙ্গে কমেছে টাকার দাম এবং অন্যদিকে বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি ও ধনবৈষম্য। রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রয়োগে বিরোধীদের উপর অত্যাচারও বেড়েছে। বৃহত্তম গণতন্ত্রে গণতান্ত্রিক পরিসর এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংসের কীর্তি স্থাপন করেছেন মোদিই। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের গরিব মানুষ। অর্থাৎ দফায় দফায় কথার খেলাপ এবং জনবিরোধিতার দশকব্যাপী শাসনকালে দেশ ‘আচ্ছে দিন’ থেকে উল্টে দূরবর্তীই হয়েছে। এবারের রায়ের ছত্রে ছত্রে রয়েছে তারই প্রতিফলন। মানুষের এই রায় সব পক্ষকেই মাথা পেতে নিতে হবে। আশা করা যায়, যথাসময়েই একটি মজবুত সরকার পাব আমরা এবং সেটি আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে যত্নবান হবে। তবেই মঙ্গলে উষার এই ফল দেশের সকলের জন্যই মঙ্গলজনক হবে।