কর্মরতদের সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা ও ব্যবহারে সংযত থাকা দরকার। ... বিশদ
বোর্ড সভাপতি হিসাবে ব্রিজেশ প্যাটেলে নাম প্রায় পাশ হয়ে গিয়েছিল। আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদের প্রস্তাব দেওয়া হলে রাজি হননি সৌরভ। তিনি সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান। তার পরেই দ্রুত বদলাতে থাকে ছবি। উত্তর-পূর্ব রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার কর্তারা শ্রীনির পছন্দের প্রার্থী ব্রিজেশ প্যাটেলকে সমর্থন করবে না বলে জানিয়ে রীতিমতো বিদ্রোহ ঘোষণা করে দেয়। তাঁদের সুরে সুর মেলায় পশ্চিমের একাধিক রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাও। একটা সময়, ৩০টি ইউনিটের প্রতিনিধিরা দু’ভাগ হয়ে যায়। অনেকে প্রশ্ন তোলেন, এন শ্রীনিবাসনের জন্য ভারতীয় ক্রিকেটের এই বেহাল, ছন্নছাড়া অবস্থা। কোনওভাবেই তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে বোর্ড সভাপতি করা যাবে না। বড় ভুল হবে। একই সঙ্গে দাবি ওঠে, যোগ্যতার নিরিখে দশ মাসের জন্য সৌরভকেই সভাপতি করা হোক। তাতে বোর্ডের ভাবমূর্তি ফিরবে। এক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করেন সিএবি সচিব অভিষেক ডালমিয়া। কারণ, তাঁর সঙ্গে উত্তর-পূর্ব রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার প্রতিনিধিদের সম্পর্ক খুবই ভালো। জগমোহন ডালমিয়া প্রথম থেকেই উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে ক্রিকেটের প্রসারের জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন। তাই অভিষেকের প্রস্তাব মেনে উত্তর-পূর্ব রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার প্রতিনিধিরা সভাপতি পদে সৌরভকে সরাসরি সমর্থন জানানোয় ছবি বদলে যায়। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন অনুরাগ ঠাকুর। তাতে অবশ্য কোনও লাভ হয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি বিজেপি’র এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। দিল্লির নির্দেশেই শ্রীনির পালের হাওয়া কেড়ে সর্বসম্মতিক্রমে বোর্ড সভাপতি হিসাবে সৌরভের নাম গৃহীত হয় শেষ মুহূর্তে। যা দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, সৌরভের বোর্ড সভাপতি হওয়ার পিছনে কি কোনও রাজনৈতিক যোগ রয়েছে? সৌরভ কি ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’র হয়ে প্রচার করবেন? এহেন প্রশ্ন সোজা গ্যালারিতে পাঠিয়ে মহারাজ বলেন, ‘রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার প্রতিনিধিদের দ্বারা আমি নির্বাচিত। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। কখনই রাজনীতিতে আসার অভিপ্রায় ছিল না। ভবিষ্যতেও নেই। আমাকে কোনও দল প্রচারের প্রস্তাব দেয়নি। ’ বোর্ড সভাপতি হওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন সৌরভকে। এই প্রসঙ্গে মহারাজ বলেন, ‘দিদিকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। উনি সব সময় ভালো কাজে পাশে থেকেছেন।’
এদিকে, বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, ‘কে বোর্ড সভাপতি হবে, সেটা আমি ঠিক করিনি। তবে আমি দীর্ঘদিন গুজরাত ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। যে কেউ আমার সঙ্গে দেখা করতেই পারে। সৌরভের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎকারের ভুল ব্যখ্যা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে সৌরভের সঙ্গে আমার কোনও কথা হয়নি। এটা সৌরভের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। বিজেপি যোগ দেওয়ার প্রস্তাব ওকে কখনও দেওয়া হয়নি। তবে বিজেপিতে সৌরভ যোগ দেবে না কখনও বলেনি। বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের জন্য আমাদের কোনও নতুড় মুখের প্রয়োজন নেই।’
২০০০ সালে গড়াপেটার নাগপাশ থেকে তিনি ভারতীয় দলকে টেনে বের করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই ভারতীয় দলে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছিল। ২০১৩ সালে আইপিএলে স্পষ্ট-ফিক্সিং কাণ্ডের পর ভারতীয় ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তারপর গঙ্গা দিয়ে গড়িয়েছে অনেক জল। মামলা-মোকদ্দমায় স্লথ হয়েছে ক্রিকেটের গতি। লোধা কমিটির প্রস্তাব মেনে বোর্ডের নতুন সংবিধান তৈরি হয়েছে। মূলত এন শ্রীনিবাসন, রাজীব শুক্লার মতো বিতর্কিত কর্তাদের দূরে রাখাই ছিল লোধা কমিটির মূল লক্ষ্য। বকলমে শ্রীনিরা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বোর্ড রাজনীতিতে আনলেও, ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক, দক্ষ প্রশাসক সৌরভ শীর্ষ পদে বসায় ভারতীয় ক্রিকেটের শাপমুক্তি হবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
এর আগে বাংলা থেকে বোর্ডের সভাপতি হয়েছেন জে সি মুখার্জি, এ এন ঘোষ, বিশ্বনাথ দত্ত ও জগমোহন ডালমিয়া। বাংলা থেকে পঞ্চম ব্যক্তি হিসাবে ভারতীয় ক্রিকেটের শীর্ষ পদে বসছেন সৌরভ। কয়েকদিন আগেই তিনি সিএবি’র সভাপতি পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে সেই পদ তাঁকে ছাড়তে হবে। পাশাপাশি স্বার্থের সংঘাত এড়াতে অন্যান্য দায়িত্ব থেকেও আপাতত সরে দাঁড়াতে হবে মহারাজকে। স্বার্থের সংঘাত নিয়ে সৌরভ জানান, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এই ব্যাপারে আমাদের চিন্তাভাবনার দরকার রয়েছে।’
সৌরভের মুকুটে যোগ হল আরও একটি পালক। প্রাক্তন অধিনায়ক হিসাবে বোর্ড সভাপতি হওয়ার দ্বিতীয় নজির স্থাপন করলেন তিনি। ৬৫ বছর আগে ভিজির মহারাজকুমার (১৯৫৪ সালে) বোর্ড সভাপতি হয়েছিলেন। তিনি খেলেছিলেন তিনটি টেস্ট।