নয়াদিল্লি, ১৯ অক্টোবর: লোকসভা ভোটের পর দুই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। দু’টোতেই বিজেপির শাসন চলছে। ফলে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া তুলে শাসক দলকে জোর ধাক্কা দেওয়ার সুযোগ ছিল কংগ্রেসের। কিন্তু মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার ভোটে যেন হারার আগেই হেরে বসে আছে কংগ্রেস। বিজেপির স্টার ক্যাম্পেনাররা যেখানে দুই রাজ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, সেখানে নিশ্চুপ কংগ্রেস। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদি দুই রাজ্যের ভোটে ২৫টিরও বেশি প্রচার সভা করেছেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চিহ্নিত রাহুল গান্ধী সভা করেছেন মেরেকেটে সাতটি। বস্তুত, দুই রাজ্যের প্রচারে দেখা যাচ্ছে না গান্ধী পরিবারকে।
গত লোরসভা ভোটের আগেই সক্রিয় রাজনীতিতে এসেছিলেন সোনিয়া তনয়া প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভারও পেয়েছিলেন। ভোটপ্রচারে তাঁকেই তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করেছিল কংগ্রেস। কংগ্রেস কর্মীদের আশা ছিল, প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীর মতো দেখতে হওয়ায় প্রিয়াঙ্কা ম্যাজিক টলিয়ে দেবে মোদি-মিথকে। বস্তুত, প্রিয়াঙ্কা জাদুতে ভর করেই লোকসভার ভোট বৈতরণী পেরিয়ে যাওয়ার আশা ছিল কংগ্রেসের। প্রিয়াঙ্কা চেষ্টা করেননি এমন নয়। দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে ভোট প্রচারে গিয়েছিলেন। যেখানে গিয়েছেন ভিড় হয়েছিল ভালোই। অন্তত ভিড়ের নিরিখে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ভালোই টেক্কা দিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। কিন্তু ভিড় ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত হয়নি। ড্যাং ড্যাং করে জিতে যায় বিজেপি। প্রিয়াঙ্কার মূল দায়িত্বে থাকা পূর্ব উত্তরপ্রদেশেও খারাপ ফল করে কংগ্রেস। এমনকী আমেথিও হেরে যান কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। এবার সেই প্রিয়াঙ্কা একেবারে নিশ্চুপ। কয়েকটি ট্যুইটার ছাড়া তাঁর আর কোনও সক্রিয়তা নেই। দুই রাজ্যে একটিও প্রচার সভায় আসেননি প্রিয়াঙ্কা।
রাহুল গান্ধী গত লোকসভা ভোটে প্রচার সভার নিরিখে টেক্কা দিয়েছিলেন স্বয়ং মোদিকে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুয়াহাটি থেকে আমেদাবাদ প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন রাহুল। কিন্তু ফল মেলেনি। ভোটের ফলে আশাহত রাহুল দলের সভাপতির পদই ছেড়ে দেন। লোকসভার বিরোধী দলনেতাও হতে চাননি। তারপর থেকে রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে না রাহুলকে। ভোটের ফলের পর বেশ কিচুদিন কাটিয়েছেন বিদেশেও। এবার দুই রাজ্যে সাকুল্যে সাতটি সভা করেছেন রাহুল গান্ধী। এমনকী শেষ দিনেও যেখানে মোদি দু’টি সভা করেছেন, সেখানে রাহুলের দেখা নেই।
রাহুল দায়িত্ব ছাড়ায়, দলের হাল ধরতে বাধ্য হয়েছেন সোনিয়া গান্ধী। এমনিতে তিনি অসুস্থ। গত লোকসভা ভোটে রায়বেরিলিতে একটাই প্রচার সভা করেন তিনি। তার আগে ডিসেম্বরের বিধানসভা ভোটের সময় অসুস্থতার জন্য প্রচারে নামেননি তিনি। ভোটের পর দলকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছেন। রাহুলের জায়গায় সভানেত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা বড় বাধা সোনিয়ার। এবার একমাত্র হরিয়ানার মহেন্দ্রগড়ে ভোটের প্রচারে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু শুক্রবার একেবারে শেষ মুহূর্তে তা বাতিল হয়ে যায়। অর্থাৎ দুই রাজ্যের ভোটে একটিও সভা করলেন না সোনিয়া। ফলে মোদির ২৫ প্লাস সভার তুলনায় গান্ধী পরিবারের মোট সভার সংখ্যা মাত্র সাত।
স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীরা অবশ্য এটাকে হারের আগে হার বলতে নারাজ। তাঁদের অভিমত, রাহুলজি তো দুই রাজ্যে সভা করেছেন। তাই গান্ধী পরিবারের অনুপস্থিতির তত্ত্বও একেবারেই ঠিক নয়। বিধানসভা ভোটের দায়িত্বে রয়েছেন রাজ্য নেতারাই। কিন্তু কংগ্রেসের অন্দরের খবর, এবার দলের মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দল এতটাই তীব্র যে, প্রিয়াঙ্কা-রাহুলরা বেশি সভা করার আগ্রহ হারিয়েছেন। যেমন মহারাষ্ট্রে সঞ্জয় নিরুপম ও হরিয়ানায় অশোক তনওয়ারের মতো প্রথমসারির নেতারা প্রকাশ্যেই বিদ্রোহ করেছেন।