সংবাদদাতা, রানাঘাট: কালীনারায়ণপুরে বউকে নিয়ে পালানোর অজুহাত দেখিয়ে চলন্ত ট্রেনে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। রেল স্টেশনে ট্রেন ঢোকার মুখে ঘটনাটি ঘটে। ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে জিআরপি। তাদের থেকে ছিনতাই হওয়া লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার হয়েছে। জিআরপি জানিয়েছে, ধৃতদের নাম মিঠুন দেবনাথ, সুরজ মণ্ডল ও ইসমাইল দফাদার।
জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বউকে নিয়ে পালানোর অজুহাত দেখিয়ে অভিনব কায়দায় ছিনতাই করার পরিকল্পনা করেছিল ছিনতাইকারীরা। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর বাসিন্দা প্রতাপ মণ্ডল ব্যবসা সূত্রে সোমবার তাঁর মালিকের তিন লক্ষেরও বেশি টাকা একটি ব্যাগে ভরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। চিকিৎসার জন্য মালিকের এক আত্মীয়র বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। তিনি সোমবার সন্ধ্যায় বনগাঁ শান্তিপুর লোকাল ট্রেনে করে যাচ্ছিলেন। প্রতাপবাবু বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর ট্রেন রানাঘাট ছেড়ে কালীনারায়ণপুর থামে। সেই সময় তিন জন লোক হঠাৎ করে আমার কাছে এসে বলে, তুই আমার বউ নিয়ে পালিয়েছিস। এই কথা বলে আমার কলার ধরে টানাটানি শুরু করে। ততক্ষণে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। ওরা এই ঘটনা বলায় ট্রেনের অন্য যাত্রীরা কেউ হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেননি। কারণ, বিনা কারণে আমাকে দোষারোপ করা হচ্ছে তা তাঁরা প্রাথমিকভাবে বুঝতে পারেননি। তাই আমাকে বাঁচাতে কেউ আসেনি। তাঁরা ভেবেছিলেন, বিষয়টি আমাদের নিজেদের।
আমিও তাঁদের মুখ থেকে বউ নিয়ে পালানোর বিষয়টি শুনে প্রথমে হতবাক হয়ে যাই। এরপর তারা দরজার সামনে আমাকে টেনে নিয়ে যায়। একটু পরে বুঝতে পারি, ওরা মিথ্যা গল্প ফেঁদে আমার টাকার ব্যাগ ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করছে। কিন্তু, ততক্ষণে ওরা আমার ব্যাগ টেনে নিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে পালায়। নামার সময় আমাকেও ধাক্কা মারে। আমি কোনওক্রমে দরজার রড ধরে নিজেকে সামলে নিই। এরপর হবিবপুর স্টেশনে নেমে জিআরপিকে বিষয়টি জানাই। জিআরপি জানায়, এখানে কিছু হবে না। বিষয়টি জানিয়ে রানাঘাট স্টেশনে অভিযোগ করতে বলে জিআরপি।
এরপর ওই রাতেই রানাঘাট স্টেশনে এসে জিআরপির কাছে গোটা ঘটনার কথা খুলে বলি। জিআরপি অভিযোগ পাওয়ার পরই ঘটনার তদন্ত শুরু করে। রানাঘাট জিআরপি সোমবার রাতেই মিঠুন দেবনাথ, সুরজ মণ্ডল ও ইসমাইল দফাদারকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে ছিনতাই যাওয়া বেশিরভাগ টাকাই উদ্ধার হয়েছে। প্রতাপবাবু আরও বলেন, আমার মনে হয়, ছিনতাইকারীরা বনগাঁ থেকেই আমাকে ফলো করছিল। তারা জানত, আমার কাছে এতগুলি টাকা রয়েছে। সমস্ত খবর জেনেই ওরা অপারেশনে নামে। সেইমতো ট্রেনে এসে আমার উপর মিথ্যা অভিযোগ তুলে আক্রমণ করে।
বনগাঁ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে আমার ছবি তুলে এদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। আমি কী রঙের জামা পড়ে আছি সেটা জানাতে। গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের মধ্যে মিঠুন দেবনাথের মুখ চিনি।
অন্যদিকে, জিআরপির সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে একজন ধরা পড়ে পুলিসের হাতে। এরপর তাকে জেরা করে বাকি দু’জনের হদিশ পাওয়া যায়। প্রতাপবাবু শান্তিপুরের সারদাপল্লির বাসিন্দা অখিলকুমার দাসকে টাকা দিতে আসছিলেন। অখিলবাবু বলেন, আমি হায়দরাবাদে চিকিৎসা করাতে যাব। সেই কারণে বনগাঁর এক আত্মীয় আমার কাছে টাকা পাঠাচ্ছিলেন। এর মধ্যে এই ঘটনা ঘটে যায়। এতগুলি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা শুনে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ি। তবে জিআরপিকে ধন্যবাদ। জিআরপি জানিয়েছে, ঘটনার পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।