কোনও কিছুতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভাববেন। শত্রুতার অবসান হবে। গুরুজনদের কথা মানা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুফল ... বিশদ
ধনঞ্জয় মণ্ডলের বাড়ি অণ্ডাল ব্লকের উখড়ার তিলিপাড়ায়। আর পাঁচটা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মতোই তাঁর জীবন। বাড়িতে রয়েছেন নব্বই বছরের বৃদ্ধ বাবা রসময় মণ্ডল। বিএড পাশ করা কর্মপ্রার্থী এক মেয়ে সুস্মিতা মণ্ডল ও গৃহবধূ স্ত্রী সুলেখা মণ্ডলও রয়েছে। ছেলে গোপীকারঞ্জন মণ্ডল আইটিআই পাশ করে ভিন্ন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। এক সময় বাড়ির অবস্থা ভালো থাকলেও এখন অনটনের ছবি স্পষ্ট। রুজি রুটির টানে প্রতিদিন ২০ কিলোমিটার সাইকেল করে একটি ছোট কোম্পানিতে কাজ করেন ধনঞ্জয়বাবু। কিন্তু অভাবের আড়ালে গ্রামের এই সরল মানুষের মধ্যে রয়েছে বিরল প্রতিভা। তিনি ডায়েরি লেখক। তিনি ডায়েরি খুলে বলে দিতে পারেন ১৯৭৮ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত এই এলাকায় কোন মানুষের কবে, কী কারণে মৃত্যু হয়েছে। তিনি অনায়াসে বলে দিতে পারেন কোন অভিনেতা কোন সালে কোন এলাকায় যাত্রা করতে এসেছিলেন। কোথায় কোন নেতা জনসভা করেছেন বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে।
৪২ বছরে এমন কোনও ঘটনা নেই যা তাঁর ডায়েরিতে নেই। ধনঞ্জয়বাবুর জন্ম ১৯৬৫ সালে। ১৯৭৮ সালে ৩০ জুলাই পার্শ্ববর্তী দক্ষিণখণ্ড গ্রামে এক মহিলা বিদ্যুতের তারে হাত দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ছাত্র ধনঞ্জয় তা লিপিবব্ধ করে রাখেন। তখন থেকেই শুরু তাঁর ডায়েরি লেখা। পড়াশোনা ছাড়লেও ছাড়েননি ডায়েরি লেখা। বিভিন্ন ঘটনা তিনি লিখে রাখা শুরু করেন। যা লোক মুখে ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। এখন স্থানীয় মানুষ সবাই জেনে গিয়েছেন এলাকার কোনও তথ্য চাইলে পাওয়া যাবে তাঁর কাছে। যুব বয়সের ধনঞ্জয়ের আরও একটি শখ ছিল তারকাদের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করে রাখা। কিন্তু শুধু অটোগ্রাফ সংগ্রহ নয়, তাঁর বিবরণও তিনি লিখে রাখতেন। তাই তো প্রজেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের অটোগ্রাফ দেখিয়ে বলতে পারেন ১৯৮৫ সালে তিনি এখানে এসেছিলেন। তাঁর কাছে রয়েছে চিন্ময় রায়, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় থেকে বহু অভিনেতার অটোগ্রাফ।
তবে বাড়িতে অনটন থাকায় ধনঞ্জয়বাবুর চার দশকের এই পরিশ্রম ভালোভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই পুরনো ডায়েরির প্রতি নজর পড়েছে ইঁদুরের। কোনওরকমে বস্তা বন্দি করে রাখছেন তাঁর সৃষ্টিকে। কখনও বা বস্তা খুলে স্মৃতি আওড়ান। মানুষের প্রয়োজনে তথ্য দিয়ে সরবরাহ করেন। শুধু ঘটনা নয়, এই এলাকার ইতিহাসও তাঁর ডায়েরিতে বন্দি। অনেকে ডায়েরি পড়তে নিয়ে যান। কিন্তু আজও তিনি প্রয়োজনীয় সম্মান পাননি বলে অনেকের আক্ষেপ।