বিদ্যার্থীদের উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে মধ্যম ফল আশা করা যায়, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। ব্যবসাতে যুক্ত ... বিশদ
বালুরঘাট শহরের দিপালীনগর এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ সরকার। তিনি কুমারগঞ্জ ব্লকের বিএলআরও অফিসে কাজ করেন। লকডাউনের পরে দীর্ঘদিন তো অফিস বন্ধই ছিল। তবে সম্প্রতি রাজ্য সরকারের নির্দেশ মতো ফের খুলেছে অফিস। এবার তো যেতেই হবে। কিন্তু দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় এখনও পথে নামেনি বেরসরকারি বাস, সরকারি বাস চললেও তা পর্যাপ্ত নয়। তাছাড়া সবাই যে যানবাহনে চাপছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাতে চাপতে সায় দিচ্ছে না মনও। বিশ্বজিৎবাবুর নিজস্ব বাইকও নেই। তাই এই সংক্রমণের ভয়ে সপ্তাহে পাঁচ দিন সাইকেল নিয়েই বালুরঘাট থেকে কুমারগঞ্জ পাড়ি দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ রোজ সাইকেলে যাচ্ছেন তিনি। সকাল হলেই অফিসের সময়ের ঢের আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। ফিরতে ফিরতেও রাত। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, আমি আপাতত কারও সঙ্গে কোনও গাড়িতেই যাচ্ছি না। করোনা সংক্রমণ যে কোনওভাবে হয়ে যেতে পারে। বাড়িতে ছোট মেয়ে রয়েছে। আর আমার গাড়ি বা বাইকও নেই। তাই আমি সাইকেল নিয়ে মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস পড়েই অফিসে যাচ্ছি। যতদিন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হচ্ছে, ততদিন এভাবেই যাতায়াত করব। অন্যদিকে, হিলি থেকে কয়েকজন রাজমিস্ত্রী রোজ বালুরঘাটের মঙ্গলপুরে সাইকেল চালিয়ে কাজ করতে আসছেন। সকাল বেলা বেরিয়ে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পেটের টানে বালুরঘাটে আসছেন। সন্ধ্যা হলে কাজ সেরে ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে। ভরসা সেই সাইকেলই। এবিষয়ে বদুন বর্মন নামে এক মিস্ত্রি বলেন, আমরা লকডাউনের মধ্যে প্রথম দিকে বেশ কিছুদিন কাজ করতে পারিনি। পরে লকডাউন শিথিল হওয়ায় কাজ করার অনুমতি পেয়েছি। গাড়ির জন্য কাজের জায়গায় যেতে সমস্যা হচ্ছিল। তাই আমরা কয়েকজন মিলে সাইকেল নিয়েই কাজ করতে যাচ্ছি।
বাদামাইলের বাসিন্দা শুভেন্দু বসাক বালুরঘাটের একটি দোকানে কাজ করেন। দোকান খুলে গেলেও আগে গাড়ির সমস্যার জন্য বালুরঘাটে আসতে পারছিলেন না। এদিকে দিনের পর দিন কামাই করলে চাকরি নিয়েও টানাটানি পড়তে পারে। অগত্যা পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে সাইকেল কিনে ফেলেন। এরপর থেকে রোজ সাইকেল চালিয়ে শহরে কাজ সেরে সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। ১২ কিলোমিটার দূরত্ব এভাবেই অতিক্রম করছেন। তিনি বলেন, এখন অটো বা টোটো চলছে। বাস পরিষেবাও চালু হবে শুনেছি। কিন্তু সংক্রমণের ভয়ে সেসব যানবাহন এখন ব্যবহার করব না।
এছাড়াও কুমারগঞ্জ ব্লকের পবিত্র বর্মন বলেন, আমি বালুরঘাটের একটি বেরসরকারি সংস্থায় কাজ করি। এখন সাইকেল করে বাড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটার পথ যাতায়াত করছি।
এবিষয়ে জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক সন্দীপ সাহা বলেন, আশা করছি শীঘ্রই যানবাহন পরিষেবা স্বাভাবিক হবে। আর সমস্যা হবে না।
জানা গিয়েছে, এই সময় শহরের একাধিক সাইকেলের দোকানেও পুরনো সাইকেলের বিক্রি বেড়ে গিয়েছে। বেশি দাম দিয়ে নতুন কেনার বদলে কাজ মেটাতে অনেকেই পুরনো সাইকেল কিনতে আসেছেন। এক সাইকেলের দোকানদার নৃপেন মহন্ত বলেন, অনেকেই পুরনো সাইকেলের খোঁজ করতে আসছেন। আগে কখনও এত অল্প সময়ে এত মানুষ আসেননি।