কর্মপ্রার্থীরা বেশ কিছু সুযোগের সংবাদে আনন্দিত হবেন। বিদ্যার্থীরা পরিশ্রমের সুফল নিশ্চয় পাবে। ভুল সিদ্ধান্ত থেকে ... বিশদ
শুক্রবার সকালে ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল কানপুরে। হাইওয়ে আগে থেকেই পিছল ছিল। বৃষ্টিতে যা আরও পিছল হয়ে ওঠে। বিকাশকে নিয়ে কনভয় ছুটছে হাইওয়ে ধরে। পিছল পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে কনভয়ের একটি গাড়ি। ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সুযোগ বুঝে আহত এক কনস্টেবলের হাত থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নেয় বিকাশ। সেটা পুলিসকে তাক করে পালানোর চেষ্টা করে সে। বারবার সতর্ক করা হয়। কিন্তু কথা শোনেনি বিকাশ দুবে। উল্টে গুলি চালাতে শুরু করে। বাধ্য হয়ে প্রাণ বাঁচাতে পাল্টা গুলি চালায় বাহিনী। তাতেই মৃত্যু। এ কোনও স্ক্রিপ্টের লেখা নয়। কানপুরের আইজি মোহিত আগরওয়ালের সোজাসাপটা বিবৃতি। এবং স্পষ্টতই তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন ‘ভুয়ো এনকাউন্টার’-এর অভিযোগ।
আপাতদৃষ্টিতে আগরওয়ালের বিবৃতি নিটোল। কোনও ফাঁকফোঁকর নেই। কিন্তু তাতেও কি আর বিতর্ক থেমে থাকে? কারণ, শুরুটা যে বিকাশের পাঁচ শাগরেদকে একের পর এক এনকাউন্টারে মেরে ফেলার মধ্য দিয়ে! তারপর উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরে বিকাশের ‘গ্রেপ্তার’। কানপুর হাইওয়ে গাড়ি দুর্ঘটনা। এনকাউন্টার। নিহত বিকাশ। আপাত ‘নিরীহ’ এই কয়েকটা ঘটনার সঙ্গে তথ্য-বিভ্রান্তির অভিযোগ তুলে বেশ কিছু গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।
তবে ঘটনা হল, বিকাশকে এনকাউন্টারের নিখুঁত চিত্রনাট্যের সঙ্গে অদ্ভুত মিল ‘খাকি’র। আর তাতেই শুরু হয়েছে এত বিতর্ক। যোগী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের তোপ। কানপুরের অন্ধকার জগতের একটি অধ্যায়ের শেষ হতে না হতেই শুরু আর এক অধ্যায়ের। সেটা অবশ্যই রাজনীতির। বিরোধীরা কোমর বেঁধে এনকাউন্টারের ‘ময়নাতদন্তে’ সিবিআই নামানোর দাবি তুলেছেন। সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে সেই তদন্ত হোক। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের কটাক্ষ, ‘গাড়ি না ওল্টালে যোগীর গদি উল্টে যেত।’ মুখ খুলেছেন মায়াবতী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। আদিত্যনাথকে খোঁচা দিয়ে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর ট্যুইট—‘যোগীজির এনকাউন্টার-রাজে কারও মৃত্যু হলে তা ন্যায়ের!’ সরগরম নেটদুনিয়াও।
বিরোধীদের সব অভিযোগ খারিজ করে যোগীর পুলিসের অবশ্য যুক্তি, ‘দুষ্কৃতীর হুমকির মুখে পুলিস কি পুষ্পবৃষ্টি করবে! আত্মরক্ষার্থেই গুলি চলেছে।’ এই যুক্তিজালে ঢোকানো হয়েছে দুর্ঘটনার তত্ত্বকেও। কীভাবে? কানপুর-দেহাত সীমান্তের টোলপ্লাজার কাছে কনভয় থামিয়ে বিকাশের গাড়ি হঠাৎ বদলানো হয়। এর কারণ কী? কেন ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছতেই পুলিসের তরফে মিডিয়া টিমকে আটকানো হল? প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউ দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করেননি কেন? ৬০টিরও বেশি মামলার খাঁড়া যে দুষ্কৃতীর মাথায় ঝুলছে, তাকে হাতকড়া ছাড়াই গাড়িতে তোলার অনুমতি দিল কে? এমন হাজারো প্রশ্নের ঝড় ইতিমধ্যে বইতে শুরু করেছে।
বিকাশ-কাণ্ডে যোগীরাজ্যের পুলিসের ভূমিকা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কারণ, বিকাশের সঙ্গে পুলিস ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের যোগ নিয়ে গুঞ্জন ক্রমেই বাড়ছিল। স্বচ্ছ তদন্ত করলে হিমশৈলের খোঁজ মিলবে না তো? এমনকী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিকাশের সুরক্ষার দাবি জানিয়ে শীর্ষ আদালতে একটি জনস্বার্থ মামলাও দায়ের হয়। এরপরই আচমকা বিকাশের মৃত্যুর খবর। প্রিয়াঙ্কার প্রশ্ন, ‘অপরাধী না হয় খতম হল। কিন্তু তাকে এতদিন যাঁরা নিরাপত্তা দিয়ে এসেছিল, তাঁদের কী হবে?’