কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট। দূর ভ্রমণের সুযোগ। অর্থ প্রাপ্তির যোগ। যে কোনও ... বিশদ
তবুও মার্কিন পরিবেশবিদদের কেউ দাবি তোলেন, বায়ুদূষণের বিষয়টি ‘হেলথ্ ইমার্জেন্সি’ হিসেবে গুরুত্ব দিক ভারত সরকার। কারও আবার মত, বিষয়টি শুধুই নীতি নির্ধারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না, সেই নীতি রূপায়ণের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতার জায়গাও তৈরি করতে হবে। বায়ুদূষণ নিয়ে সারা বিশ্বে তুমুল আলোচনার পরেও ভারতে যেভাবে রাজনৈতিক প্রচারে বিষয়টি ব্রাত্যই থেকেছে, তাতে স্বাভাবিকভাবেই নতুন সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় কতটা গুরুত্ব পাবে বায়ুদূষণ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পরিবেশবিদদের একাংশের মধ্যে।
হেল্থ এফেক্ট ইনস্টিটিউটের (এইচইআই) ‘স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার রিপোর্ট, ২০১৯’ অনুযায়ী, বায়ুদূষণের কারণে শুধু ভারতেই প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছেন। যাঁদের মধ্যে ৫১.৪ শতাংশের বয়স ৭০ বছরের কম। রিপোর্ট জানাচ্ছে, যে হারে বায়ুদূষণ হয়েছে দু’বছর আগে পর্যন্ত, তাতে বিশ্বে মানুষের আয়ু গড়ে অন্তত ২০ মাস করে কমে গিয়েছে। যা ধূমপানের ফলে মানুষের গড় আয়ু কমার সময়কে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছে। দূষণের বিপজ্জনক মানচিত্র থেকে ছাড় পায়নি মহানগর কলকাতাও। আরও উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে ওই রিপোর্ট। জানিয়েছে, অপুষ্টি, যথেচ্ছ অ্যালকোহল সেবন, ম্যালেরিয়া, এমনকি, পথ দুর্ঘটনার চেয়েও বিশ্বে ফিবছর বেশি মানুষের মৃত্যু হয় বায়ুদূষণে। দেখা গিয়েছে, রান্নাবান্নার জন্য যেখানে কাঠ, কয়লার মতো কঠিন জ্বালানির ব্যবহার অনেকটাই বেশি, সেই ভারত ও চীনের মতো দেশ দু’টিতে বায়ুদূষণের জন্য মৃত্যুর সংখ্যাটাও বেশি। বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ যে কাঠ ও কয়লার মতো কঠিন জ্বালানি, তা দিয়ে ভারতে রান্নাবান্না করেন ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ। আর কঠিন জ্বালানিতে চীনে রান্নাবান্না করেন ৩২ শতাংশ মানুষ।
স্বাভাবিকভাবেই এ দেশে উত্তরোত্তর প্রকোপ বাড়ছে বায়ুদূষণের। প্রতি বছর দিল্লিই সব থেকে বেশি দূষণের কবলে পড়ে। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন হয়েছে কলকাতা। অথচ, সম্প্রতি পাঁচ বছরে (২০১৪-১৯) দূষণ নিয়ন্ত্রণের ‘সাফল্য’ নিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক, তাতে বলা হয়েছে, দেশের ৭৩টি শহরে ২৪ ঘণ্টা বাতাসের গুণমান পরীক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে ১৩৭টি ‘মনিটরিং স্টেশন’। উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ায় দিল্লিতে বায়ুদূষণের মাত্রা ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ ও ২০১৮ সালে অনেকটাই কমে গিয়েছে। যদিও পরিবেশবিদদের একাংশের বক্তব্য, শুধু সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে বায়ুদূষণের মাপকাঠি বিচার করলে হবে না। বায়ুদূষণের নিরিখে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি আগে স্বীকার করে নিতেই হবে। কে না জানে, ‘ওয়ার্ল্ড হেলথ্ অর্গানাইজেশন’-এর বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সেই রিপোর্ট, যা ২০১৮ সালে ‘আপডেট’ করা হয়েছিল। তাতে বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার উপস্থিতির নিরিখে বিশ্বের প্রথম সারির শহরগুলির মধ্যে ভারতের ১৪টি শহর জায়গা করে নিয়েছিল। শুনলে অবাক হবেন, ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম’ চলাকালীন আন্তর্জাতিক সমীক্ষাতেও বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে দূষণ-তালিকায় ১৭৭ নম্বরে ঠাঁই পেয়েছিল ভারত। পরিবেশবিদদের একাংশ বলছেন, দেশের পরিবেশের কী অবস্থা, এই সব তথ্যেই তা স্পষ্ট। বারবার সতর্ক করতে ওয়াশিংটন থেকে নয়াদিল্লি ছুটে যাচ্ছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের আতঙ্কের কথা শুনে মনে পড়ে যাচ্ছে আমেরিকান সেই প্রবাদ: ‘যখন শেষ গাছটি কেটে ফেলা হবে, শেষ মাছটি খেয়ে ফেলা হবে, শেষ জলাধারটি বিষাক্ত হবে, তখন বুঝবে টাকা খাওয়া যায় না।’