নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: শপথগ্রহণে আরাধ্য দেবতার নাম নেওয়ায় বাধা! বুধবার তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের শপথগ্রহণে এমনটাই অভিযোগ উঠল। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যসভার শপথে তাঁকে মতুয়াদের আরাধ্য দেবতা হরিচাঁদ-গুরুচাঁদের নাম নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয়েছে। এজন্য স্বভাবতই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এই তৃণমূল সাংসদ। মতুয়া সমাজের এই প্রতিনিধি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকারের পাশাপাশি মোদি-শাহের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। সংসদ ভবনে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের চেম্বারে শপথ নেওয়ার পর বাইরে বেরিয়ে এসে অভিযোগের সুরে বলেন, ‘এ কোন দেশে বাস করছি? নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা মুখে তো খুব নারী সম্মানের কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবে অপমান করেন। তাই নরেন্দ্র মোদি ফের ক্ষমতায় এলে নারীর সম্মান বলে আর কিছু থাকবে না।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘কেন আমার আরাধ্য দেবতা হরিচাঁদ-গুরুচাঁদের নাম নিয়ে শপথ নিতে পারব না? কেন আমাকে দু’বার করে শপথ নিতে হল? দ্বিতীয়বার ঈশ্বরের নামে বলতে হল। বিজেপির এমপিরা তো শপথে নিজেদের দেবতার নাম নিলেন। তখন তো বাধা এল না?’ এরপরই ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘দিল্লিতে দাঁড়িয়ে মোদি-শাহকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, হরিচাঁদ-গুরুচাঁদের এই অপমান মতুয়ারা ভোটের বাক্সে বিজেপিকে বুঝিয়ে দেবেন। সিএএ ইস্যুতেও যেভাবে বাংলায় মতুয়াদের মনে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, ভোটবাক্সে তারও জবাব মিলবে।’ এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘এদিন শ্রীশ্রীহরিচাঁদ-গুরুচাঁদের নাম নেওয়ায় মমতাবালা ঠাকুরকে শপথগ্রহণের মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া হয়। যিনি এই কাজটি করেছেন সেই জগদীপ ধানকার বাংলা বিরোধী বলেই এখন উঁচু পদ পেয়েছেন। এই ঘটনায় মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে।’
এদিন বাংলায় শপথগ্রহণ করেন মমতাবালা। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভায় দলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। এদিন তৃণমূলের আর এক সাংসদ সাগরিকা ঘোষও শপথ নেন। শপথগ্রহণে মহারাষ্ট্রের বিজেপি এমপি অজিত মাধবরাও গোপচড়ে এবং কর্ণাটকের নারায়ণ কৃষ্ণসা ভাডগে ‘জয় শ্রীরাম’ বলেন। জোড়েন ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগানও।
এই প্রসঙ্গে মমতাবালা ঠাকুর বলেন, ‘২০১৫ সালে লোকসভার সাংসদ হিসেবে শপথের সময় আরাধ্য দেবতার নাম নিয়েছিলাম। বাধা আসেনি। বিজেপির শান্তনু ঠাকুরও মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। তিনিও ২০১৯ সালে তাই করেছিলেন। তাহলে এবার কেন বাধা দেওয়া হল?’ সেই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, ‘নরেন্দ্র মোদি মতুয়া ভোটকে প্রভাবিত করার চেষ্টায় বনগাঁয় ঠাকুরবাড়িতে গিয়েছিলেন। বড় মা বীণাপানিদেবীর পা ছুঁয়ে প্রণামও করেছিলেন। আর এখন সেই ঠাকুরেরই নাম নিতে দেওয়া হল না। তাহলে কি মতুয়াদের জন্য মোদির ওই শ্রদ্ধাভক্তি লোকদেখানো ছিল?’