কোনও কিছুতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভাববেন। শত্রুতার অবসান হবে। গুরুজনদের কথা মানা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুফল ... বিশদ
মঙ্গলবার ঘড়ির কাঁটায় বিকেল পাঁচটা। সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ কলেজ মোড়। মাস্ক ঢাকামুখে সবেমাত্র শিফটিং ডিউটি শেষ করে বাস ধরার অপেক্ষায় এক তরুণ। প্রশ্ন ছিল, এখন আইটি সেক্টরের ছবিটা কী? দীর্ঘ লকডাউনের প্রথম পর্যায়ে ওয়ার্ক ফ্রম হোম, আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ছাঁটাই। উত্তরেই বোঝা গেল করোনার প্রভাব পড়েছে শিল্পতালুকে। তরুণের সঙ্গে কথার ফাঁকে উঠে এল, একাধিক আইটি কোম্পানির এখন কাজ চলছে একই অফিসে... শিফট শুধু আলাদা আলাদা। অর্থাৎ খরচ কমানো। সময় বদলাচ্ছে। করোনার দাপট এখন অনেকটাই স্তিমিত। আবার আইটির বাজার ঘুরে দাঁড়াবে, এমনটাই আশা করছে তরুণ প্রজন্ম। কলকাতার অনতিদূরে সল্টলেকে ডানা মেলেছে তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র। পরিসরে কতটা বেড়েছে নাকি থমকে রয়েছে, ভোটের শিল্পায়ন নিয়ে কাটাছেঁড়ায় উঠবে সেই প্রসঙ্গ। গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের উদ্যোগে হয়েছে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে। আর তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে রাজ্যের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ সিলিকন ভ্যালি। কর্মসংস্থানে জোর দিয়েছে সরকার। সল্টলেকে আন্তর্জাতিক মানের কনভেনশন সেন্টার, আইটি পার্ক আসন্ন ভোটযুদ্ধের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বাংলা কি বিনিয়োগের ডেস্টিনেশন হবে? উত্তর খোঁজে অপেক্ষায় জনতা।
উত্তর শহরতলির ভোটে কিন্তু জেশপ কারখানার প্রসঙ্গ উঠতে বাধ্য। ২০১৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জেশপ কারখানা অধিগ্রহণের বিষয়টি রাজ্যের তরফে ঘোষণা করা হয় বিধানসভায়। কিন্তু জেশপ কারখানা খোলা নিয়ে কেন্দ্রের গড়িমসির দিকে আঙুল তুলেছে তৃণমূল। ৩৫৫ জন কর্মচারীকে মাসিক ১০ হাজার টাকা করে দিচ্ছে রাজ্য। আদৌ কি কারখানা খুলবে, এই প্রশ্ন এখনও দমদমের মানুষের।
রাজনৈতিক দিক থেকেও দমদম, বিধাননগর, রাজারহাট, নিউটাউন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। একটা সময় দমদম ছিল সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি। আর আজ দমদমের দেওয়াল লিখনে স্পষ্ট, হয় পদ্ম নয় জোড়াফুল। লোকসভার ভোটে ফলাফলে দেখা গিয়েছে, দমদম বিধানসভায় এগিয়ে তৃণমূল। তবে ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। আর লোকসভা ভোটের ফলে রাজ্যের দুই মন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র রাজারহাট-গোপালপুর ও বিধাননগরে এগিয়ে রয়েছে পদ্ম শিবির। হাওয়াটা একটু অন্য রাজারহাট-নিউটাউন কেন্দ্রে। এখানকার বিধায়ক অবশ্য ‘দলবদলু’। একটা সময় তাঁর সাংগঠনিক শক্তি ভালোই ছিল। যদিও এখন আর সেসব নিয়ে একেবারেই ভাবিত নয় শাসক দল। বরং উল্টে আত্মবিশ্বাসী। আর দেখা গিয়েছে, সিপিএমের হাতে থাকা দমদম উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে কিছুটা হলেও অ্যাডভান্টেজ তৃণমূল। রাজারহাট এলাকায় মতুয়া ভোট রয়েছে। তা আদৌ লোকসভা ভোটের মাত্রা নেবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ভুগছে বিজেপি। তাই মতুয়া সমর্থন ভোটযন্ত্রে টানতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়ে পর্যন্ত সেই সম্প্রদায়ের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন করাতে হয়েছে।
সময় বদলেছে। থেকে গিয়েছে একটা শব্দ—‘দমদম দাওয়াই’। সমঝে দেওয়ার প্রসঙ্গ এলেই রাজ্যজুড়ে এই একটি শব্দই যথেষ্ট। এমন কোড ওয়ার্ড বাংলার ভোট রাজনীতি খুব একটা পায়নি। এবার কিন্তু নতুন আমদানি বাজার মাতাচ্ছে... ‘খেলা হবে’। দমদম জুড়ে এই লেখাই এখন ফ্লেক্স ভরিয়েছে। আট থেকে আশি, সবার মুখেই এখন এক কথা ‘খেলা হবে’।
কার হার, আর কার জিত... উত্তর মিলবে ভোটের বাক্সে। রাজহারহাট-নিউটাউনের বুকে ‘সিন্ডিকেট’ শব্দটা কিন্তু এখনও হারিয়ে যায়নি। দৌরাত্ম্য কমলেও চোরাগোপ্তা চলছেই। আবার এটাও উঠে এসেছে সিন্ডিকেট বাহিনীর ‘জামা বদল’। পাঁচতারা হোটেল, মল, হাইরাইজ বিল্ডিং গজিয়ে উঠেছে রাজারহাট, নিউটাউনে। জমি কেনা-বেচা নিয়ে খবর হয়েছে। বিধাননগর পুরনিগম এলাকাও সাজানো-গোছানো। উন্নত হয়েছে তিন দমদম পুর এলাকা। তবে বিরোধীরা বলছে, শুধুই ‘নীল-সাদা’। সিপিএম বলছে, বাম সরকারের আমলের পর আর উন্নয়ন হয়নি। তৃণমূলের বক্তব্য, শেষ ১০ বছর শহর দেখেছে প্রকৃত উন্নয়ন। বিজেপি যখন দমদমের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদের আমলের উন্নয়ন নিয়ে বুলি আওড়াচ্ছে, তখন শাসক মনে করিয়ে দিচ্ছে, লেকটাউনে থাকা বড় ঘড়িটাই বলে দেয়, এখন সময় তৃণমূলের...।