কোনও কিছুতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভাববেন। শত্রুতার অবসান হবে। গুরুজনদের কথা মানা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুফল ... বিশদ
সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। চারবারের তৃণমূল বিধায়কের বয়স ৮৯ বছর। ঘোষণা করে দিয়েছেন, সহকর্মীদের দাবি মেনে এবারও ভোট ময়দানে নামতে ইচ্ছুক তিনি। বললেন, ‘কোনওবার আমি টিকিটের জন্য দলকে বলিনি। এবারও বলব না। তবে সহকর্মীরা নাছোড়বান্দা, আমি যাতে নির্বাচনে লড়াই করি। ফলে দল প্রার্থী করলে অবশ্যই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’ কিন্তু প্রার্থী তালিকায় নাম না থাকলে? অশীতিপর নেতার জবাব, ‘কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার পর ঠিক করব।’ মন্তব্য ভেবে দেখার মতো! তবে, হাওড়া দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক ব্রজমোহন মজুমদার সবটাই ঠেলে দিয়েছেন নেতৃত্বের দিকে। বয়স তাঁর ৮১। বললেন, ‘মূল্যায়ন দল করবে।’ চার কুড়ি পেরিয়ে যাওয়া জটু লাহিড়ি হাওড়া শিবপুরের বিধায়ক। বয়স এখনও তাঁর কাছে সংখ্যামাত্র। স্পষ্ট বললেন, ‘নিশ্চয়ই দাঁড়াব।’
বয়স থামাতে পারে না তাঁদের। পাশাপাশি দুই কেন্দ্র—রাসবিহারী ও বালিগঞ্জ। দুঁদে রাজনীতিক হিসেবে পরিচিতি তাঁদের... শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়। দু’জনে পুরো ফিট। শোভনদেববাবুর বয়স ৭৭ বছর, সুব্রতবাবু ৭৩। শোভনদেববাবু বললেন, ‘২২ বছর ধরে এলাকার মানুষের সেবা করে চলেছি। এখনও সাড়ে চার কিলোমিটার পদযাত্রায় হাঁটি। শরীর যত দিন সুস্থ আছে, সেবা করে যাব। যখন বুঝব পারছি না, নিজেই সরে দাঁড়াব।’ ১৯৭১ সালে প্রথমবার বিধায়ক হন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সাফ কথা, ‘শরীর পুরো ফিট। হাফ সেঞ্চুরিটা করে যেতে চাই।’
গোবিন্দ নস্কর, জয়ন্ত নস্কর, রেজ্জাক মোল্লা, সাধন পান্ডে সহ তৃণমূলের একাধিক বর্ষীয়ান বিধায়ক রয়েছেন। বিজেপিতে তেমন কেউ না থাকলেও সত্তরোর্ধ্ব বিধায়ক রয়েছেন বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসে। যেমন আরএসপির বিশ্বনাথ চৌধুরী। বয়স ৭৮ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বালুরঘাটের বিধায়ক তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘সারাদিনই মানুষের জন্য বিভিন্ন কাজকর্মের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। সারাদিনই ছুটে চলেছি। তবে প্রার্থী হব কি না, তা পার্টি ঠিক করবে।’ দুর্গাপুর পূর্বের সিপিএম বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়ও ৭৭ পেরিয়েছেন। বললেন, ‘প্রার্থীপদ নিয়ে মতামত নেই। পার্টির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। পার্টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নতুনদের জায়গা করে দিতে হবে। সেটাই শেষ কথা।’
কংগ্রেস বিধায়কদের মধ্যে বর্ষীয়ান আব্দুল মান্নান, অসিত মিত্র, আবু হেনা। লালগোলার বিধায়ক আবু হেনা বলেন, ‘১৯৯১ সাল থেকে টানা বিধায়ক রয়েছি। বয়স ৭০ পার করলেও শরীর সুস্থ হয়েছে। দল প্রার্থী করলে নির্বাচনে দাঁড়াব।’ হাওড়ার আমতার বিধায়ক অসিত মিত্র কিন্তু বললেন, ‘মানুষের ইচ্ছে এবারও আমাকেই দল প্রার্থী করুক।’
নির্বাচনে প্রার্থী ঠিক করে দল। তবে অনেক ক্ষেত্রেই নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কথা দলকে জানান নেতারা। যেমন জানিয়ে দিয়েছেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। দু’বারের বিধায়ক। বয়স ৮০। দলকে জানিয়েছেন, শিক্ষকতাই ছিল কেরিয়ার। রাজনীতি নয়। রাজনীতিতে আর আকর্ষণও নেই। কাজেই হ্যাটট্রিক করতেই হবে, এমন মানসিকতা নিয়ে চলেন না তিনি। তাই হয়তো তাঁর জায়গা নেবেন নতুন কেউ। প্রতিবারই তৈরি হয় শূন্যস্থান। তা কিন্তু শূন্য থাকে না। কেউ না কেউ ভরাট করেই ফেলে। প্রবীণদের সামনে রেখে ঝাড়াই বাছাই হয় নতুনদের বায়ো ডেটা। তবে সবার আগে বিচার হয় পাবলিকের পালস। মানুষ কী চাইছে... ভোটার কী চাইছে। এই সারমর্ম যে দল বুঝতে পারে, ভোটযুদ্ধে তাদেরই জয়। ভাবতে হবে পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে... এই ভাবনাটাই যে রাজনীতির শেষ কথা।