সংবাদদাতা, বনগাঁ: কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর। সোমবার এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২০১৬ সালের গোটা প্যানেল বাতিল করে দেন বিচারপতি। এই নিদের্শের পর মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার মামাভাগ্নে গ্রামে গিয়ে দেখা গিয়েছে, থমথম করছে গোটা অঞ্চল। কয়েক বছর আগেই মামা ভাগ্নে শক্তিগড়পল্লির নাম মুখে মুখে হয়ে উঠেছে ‘মাস্টার’ গ্রাম। বাগদার ‘সৎ রঞ্জন’ ওরফে চন্দন মণ্ডলের সৌজন্যে গ্রামের একাধিক মহিলা-পুরুষ শিক্ষকতার চাকরিতে ঢুকেছিলেন। গ্রামের বহু কাঁচা বাড়ি হয়ে উঠেছিল পাকা। মোটা টাকার চাকরি পেয়ে যাওয়ার পর গ্রামের ছেলেদের বিয়ের ‘দর’ বেড়ে গিয়েছিল মেয়েদের বাবাদের কাছে। সেই গ্রাম আজ থমথম করছে। গ্রামের এক যুবক প্রাথমিকে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিলেন। সেই চাকরি ছেড়ে তিনি ২০১৬ সালে নবম-দশম প্যানেলে নতুন চাকরি পেয়ে যোগ দেন। তাঁর জ্যাঠামশাই সন্তোষকুমার মণ্ডল বলেন, ‘অযোগ্যদের জন্য যোগ্যদেরও ভোগান্তি হল। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।’ অশোক রায় নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের এখানে এজেন্ট ছিল চন্দন মণ্ডল। তার থেকে সব টাকা আদায় করা উচিত। এই এলাকার অনেকেই আদালতের নির্দেশের পর চাকরি হারিয়েছেন। লোকলজ্জার কারণে সে কথা বলতে পারছেন না।’ এলাকার এক মহিলা বলেন, ‘অনেকেই জমি, বাড়ির গাছপালা বিক্রি করে চাকরি নিয়েছিলেন। তাঁরা এখন কোথায় যাবেন?’ জানা গিয়েছে, চাকরি পাওয়ার পর অনেকেই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি-গাড়ি কিনেছেন। চাকরি চলে যাওয়ার পর তাঁদের চিন্তা, কী করে লোন শোধ হবে। এই বিষয়টি নিয়ে বর্তমান রাজ্য সরকারকে দুষছে বিজেপিকে। বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, ‘যাঁরা চন্দন মণ্ডল ও তৃণমূল নেতাদের টাকা দিয়ে চাকরি নিয়েছিলেন তাঁদের উচিত সেই সব নেতাদের বাড়িতে গিয়ে ধর্না দেওয়া। সুদে আসলে সেই টাকা ফেরত নিক তাঁরা।’ বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘চন্দন মণ্ডলের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।’ ২০১৩ সাল থেকে খবরের শিরোনামে ছিলেন সৎ রঞ্জন। বহু বেকার যুবক-যুবতীর তাঁর বাড়িতে আনাগোনা চলত। টাকার বিনিময়ে চাকরি কিনতে দুর থেকেও আসতেন অনেকে। চাকরি বিক্রির ব্যবসায় স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দিতেন চন্দন। তাঁর দৌলতে মামাভাগ্নে শক্তিগড়পল্লির বহু বাসিন্দা টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ।