কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর ঈর্ষার কারণে সম্মানহানি হবে। ব্যবসায়ীদের আশানুরূপ লাভ না হলেও মন্দ হবে না। দীর্ঘ ... বিশদ
জাপটপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জয় পালের ছোট্ট সোনার দোকান রয়েছে নদীয়ার শান্তিপুর থানার নৃসিংহপুর এলাকায়। লকডাউনের ফলে বন্ধ হয়ে যায় দোকান। তৃতীয় দফায় সোনার দোকান খুলছেন অনেকে। তাই নিজেও দোকান খোলার জন্য ফেরিঘাটে গিয়ে জানতে পারেন, অত্যাবশ্যকীয় জিনিস ছাড়া কোনও কিছুই পারাপার হচ্ছে না। তাই তাঁকে ফেরি পারাপারের অনুমতি দেওয়া হয়নি। সঞ্জয়বাবু ছাড়াও কালনার অনেকে শান্তিপুরের বিভিন্ন চালের আড়ত সহ অন্যান্য ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাঁরাও নদী পেরিয়ে যেতে পারছেন না। কিন্তু সঞ্জয়বাবুর সংসারে বৃদ্ধ বাবা-মা ছাড়া স্ত্রী ও ভাই রয়েছে। প্রতিদিন সংসারের খরচও যথেষ্ট। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার লকডাউনে কোনওরকমে সংসার চালালেও তৃতীয় দফায় সোনার দোকান খোলার ইঙ্গিত মেলায় উদগ্রীব হয়ে ওঠেন সঞ্জয়বাবু। কিন্তু কীভাবে দোকানে যাবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এদিকে সংসারেও অনটন শুরু হয়েছে। বাধ্য হয়ে কলার ভেলায় ভাগীরথী নদী পার হবেন বলে ঠিক করেন। তৈরি করে ফেলেন একটি কলার ভেলা। কিন্তু নদীতে তা নিয়ে যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছিল। তারপর ঠিক করেন সাঁতরে নদী পার হবেন। নদী পারাপারে ঝুঁকি রয়েছে অনেক। কিন্তু তাঁর কাঁধে রয়েছে সংসারের দায়িত্ব। বাবা-মা ও অন্যান্যদের মুখে অন্ন তুলে দিতে হবে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গামছা পরে নাইলনের ব্যাগে জামা প্যান্ট, দোকানের চাবি সহ দরকারি জিনিস ভরে একটি টিউবের সাহায্যে সাঁতরে ভাগীরথী পারাপার শুরু করেন। স্রোত ঠেলে পৌঁছে যান শান্তিপুরের নৃসিংহপুর ঘাটে। টিউবটি নদীর পারে পরিচিত জায়গায় রেখে ব্যাগ থেকে শুকনো জামা প্যান্ট পরে চলে যান দোকানে। এভাবেই তৃতীয় দফার লকডাউন শুরুর পর প্রতিদিন সকাল ৯ টায় বেরিয়ে বিকেলে একইভাবে বাড়ি ফিরছেন সঞ্জয়বাবু।
নদীর পাড়ের বাসিন্দা শৈলেন দাস, জয়দেব পাল তাঁর এই সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে তাঁর নাম রেখেছেন ‘লকডাউনের বিদ্যাসাগর’। তাঁরা মনে করেন, প্রশাসন বা ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষের উচিত তাঁকে ফেরি পারাপারের অনুমতি দেওয়া।
সঞ্জয়বাবু বলেন, দোকানের রোজগারের উপরই পুরো সংসার চলে। দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ থাকায় অভাব নেমে এসেছে সংসারে। বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টিউব নিয়ে সাঁতার কেটে প্রতিদিন আসা যাওয়া করছি। কিছু আয় হলে সংসারের একটু সুরাহা হবে।