সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মক্ষেত্রে বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার ... বিশদ
১৯৭৭ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত একটানা জিতে আসা হবিবপুর আসনে ২০০৬ সাল থেকেই সিপিএমের ভোটের গ্রাফ নিম্নমুখী। ২০০১ সালেও প্রায় ১৮ হাজার ভোটে জিতে আসা হবিবপুরে ২০০৬ সালে সিপিএমের জয়ের ব্যবধান নেমেছিল প্রায় অর্ধেকে। ২০১১ এবং ২০১৬ সালে আরও কমেছে জয়ের ব্যবধান।
বিগত দশ বছরের হিসাব বলছে হবিবপুরে ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু সিপিএম। তাই তাদের বড্ড বেশি দরকার ছিল কংগ্রেসের সঙ্গ। কিন্তু মুখ ফিরিয়েছে কংগ্রেস। এক সময়ের লালদুর্গ হবিবপুরে সিপিএম লোকসভা, বিধানসভা তো বটেই এমনকী শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনেও এই অঞ্চলে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে তারা। যদিও ব্যর্থতা ঢাকতে সিপিএম বারবার রিগিং তত্ত্ব খাড়া করেছে। কিন্তু সেই যুক্তি প্রায় উড়িয়ে দিয়ে হবিবপুরের দুটি পঞ্চায়েত সমিতিই (হবিবপুর ও বামনগোলা) তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করেই দখল করেছে বিজেপি। ফলে এই মুহূর্তে সিপিএমের হাতে হবিবপুরে অতীত সাফল্যের চর্বিতচর্বণ করা ছাড়া রয়েছে শুধুমাত্র খাতা, পেন্সিল। তার উপরে শেষ মুহূর্তে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়ে দেওয়ায় সমস্যা তীব্রতর হয়েছে সিপিএমের।
অবশ্য তা মানতে নারাজ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র। তাঁর একই দাবি, ইতিহাসের ধারাপথেই ফের হবিবপুরে জয়ী হবে সিপিএম। তবে সিপিএমকে ধর্তব্যের মধ্যেইও আনতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি দুলাল সরকারের দাবি, লড়াই তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে হলেও জিতবে রাজ্যের শাসক দলই। ভুলেও সিপিএমকে এক ইঞ্চিও গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। অন্যদিকে বিজেপি জেলা সভাপতির দাবি, হবিবপুরে প্রায় জিতেই গিয়েছে বিজেপি। লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে। ‘সিপিএম পিকচারেই নেই,’ দাবি তাঁর। আর সিপিএমের পাশ থেকে সরে যাওয়া কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মোস্তাক আলমের দাবি, কে কী ভাবছে তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমাদের লক্ষ্য দলের সংগঠন বৃদ্ধি। এতে সিপিএমের কী লাভ-ক্ষতি হল তা ওরাই বলতে পারবে। আমাদের সংগঠনটা করতে হবে তো।
এদিকে অতীত পরিসংখ্যানে ক্ষয়িষ্ণু সিপিএমের ছবিটা স্পষ্ট ফুটে উঠছে। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম হবিবপুরে পেয়েছিল ৪৩.৯৪ শতাংশ ভোট। বিপরীতে কংগ্রেস ও তৃণমূল জোট পেয়েছিল ৪৬.৫৫ শতাংশ ভোট। জোটের কারণে বহুদিন পরে হবিবপুরে পিছিয়ে পড়েছিল সিপিএম। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হবিবপুরে ২২৫৮ ভোটে কোনও মতে জয়ী হলেও সিপিএম পেয়েছিল মোট প্রদত্ত বৈধ ভোটের মাত্র ৩৭.৬০ শতাংশ। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূল ও বিজেপি পৃথকভাবে লড়েছিল। বহুমুখী লড়াইয়ে সিপিএমের ভোট শতাংশ আরও কমে দাঁড়ায় ২৭.৭০ শতাংশ। কংগ্রেস পেয়েছিল মাত্র ২১ শতাংশের কাছাকাছি ভোট। তবে তাক লাগিয়ে তৃণমূল গত লোকসভা নির্বাচনে হবিবপুরে ছিল দ্বিতীয় স্থানে। পেয়েছিল ২৪ শতাংশ ভোট। লক্ষ্যণীয়ভাবে এই নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ১৯ শতাংশ ভোট। বিশ্লেষণ করে দেখলেই বোঝা যায় বহুধাবিভক্ত বিরোধী জোটের সুযোগ নিয়ে এই নির্বাচনে হবিবপুরে সামান্য এগিয়ে ছিল সিপিএম। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল সিপিএম। তারপরেও সেবার তারা ২০১১ সালে প্রাপ্তভোটের চেয়ে বেশ কিছুটা কম ভোট পেয়েছিল।