বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
সালটা ১৯৮৩। ওই বছর ২৫ অক্টোবর পুনের ইয়ারওয়াড়া সেন্ট্রাল জেলে ফাঁসি হয় রাজেন্দ্র জাক্কাল, দিলীপ সুতার, শান্তারাম কানহোজি জগদীপ এবং মুনআওয়ার হারুন শাহের। একসঙ্গেই ফাঁসিতে লটকানো হয় চারজনকে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই চারজন খুনিই ছিল ছাত্র। মহারাষ্ট্রের নামজাদা অভিনব কলা মহাবিদ্যালয়ের কমার্শিয়াল আর্ট বিভাগের ছাত্র ছিল তারা। তুলির আঁচড় টানা হাতে নৃশংস হত্যালীলা চালিয়ে গিয়েছিল রাজেন্দ্র-শান্তারামরা। একের পর খুন করে দেহ লোপাট করে ফেলত এই চার ছাত্র। পুনে পুলিসের তথ্য বলছে, ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ১৯৭৭ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ১০টি খুন করেছিল তারা। শিল্পী-পড়ুয়াদের এমন নৃশংসতার কথা জানতে পেরে সে সময় তাজ্জব হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। ঠিক যেভাবে নির্ভয়াকাণ্ডে কেঁপে উঠেছিল দেশ-বিদেশ। বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়া নিয়েও দুটি নৃশংসতম ঘটনার অদ্ভুত মিল রয়েছে। ‘যোশী অভায়ঙ্কর’ হত্যামামলায় বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লেগেছিল সাত বছর ন’মাস ন’দিন। নির্ভয়াকাণ্ডে চার ধর্ষকের ফাঁসির দিন ধার্ষ হয়েছে ২২ জানুয়ারি। আর সেটা কার্যকর হলে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হবে সাত বছর এক মাস ছ’দিনে।
পুনের পুলিস সূত্রে খবর, রাজেন্দ্র-শান্তারামদের প্রথম শিকার ছিল তাদের এক সহপাঠী। ১৯৭৬ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রসাদ হেগড়ে নামে ওই সহপাঠীকে অপহরণ করে তারা। অভিনব কলা মহাবিদ্যালয়ের পাশেই প্রসাদের বাবা একটি ছোট্ট রেস্তরাঁ চালাতেন। প্রসাদ করে অপহরণ করে মুক্তপণ চায় শান্তারামরা। সেই সঙ্গে প্রসাদকে একটি সাদা কাগজে লিখতে বাধ্য করা হয় যে, সে স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে চলে এসেছে। সে আর বাড়ি ফিরবে না। প্রসাদের লেখা কাগজটি নেওয়ার পরই তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করে শান্তারামরা। পরে তার দেহ পেশোয়া পার্কের লেকের মধ্যে ফেলে দেয় তারা। এর বছর ১৯৭৬ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ১৯৭৭ সালের ২৩ মার্চ পর্যন্ত আরও ন’টি খুন করে পাঁচ ছাত্রের ওই দলটি। অর্থাৎ পাঁচ মাসে ন’টি খুন! তদন্তে নেমে লেজেগোবরে অবস্থা হয় পুলিসের। খুনিদের খোঁজে মরিয়া হয়ে ওঠে তারা। এদিকে, একের পর এক খুনের ঘটনায় পুনে শহরজুড়েই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যা ছ’টা বাজলেই দোকান-পাট সব বন্ধ করে দিতেন ব্যবসায়ীরা। সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বালাসাহেব রুনওয়াল নামে এক সমাজকর্মী বৃহস্পতিবার বলছিলেন, ‘আমি তখন কিশোর। খুনের আতঙ্কে ছ’টা বাজলেই এলাকার প্রতিটি বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ হয়ে যেত। ওই সময়ের পর বাড়ির বাইরে পা রাখা বারণ ছিল। সে এক ভয়ঙ্কর সময় কেটেছে!’ শান্তারামদের খুনের ধরণ দেখেও শিউরে উঠত গোটা পুনে।
পুনের অবসরপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার শারদ অবস্তির কথায়, ‘আমি তখন ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত। এই ধারাবাহিক খুনের ঘটনায় পুলিস নাজেহাল হয়ে পড়েছিল। বেশ চাপ বাড়ছিল চারিদিক থেকে। শেষে সিট গঠন করে তদন্ত শুরু হয়। তার পর ধরা পড়ে ওই পাঁচ ছাত্র।’ ‘যোশী অভায়ঙ্কর’ হত্যামামলায় সুহাস চন্দক নামে এক অভিযুক্ত রাজসাক্ষী হওয়ায় মুক্তি পায়। বাকি চারজনের এক সঙ্গে ফাঁসি হয় ইয়ারওয়াড়া সেন্ট্রাল জেলে। রাজেন্দ্র-দিলীপদের সাজা ঘোষণার দিন আদালতে হাজির ছিলেন অবস্তি। স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘সেদিন সাজা শুনতে বিশাল মানুষের জমায়েত হয়েছিল আদালত চত্বরে। জোরদার করা হয়েছিল নিরাপত্তা। তাতেও ভিড় সামলানো সম্ভব হয়নি। পুলিসকে শুভেচ্ছা জানাতে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে।’