রাহুল চক্রবর্তী, কলকাতা: মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার, ফেস শিল্ড, টুপি—করোনা সচেতনতায় এগুলি এখন নিত্যসঙ্গী। এর সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে ভাইরাসকে খতম করার ‘কার্ড’। দিন কয়েক ধরে নীল রঙের একটি কার্ড নিয়ে আলোচনা চলছে বিস্তর। বিশেষত রাজনৈতিক নেতাদের গলায় পরিচয়পত্রের মতো ওই কার্ড ঝুলতে দেখা যাচ্ছে। তবে সেটি পরিচয়পত্র নয়। করোনার হাত থেকে রেহাই পেতে নতুন রক্ষাকবচ। এই কার্ড নিয়ে গুজবও রটেছে। বলা হচ্ছে, এই কার্ড গলায় ঝুলিয়ে রাখলে নাকি করোনা ভাইরাস ধারেকাছে ঘেঁষতে পারবে না। শৌচালয়ে জীবাণুনাশক বা সুগন্ধির যে পাউচ ঝোলানো থাকে, অনেকটা সেই ধরনের। প্যাকেটের গায়ে লেখা মেড ইন জাপান। হাত জীবাণুমুক্ত করতে এখন ঘন ঘন স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হচ্ছে। তেমনই এই কার্ড গলায় ঝুলিয়ে দিনভর কাজ করছেন অনেক জনপ্রতিনিধি, নেতা থেকে সাধারণ মানুষ। রাজ্যের শাসকদলের দমদমের এক নেতার কথায়, সাবধানের মার নেই। গলায় কার্ড ঝোলানোর অর্থ, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে একটু বাড়তি সতর্কতা, এই যা। কার্ড নিয়ে তাঁর ব্যাখ্যা, স্যানিটাইজার জাতীয় কিছু রয়েছে কার্ডের মধ্যে। যা করোনার জীবাণু মারতে পারে। আশপাশে দু’ফুট পর্যন্ত জীবাণুর নো-এন্ট্রি। কার্ডের মধ্যে আটটি ছিদ্র রয়েছে। যা দিয়ে নির্গত হচ্ছে জীবাণুনাশক। একটা কার্ডের কার্যকারিতা এক মাস, এমনটাই উল্লেখ রয়েছে। দাম ৫০০ টাকার মধ্যে।
তবে এই কার্ড নিয়ে একেবারেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন না চিকিৎসকরা। বরং ক্ষতির সম্ভাবনাকেই তুলে ধরছেন। চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন, কার্ডের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। এটি ভাইরাস দমনে কোনও উপকারে আসবে না। বরং এর মধ্যে ক্লোরিন রয়েছে। যা দীর্ঘ সময় পরে থাকলে চোখ-মুখ জ্বালা ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। কার্ডের গায়ে কোথাও লেখা নেই, এটি করোনা ভাইরাসকে ধ্বংস করে। প্রায় একই বক্তব্য এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসক শুভেন্দু বাগের। তিনি বলেন, এ ধরনের কোনও সমীক্ষা রিপোর্ট নেই যে, ক্লোরিন দিয়ে করোনা ভাইরাসকে মারা যায়। ক্লোরিনে ব্যাকটেরিয়া মরতে পারে, কিন্তু ভাইরাস নয়। চিকিৎসকদের মূল্যায়ন, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ব্যাকটেরিয়া মারার ক্ষেত্রেও এটি পরীক্ষিত নয়। ফলে ওই কার্ডের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যিনি ব্যবহার করবেন, তাঁর শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।