নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ২৫ জুন, ১৯৮৩। ঐতিহাসিক লর্ডসে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপ ফাইনাল। মোহিন্দর অমরনাথের বলটা মাইকেল হোল্ডিংয়ের প্যাডে লাগার পর আম্পায়ারের আঙুল উঠতেই আবেগের মহাস্রোতে ভেসে গিয়েছিল ভারতীয় জনতা। তরুণ অধিনায়ক কপিল দেবের নেতৃত্বে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের ঘোর যেন কাটতেই চাইছিল না। দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে আনার সেই স্মৃতি আজও অমলিন। বৃহস্পতিবার ছিল প্রুডেনশিয়াল কাপ জয়ের ৩৭তম বর্ষপূর্তি। আর এই বিশেষ দিনে আরও একবার আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন বিশ্বজয়ী নায়করা। মহার্ঘ সেই ট্রফি হাতে নিজের একটি ছবি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করে কপিল দেব লেখেন, ‘একটা অবিস্মরণীয় দিনের আজ ৩৭ বছর পূর্ণ হল।’ সুনীল গাভাসকর, দিলীপ বেঙ্গসরকর, কীর্তি আজাদ, মদনলালরা ঐতিহাসিক সাফল্য সম্পর্কে রোমাঞ্চ প্রকাশের পাশাপাশি দলনায়ক কপিলকে ভরিয়ে দিয়েছেন প্রশংসায়। বিশেষ করে গাভাসকর যা বলেছেন, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সানির মতে, কপিল দেবই ভারতের সর্বকালের সেরা ম্যাচ উইনার। বিশ্বকাপ জয়ের স্মৃতিরোমন্থন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘তিরাশির বিশ্বকাপ জয় ছিল ভারতীয় ক্রিকেটের প্রথম মাইলস্টোন। এই দিনটা এলেই লর্ডসের সেই সোনালি বিকেলের স্মৃতি মনের মধ্যে ঝিলিক দিয়ে ওঠে।’ ১৯৮৩-র বিশ্বকাপে ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন অধিনায়ক কপিল। নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন সহ-যোদ্ধাদের। সম্ভবত সে কথা মাথায় রেখেই গাভাসকর বলেন, ‘ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে কপিল দেবই সেরা ম্যাচ উইনার। কারণ সে ব্যাটিং ও বোলিং দুটি ভূমিকাতেই ম্যাচ জেতাতে পারত। দুই বিভাগেই ছিল তার সমান দক্ষতা।’ এরপর কপিলের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের কথা স্মরণ করে সানি জানান, ‘১৯৭৮ সালে কপিলের সঙ্গে আমার প্রথমবার দেখা হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে ফিরে চেন্নাইয়ের চিদম্বরম স্টেডিয়ামের প্রথমবার কপিলের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে খেলেছিলাম, ঘরোয়া ক্রিকেটে। কপিল উইকেটের অনেকটা দূর থেকে বোলিং করছিল, যা দেখে আমি ওকে উইকেটের কিছুটা কাছে এসে বোলিং করার পরামর্শ দিই। ওর দলের ক্রিকেটাররা ভাবে আমি ওকে স্লেজিং করছি। কপিলই ওর সতীর্থদের ভুল ভাঙায় এবং আমার পরামর্শ মেনে উইকেটের কাছ থেকে বোলিং করে। আর তাতে আমার মুম্বই দলের ব্যাটসম্যানদের কাজটা আরও কঠিন হয়ে গিয়েছিল।’
বিশ্বকাপ জয়ী দলের আর এক সদস্য দিলীপ বেঙ্গসরকর বলেন, ‘ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ঘটনা ছিল ওটা। তারপর আর আমাদের পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এক নতুন যুগারম্ভের শরিক হতে পেরে আজও আমি গর্ব অনুভব করি। তবে কপিলই ছিল আসল লোক। গোটা টুর্নামেন্টে অনবদ্য ক্রিকেট খেলেছিল সে। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং সবেতেই আসর মাত করেছিল কপিল।’ কীর্তি আজাদ বলছেন, ‘প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। মনে হচ্ছিল ঘোরের মধ্যে আছি। যেন বিশ্বাই হচ্ছিল না। কপিলের হাতে যখন কাপটা উঠল, তখন বুঝলাম স্বপ্ন নয়, লর্ডসের বুকে যা ঘটেছে, তা সত্যি। আমরা যদি তার কুশীলব হই, তাহলে কপিল ছিল ওই ইতিহাসের মহানায়ক।’ বিশ্বকাপ জয়ী দলের আর এক সদস্য মদনলালের কথায়, ‘সামনে কপিল ছিল বলেই আমরা বিশ্বজয় করতে পেরেছিলাম। ও আমাদের মনে স্বপ্নের বীজ বুনে দিয়েছিল। বিশ্বাস করতে শিখিয়েছিল যে, আমরাও পারি। সত্যিই আমরা পেরেছি।