সংবাদদাতা, রায়গঞ্জ: বিভিন্ন সংগঠন বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে রক্তদান শিবিরের সংখ্যা বাড়লেও সেই অর্থে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রক্তের সঙ্কট মিটছে না। পুজোর পরেও সেই সমস্যা রয়ে গিয়েছে। লকডাউনের মধ্যে রক্ত সঙ্কট চরমে উঠেছিল রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে। সেসময় কোনও সংগঠনের তরফেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছিল না। পরে আনলক পর্ব শুরু হওয়ায় রক্তদান শিবিরের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কমেছে রক্তদাতার সংখ্যা। ফলে রক্ত সঙ্কট মেটানোর জন্য কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রক্তদান শিবিরের সংখ্যা বাড়ালেও খামতি থেকেই যাচ্ছে বলে দাবি করছে কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, করোনা সংক্রমণের আতঙ্কেই শিবিরে রক্তদানে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না অনেক দাতা। করোনা পরিস্থিতির আগে শিবিরের সংখ্যা কম হলেও সেখান থেকে সংগৃহীত রক্তের পরিমাণ বেশি হতো। যেহেতু তাতে যোগ দিতেন অনেক বেশি রক্তদাতা। এখন সে জায়গায় সংখ্যায় শিবির হচ্ছে বেশি। কিন্তু রক্ত আশানুরূপ সংগৃহীত হচ্ছে না। এছাড়া আগে রায়গঞ্জ হাসপাতালে প্রতিদিন যে রক্তের চাহিদা থাকতো, এখন সেটাও অনেকটাই বেড়েছে। কারণ এখন এখানে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, মেডিক্যাল কলেজ হওয়ার পর এখানে রক্তের চাহিদা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এদিকে করোনার ভয়ে রক্তের জোগান বেশ কম। এজন্য রক্তদাতাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলছে ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। এবিষয়ে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক চন্দনা পাত্র বলেন, রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গঠিত হওয়ার পর অবশ্যই রক্তের চাহিদা অনেকটা বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আমরা এই চাহিদা মেটাতে আরও বেশি শিবিরের বন্দোবস্ত করেছি। অনেক শিবির হয়েওছে। তবে সেভাবে রক্তের জোগান নেই। রক্তদাতাদের মধ্যে সচেতনতা না থাকার কারণে সমস্যা হচ্ছে। আমরা যেকোনও উপায়ে সমস্যা মেটানোর জন্য দিনরাত কাজ করছি। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে শুরু করে অন্যান্য সংগঠনও এই রক্ত সঙ্কট মেটাতে এগিয়ে আসছেন। আমরাও চেষ্টা করছি যাতে কোনওভাবেই এই সমস্যা না থাকে।
রায়গঞ্জের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অন্যতম কর্মকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে অনেকেই নিজ উদ্যোগে রক্তদান শিবির করছেন। সেখানে রক্তদাতাদের অভাব চোখে পড়েছে। তাই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমরা বারবার করে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। রক্তদাতাদের সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত উপায় রক্ত নেওয়ার বিষয়ে বোঝানো হচ্ছে। আশা করছি, এই সমস্যা মিটে যাবে। রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে খবর, বর্তমানে ব্লাড ব্যাঙ্কে প্রতিদিন প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ ইউনিট রক্তের চাহিদা থাকে। এই চাহিদাই আগে ছিল ৩৫-৩৮ ইউনিট। ব্লাড ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে মোট ৩২টি শিবির হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। অক্টোবর মাসেও বিভিন্ন জায়গায় শিবিরের আয়োজন করার জন্য আবেদন এসেছে। শিবিরের সংখ্যা বাড়াটা ভালো দিক। কিন্তু আগে যেসব শিবির থেকে ৭০-১০০ ইউনিট রক্ত সংগৃহীত হতো, এখন সেসব জায়গা থেকে মাত্র ৩০-৪০ ইউনিট রক্ত আসছে।