নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রথমবারের রাজনৈতিক সফরে গোয়ায় পা দেওয়ার আগে কোঙ্কন উপকূলের ছোট্ট রাজ্যের বাসিন্দাদের প্রত্যাশা পূরণে ‘বিকল্প’ সরকার গড়ার বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তা নিয়েই বিপুল উন্মাদনা তৈরি হয়েছে ‘গোয়াঞ্চি’র আম জনতার অন্দরে। আলোড়ন শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলেও। আরব সাগর পাড়ের গোয়ায় সম্প্রতি জোড়াফুল শিবিরের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো বাড়ছে। ‘মোদি-শাহসুর মর্দিনী’ মমতাকে ঘিরে নতুন আশা দেখছেন সমুদ্র পাড়ের মানুষ। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস বিধায়ক লুইজিনহো ফেলেইরো তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকে জোড়াফুল শিবিরকে ঘিরে কার্যত জনউন্মাদনা শুরু হয়েছে। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদরা তো বটেই, ‘গোয়ান’ সমাজের সর্বস্তরের বহু বিখ্যাত মানুষ জোড়াফুল শিবিরে নাম লেখাচ্ছেন। গোয়ার রাজনীতির এই আবর্তে আগামী ২৮ অক্টোবর দু’দিনের সফরে সেখানে যাচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তার আগে এদিন টুইট করে মমতা যে বার্তা দিয়েছেন, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। 
কী লিখেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো? মমতা লিখেছেন, ‘আগামী ২৮ অক্টোবর গোয়া সফরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সমস্ত ব্যক্তি, সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলিকে আহ্বান জানাচ্ছি, যৌথ শক্তি দিয়ে বিজেপি এবং তার বিভেদকামী এজেন্ডাকে পরাস্ত করার। গত ১০ বছর ধরে গোয়াবাসী দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।’ গোয়াবাসীর জন্য তৃণমূল সুপ্রিমোর দীপ্ত বার্তা—‘একসঙ্গে আমরা নতুন এক প্রভাতের  সূচনা করতে পারব। গোয়ার মানুষের জন্য একটা নতুন সরকার গড়তে পারব। যে সরকার গোয়াবাসীর প্রত্যাশা পূরণে দায়বদ্ধ থাকবে।’ রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, গত ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৪০টি আসন বিশিষ্ট গোয়ায় ১৭টি আসনে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু মাত্র ১৩টি আসন পাওয়া বিজেপি আঞ্চলিক দুই দল (মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি,এবং গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টি), দুই নির্দল এবং দলবদলু কংগ্রেস বিধায়কদের ভরসায় সরকার গড়ে ফেলে। মুখ্যমন্ত্রী হন মনোহর পারিক্কর। জনমতকে উপেক্ষা করা কংগ্রেসি বিধায়কদের ভূমিকাকে ভালো চোখে দেখেননি গোয়াবাসী। পাশাপাশি মনোহর পারিক্করের মৃত্যুর পরে প্রমোদ সাওয়ান্তকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়ে যে সরকার চালিয়েছে বিজেপি, মানুষের ক্ষোভের পারদ তাতেও চড়তে শুরু করেছে। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এরকম একটা প্রেক্ষিতে বিকল্প সন্ধানে ব্যস্ত গোয়াবাসীর কাছে ‘মরুদ্যান’ হয়ে এসেছে তৃণমূল। জোড়াফুল শিবির সূত্রের খবর, দল সুপ্রিমোর উপস্থিতিতে বিখ্যাত গায়ক লাকি আলি, অভিনেত্রী নাফিসা আলি তৃণমূলে নাম লেখাবেন বলে ঠিক হয়েছে। এমনকী বিখ্যাত ‘র‌্যাপার’ রেমো ফার্নান্ডেজের সঙ্গেও তৃণমূলের কথাবার্তা চলছে। এছাড়াও এক নির্দল সহ তিনজন বিধায়কও এই পর্বে তৃণমূলে নাম লেখাতে পারেন বলে সূত্রের খবর। 
দলনেত্রীর গোয়া সফর যে ‘গোয়াঞ্চি নভি সকাল’ (গোয়ায় নতুন সকাল) হয়েই সামনে আসছে, সেই প্রচারও শুরু করেছে তৃণমূল। দলগতভাবে জোড়াফুল শিবিরের টুইট—‘গোয়া পরিবর্তন চাইছে, চাইছে এক নতুন সকাল। বিজেপি সরকার গোয়ার মানুষকে অবহেলা করেছে। এখন সেই গোয়া দুষ্টচক্রের খপ্পর থেকে নিজের জমি উদ্ধার করতে চাইছে। ভালো দিন আসছে সবার জন্য।’ টুইট বার্তার সঙ্গেই দল সুপ্রিমোর বিজেপি বিরোধী ঝাঁঝালো বক্তৃতার কয়েকটি অংশও ভিডিও আকারে প্রকাশ করেছে তৃণমূল। সেই ভিডিওতে লাইক ও শেয়ারের বন্যা বইছে।  ইতিমধ্যেই নেত্রীর সফরের প্রচারে সেখানে রয়েছেন রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য মানসরঞ্জন ভুঁইয়া। আজ রবিবার সেখানে যাচ্ছেন সৌগত রায়, মহুয়া মৈত্ররা। গোয়ায় রাজনৈতিক এই বাতাবরণ তৈরির মমতার সেনাপতি ডেরেক ও ব্রায়েন তো রয়েছেনই। - ফাইল চিত্র