কর্মপ্রার্থীদের বিভিন্ন দিক থেকে শুভ যোগাযোগ ঘটবে। ব্যবসায় যুক্ত হলে ভালোই হবে। প্রেম-প্রণয়ে নতুনত্ব আছে। ... বিশদ
কৃষি দপ্তরের হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের টেকনোলজি ম্যানেজার (বিটিএম) বরুণ মন্ডল বলেন, সুন্দরবনে প্রচুর জমি রয়েছে, যেখানে জলের অভাবে বোরো ধানের চাষ করা যায় না। ফলে ওইসব জমি পতিত থাকে। তাছাড়া নোনা জমিতে যেকোনও ফসল চাষ করা যায় না। সেক্ষেত্রে বিকল্প ফসল হিসেবে তুলো চাষ করে আয়ের দিশা মিলতে পারে। বোরো ধান চাষে যেখানে প্রচুর জলের প্রয়োজন হয়, সেখানে তুলোয় মে মাস নাগাদ যখন গাছে ফুল আসার সময় হয়, তখন একটি আপতকালীন সেচের ব্যবস্থা করা গেলেই ফলন ঘরে তোলা যাবে। তুলো লবণ সহনশীল, ফলে নোনা মাটিতে এর চাষ সম্ভব। বরং সুন্দরবনের মাটিতে তুলো চাষ করা হলে মাটিতে লবণের মাত্রা কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে। এবং তুলো গাছের ঝরে পড়া পাতা জমির মাটিতে মিশে জৈব কার্বন যোগ হয়। এতে উর্বর হয় মাটি। কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক আগে সুন্দরবন এলাকায় বিকল্প অর্থকরী ফসল হিসেবে তুলো চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, রোগপোকার আক্রমণ এবং বিপণনগত সমস্যার কারণে চাষিরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তাছাড়া তুলো চাষে বাধা হয়ে দাঁড়ায় উন্নত বীজের অভাব। এবছর অবশ্য কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে একেবারে নিখরচায় চাষিদের হাতে তুলোর উন্নত বীজ তুলে দেওয়া হচ্ছে। এ রাজ্যের জন্য তুলোর উন্নত জাতগুলির মধ্যে রয়েছে, এলআরএ৫১৬৬, এটি ১৮০দিনের ফসল। ১৯৮২ সালের হিসেব অনুযায়ী, একরে এই জাতটির গড় ফলন ১০ কুইন্টাল। সুরভী জাতটির ক্ষেত্রে ১৯৯৭ সালের হিসেব অনুযায়ী, একর প্রতি গড় ফলন ৩৫ কুইন্টাল। এটি ১৭০দিনের ফসল। শ্যামলী জাতের ক্ষেত্রে ১৯৬৫ সালের হিসেব অনুযায়ী, অসেচ এলাকায় একরে গড় ফলন ৪ কুইন্টাল। চাষের মেয়াদ ১৮০দিন। বিকাশ জাতটি চাষের মেয়াদ ১৬০দিন। ১৯৮৭ সালের হিসেব অনুযায়ী, একর প্রতি গড় ফলন ২০ কুইন্টাল। সুপ্রিয় জাতটির ক্ষেত্রে একর প্রতি গড় ফলন ১৮ কুইন্টাল (১৯৭৯ সালের হিসেব)। ১৪৫দিনের ফসল। বিক্রম জাতের ক্ষেত্রে ১৯৮১ সালের হিসেব অনুযায়ী, অসেচ এলাকায় একর প্রতি গড় ফলন ৯ কুইন্টাল। ১৬০দিনের ফসল। আমন ধান কাটার পর বা ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত তুলোর বীজ বোনার সময়। কাপাস তুলো যেমন খরা সহনশীল, তেমনই কিছুটা লবণ সহনশীল। বীজের অঙ্কুরোদগমের জন্য কমপক্ষে ১৫ডিগ্রি সেলসিয়াস, ফসলের বৃদ্ধির জন্য ২১-২৭ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন। তুলো ৪৩ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। ফলের বৃদ্ধি এবং ভালো আঁশ তৈরির জন্য দিনে গরম এবং রাতে ঠান্ডা তুলো চাষের পক্ষে অনুকূল আবহাওয়া। সব ধরনের মাটিতেই তুলো চাষ হতে পারে।
বোনার আগে প্রতি কেজি বীজে ২-৩গ্রাম কার্বেন্ডাজিম ৫০ শতাংশ অথবা ম্যানকোজেব কিংবা থাইরাম মাখিয়ে শোধন করতে হবে। প্রতি কেজি বীজে ৪-৫গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি মাখিয়ে বীজ শোধন করা যেতে পারে। জমিতে লম্বালম্বি ও আড়াআড়িভাবে ২-৩টি চাষ দিতে হবে। এর পর মই দিয়ে জমি সমান করে সারিতে খুপি করে প্রতি খুপিতে ১-২টি বীজ বুনতে হবে। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২ ফুট এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১৫ফুট রাখতে হবে। বিঘায় ৫ হাজার তুলো গাছ রাখতে পারলে ভালো। বিঘা প্রতি এক কেজি বীজ লাগে।
জমি তৈরির সময় ৩ কেজি নাইট্রোজেন বা ৬ কেজি ৬০০গ্রাম ইউরিয়া, ৩ কেজি ফসফরাস বা ১৯ কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট এবং ৩ কেজি পটাশিয়াম বা ৫ কেজি মিউরিয়েট অফ পটাশ প্রয়োগ করতে হবে।