গুরুজনের চিকিৎসায় বহু ব্যয়। ক্রোধ দমন করা উচিত। নানাভাবে অর্থ আগমনের সুযোগ। সহকর্মীদের সঙ্গে ঝগড়ায় ... বিশদ
পঞ্জিকা মতে, রাত ১২টা ২৪ মিনিট থেকে শাহিস্নান। কিন্তু তার অনেক আগে থেকেই সাগরের জলে ডুব দেওয়া শুরু হয়ে যায়। কেউ বা মাথায় জল ছিটিয়ে পুণ্য অর্জনের চেষ্টা করছিলেন। কেউ বা গলা জলে দাঁড়িয়ে পুব আকাশের দিকে জোড়হাত করে দাঁড়িয়ে রইলেন। মাহেন্দ্রক্ষণে সাগরতটের ভিড় ক্রমশ বেড়ে গেল। রাত যত গড়াল সেই ভিড় জনসমুদ্রে পরিণত হল। ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ হঠাৎই ধোঁয়ার মতো কুয়াশা গ্রাস করতে শুরু করল সাগরের বালুকাভূমিকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে ঘোলাটে পরিবেশ তৈরি করল। অন্ধকার সাগরের জল অদৃশ্য হয়ে গেল। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা রেড সিগন্যালের টিউব হাতে হুইসল দিতে দিতে ছোটাছুটি শুরু করে করলেন। জলে নামা পুণ্যার্থীদের উদ্দেশে চিৎকার করে বলতে লাগলেন, ‘দয়া করে জল থেকে উঠে আসুন। যে কোনও সময় বিপদ হতে পারে। কুয়াশা বাড়ছে।’
বিপদের ভয় অবশ্য ভক্তিতে টাল খাওয়াতে পারল না। বিপদ বাড়ল অন্যখানে। কুয়াশার তীব্রতায় আত্মীয়-পরিজন থেকে হারিয়ে গেলেন অনেকে। সাগর থেকে স্নান করে উঠে বাড়ির লোকদের দেখতে পেলেন না বালুরঘাটের পূর্ণিমা বসাক। ছোট জারে সাগরের পবিত্র জল হাতে দিকভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করতে লাগলেন তিনি। নাম ধরে জোরে জোরে ডাকতে লাগলেন পরিজনদের। কিন্তু কুয়াশায় ঢাকা বিপুল জনরাশিতে তাঁর চিৎকার বিন্দুমাত্র তরঙ্গ তুলতে পারল না। উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনির মাঝে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। তাঁকে অসহায়ের মতো ঘুরতে দেখে এগিয়ে এল কুইক রেসপন্স টিম। হ্যান্ড মাইকে পূর্ণিমাদেবীর পরিজনদের নাম ধরে ডাকতে লাগলেন তাঁরাও।
কোনও সাড়া মেলার আগেই দুই বৃদ্ধা রেসপন্স টিমের কাছে কেঁদে পড়লেন। হিন্দিতে জানালেন, তাঁরাও হারিয়ে গিয়েছেন। স্নান করতে নেমেছিলেন। পাড়েই বসেছিল পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু এখন কাউকে দেখতে পাচ্ছেন না। তাঁর হাতে হ্যান্ড মাইক তুলে দিলেন রেসপন্স টিমের সদস্য। হিন্দিতে সেই বৃদ্ধা বলতে লাগলেন, ‘রাকেশ কি পাপা। ম্যায় রাকেশ কি মা বোল রহি হুঁ। হামে লে যাও।’ কেউ এল না। তীব্র কুয়াশা এবং জনকলরবের মাঝে রাকেশের মায়ের ঘোষণা মুহূর্তে মিলিয়ে গেল। অন্যদিকে, পুর্ণিমা দেবী বাঁহাত উপরে তুলে পরিজনদের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে কুয়াশার মধ্যে মিশে গেলেন।
এমনই রানাঘাটের স্বপন বিশ্বাস, রায়গঞ্জের নরেন্দ্র মণ্ডল, ভোপালের সুখরঞ্জন, বালেশ্বরের বৃদ্ধা সুখটি সাহুর মতো হাজার হাজার মানুষ সাগরের মানবসমুদ্রে হারিয়ে গেলেন। কুয়াশার তীব্রতা আরও বাড়তে থাকল। লাল সতর্কতা জারি করে উপকূলরক্ষী বাহিনীর জলযান থেকে গভীর সমুদ্রে না যাওয়ার জন্য ঘোষণা চলছিল।
স্নানের পাশাপাশি ভোর থেকেই কপিলমুনির মন্দিরে পুজোপর্ব শুরু হয়। পুণ্যার্থীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মাথা ঠেকালেন মন্দিরে। গঙ্গাসাগরের জলে স্নান করে ‘অমৃতলোকে’র সুবন্দোবস্ত করে কচুবেড়িয়ায় ভেসেল ঘাটের দিকে পা বাড়ালেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। আর গণদেবতার লক্ষ লক্ষ পদচিহ্নতে জাগ্রত হয়ে রইল মহাতীর্থ গঙ্গাসাগর।