কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। উপার্জন ভাগ্য ভালো। কর্মে উন্নতির যোগ আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা মিলবে। ব্যবসা ... বিশদ
ধুবড়ি সহ অসমের মোট ১৪টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৯টিতে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। এনআরসি পর্বে অসমের বিভিন্ন প্রান্তে যে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম এনআরসি থেকে বাদ গিয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে ৭০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটার সম্বলিত ধুবড়ি। ‘ডি’ ভোটার বা ডাউটফুল ভোটার চিহ্নিত করে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর তকমা যাঁদের গায়ে লেগেছে, তাঁদের একটা বড় অংশ ধুবড়ির বাসিন্দা। যার সিংহভাগ সংখ্যালঘু এবং নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ। এমনকী মঙ্গলদই, করিমগঞ্জ, নওগাঁ ও কোকড়াঝাড়ের মতো যে সমস্ত আসনে তৃণমূল প্রার্থী দিয়েছে, সেখানেও এনআরসি’র আগ্রাসনে ত্রস্ত হয়ে রয়েছে মানুষ। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই সমস্ত কেন্দ্রেই ভুক্তভোগী মানুষের সিংহভাগ সংখ্যালঘু এবং নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের। অসমের এই জ্বলন্ত সমস্যা এনআরসি’ই যে তাঁর নির্বাচনী প্রচারের মূল ইস্যু, তা ধুবড়ির ঝগড়ারপার স্টেডিয়ামের সভামঞ্চ থেকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা। এদিন জুম্মাবারে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ধুবড়িতে সভার জমায়েত নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠায় ছিলেন অসম তৃণমূলের নির্বাচনী কমিটির প্রধান গোপীনাথ দাস, প্রার্থী নুরুল ইসলাম চৌধুরীর মতো আরও অনেকে। সভা শুরু হওয়ার আধঘণ্টা আগেও মাঠ ছিল ফাঁকাই। বেলা একটা নাগাদ ধুবড়ির আকাশে যখন চক্কর মারতে দেখা গেল মমতার হেলিকপ্টার, ঠিক তখনই ব্রহ্মপুত্র নদের চরের পাশে জিটিবি রোড ধরে তৃণমূলের পতাকা হাতে কাতারে কাতারে মানুষ মিছিল করে এসে ভরিয়ে দিল স্টেডিয়াম। নেত্রীর হেলিকপ্টার যখন মাটি ছুঁয়েছে, মাঠ তখন কানায় কানায় ভরা।
উপস্থিত জনতার আবেগ, উচ্ছ্বাস আর মুড বুঝেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁর কথায়, এনআরসি’র নামে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে সংখ্যালঘু মানুষ তো রয়েছেনই, রয়েছেন ২২ লক্ষ বাঙালি হিন্দুও। তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, অসমে আমাদের কোনও অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু এনআরসি নিয়ে সাধারণের বিপদের আঁচ পাওয়া মাত্রই এখানে টিম পাঠিয়েছিলাম। ওরা (অসম সরকার) বিমানবন্দর থেকে বের হতেই দিল না। মহুয়া মৈত্র, মতুয়া সঙ্ঘাধিপতি মমতাবালা ঠাকুরের মতো যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের উপর অত্যাচার হল। আমার নামে এফআইআর হল। বলা হল, আমাকে অসমে ঢুকতে দেওয়া হবে না। প্রত্যয়ী মমতার চ্যালেঞ্জ, আজ এসেছি। প্রতিবেশী অসমের মানুষের বিপদে বারবার আসব। ক্ষমতা থাকলে আমাকে আটকে দেখান।
এনআরসি’র বিপদের দিকটি জনতার সামনে যেন মেলে ধরলেন মমতা। বললেন, স্বামীর নাম আছে, স্ত্রীর নেই। বাচ্চার নাম নেই, মায়ের নাম আছে। ভোটার কার্ড আছে, আধার কার্ড আছে, ভোটার তালিকায় নাম আছে, অথচ এনআরসি থেকে বাদ! অদ্ভূত! তৃণমূল সুপ্রিমোর বক্তব্য, এনআরসি থেকে নাম বাদ গেলেই ডিটেনশন ক্যাম্প। ছোট ছোট বাচ্চা সমেত মা’কে ভরে দেওয়া হচ্ছে ওই ক্যাম্পে। ক্যাম্প তো নামেই, আসলে ওটা জেল। বাচ্চাদের জেলে পুরছো, আবার মনুষ্যত্বের কথা বলছো! মমতার অভিযোগ, এনআরসি’র মতোই আরেকটা ললিপপ, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা সিটিজেন্স অ্যামেন্ডমেন্ট বিল। কী আছে বিলে? জেনে নিন, আমি বলছি। এই বিল কার্যকর হলে, দেশের নাগরিককে ৫/৬ বছরের জন্য বিদেশি হতে হবে। এরপর ওদের দয়া হলে আপনাকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তো মাঝের বছরগুলোয় করবেন কী? বিদেশি তকমা লাগিয়ে ঘুরতে হবে।
তৃণমূল সুপ্রিমোর আহ্বান, এবার ফিরতে দেবেন না মোদিকে। ফিরলে আপনাদের সর্বনাশ। কেড়ে নেবে যাবতীয় অধিকার। আপনি যদি টিকতে না পারেন, চিন্তা করবেন না। বাংলা আছে, আশ্রয় দেবে। বিপদে পড়ুন চাই না। আপনারা যাতে নিজের মাটিতে ভালো থাকেন, তার জন্যই লড়াই। কংগ্রেস সহ অন্যদের সুযোগ দিয়েছেন। একবার তৃণমূলকে পরখ করে দেখুন। আমাদের পয়সা দিয়ে কেনা যাবে না। ভিক্ষে নয়, চাইছি ঋণ, তৃণমূলকে ভোট দিন। এই জোড়াফুল সম্প্রীতির চিহ্ন, হিন্দু-মুসলমানের চিহ্ন। দেশ গড়ার চিহ্ন। ধুবড়িবাসী পাশে থাকুন, আমরা আপনাদের আগলে রাখব।