স্বপন দাস, সাগর: ঘড়ির কাঁটায় ছ’টা পঁচিশ। কাকদ্বীপের লট নম্বর আটের ভেসেল ঘাটে এসে বেজায় তাড়াহুড়ো শুরু করলেন সাগরের জোড়া মন্দিরের বাসিন্দা ভগীরথ সাউ। পাঁচ মিনিট পর সাগরের কচুবেড়িয়ার উদ্দেশে রওনা দেবে ভেসেল। টিকিট কেটে এক ছুটে ভেসেলে উঠে পেছনের দিকে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে থাকেন ভগীরথ। ‘এত তাড়াহুড়ো কিসের!’ প্রশ্ন করতেই তাঁর জবাব, ‘বাবা বারবার ফোন করছে। এখনও ঘরের চাল বাঁধা হয়নি। পানের বরজও বাঁশ দিয়ে শক্ত করে বাঁধতে হবে। ধানের বস্তা ইট দিয়ে উঁচু করতে হবে। এখনও কোনও কাজই হয়নি। আজ সারা রাত ধরে কাজ করতে হবে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় চলে এল বলে।’ তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি হাওড়ার বেলগাছিয়ায় একটি সংস্থায় চাকরি করেন। ভেসেলে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে সাগরের রুদ্রনগরের বাসিন্দা প্রভঞ্জন মাইতি। ভগীরথবাবুর কথা শুনে তিনিও একই সুরে বলেন, ‘আমাকেও বাড়িতে ফিরে ছাদের অ্যাসবেসটরস দড়ি দিয়ে বাঁধতে হবে। গতবার বিপর্যয়ে প্রচুর ক্ষতি হয়েছিল। এবার শুনছি ঘূর্ণিঝড় সাগরদ্বীপেই আছড়ে পড়তে পারে। এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। বাড়ি ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গেল।’
কচুবেড়িয়ার ঘাটে ভেসেল দাঁড়াতেই যাত্রীরা ছোটাছুটি শুরু করলেন। রাতের দিকেও গাড়িতে ঠাসা ভিড়। দেখলেই বোঝা যায় সবার বাড়ি ফেরার তাড়া রয়েছে। কাকদ্বীপ কলেজের কয়েকজন ছাত্রীও এদিন হোস্টেল থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। সাগরের রাস্তা তখন প্রায় শুনশান। দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। তবে এদিন ভেসেল ও গাড়ির যাত্রীদের মধ্যে ভোট নিয়ে কোনও মাথাব্যথা দেখা যায়নি। কাউকে কোনও আলোচনা করতে শোনা যায়নি। সবার মধ্যেই আতঙ্ক, ঘূর্ণিঝড় রেমাল কতদূর রয়েছে। কবে ও কখন কোথায় আছড়ে পড়বে, তা নিয়েই সবার মধ্যে একটা কৌতূহল।