গুরুজনের চিকিৎসায় বহু ব্যয়। ক্রোধ দমন করা উচিত। নানাভাবে অর্থ আগমনের সুযোগ। সহকর্মীদের সঙ্গে ঝগড়ায় ... বিশদ
মামাবাড়ির সঙ্গে মাঠে যাওয়ার অভ্যাসে পরিণত হল। ৬০ পয়সার টিকিট কেটে খেলা দেখতাম। টিকিট কাটতে গিয়ে ঘোড়ার লাথিও খেয়েছি। তবুও মাঠে যাওয়া ছাড়িনি। ১৯৭৫’এ ইস্ট বেঙ্গল যেবার মোহন বাগানের পাঁচ গোল দিল, সেই ম্যাচেরও সাক্ষী ছিলাম। তারপর মাঠে যাওয়ার অভ্যাস বদলে গেল নেশায়। ৬০ পয়সার টিকিট তখন বেড়ে ১ টাকা ১০ পয়সা হয়ে গিয়েছে।
আমি ১৯৭৯ সালে স্নাতক হই। তারপর একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পাই। বেতন ছিল সাড়ে চারশো টাকা। প্রথম মাসের বেতন পেয়েই ইস্ট বেঙ্গলের সদস্যপদ গ্রহণ করি। সেদিনটা এখনও ছবির মতো মনে আছে। বন্ধুদের মেম্বারশিপ কার্ড দেখানোর মধ্যে প্রচ্ছন্ন গর্ব ঝরে পড়ত। এই ক্লাবের সুখে-দুঃখে নিজেকে শামিল করেছি। দল জিতলে শিশুসুলভ উল্লাস মন ভরিয়ে দিত। আর হারলে মনে হতো, গ্যালারি থেকে ঝাঁপ দিই। চেতলায় মোহন বাগান সমর্থকের সংখ্যা বেশি। স্বাভাবিকভাবেই ওরা ইস্ট বেঙ্গলের ফ্ল্যাগ লাগাতে দিত না। আজ বলতে দ্বিধা নেই, তাই নিয়ে মারামারি পর্যন্ত করেছি। আসলে ইস্ট বেঙ্গলের প্রতি আমার ভালোবাসা গুণোত্তর প্রগতিতে বেড়েছে। শুধু খেলা নয়, প্র্যাকটিসেও হাজির থাকতাম।
যুবক বয়সে ক্রিকেটও দেখতাম, তবে ফুটবলের প্রতি আকর্ষণের মাত্রা ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম। আমার প্রিয় ফুটবলারদের তালিকায় থাকবেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত, হাবিব, আকবর, মজিদ বাসকর ও কৃশানু দে। ওঁদের খেলা দেখার জন্যই মাঠে ছুটে যেতাম। নিয়মিত মাঠে যাওয়ায় পল্টুদা ক্রিকেট সাব কমিনিটর কনভেনার করে দিয়েছিলেন। সে সময় সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অরূপ ভট্টাচার্যদের সঙ্গে মাঠে থাকতাম। প্র্যাকটিস দেখতাম। তবে ক্রিকেটের দায়িত্বে থাকলেও ফুটবলের প্রতি ভালোবাসায় বিন্দুমাত্র ভাঁটা পড়তে দিইনি। মান্না দে’র সেই বিখ্যাত গান মনে পড়ে, ‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল’, সত্যিই তাই। চামড়ার এই গোলকে কী আকর্ষণ আছে তা বলে বোঝানো মুশকিল।
বেশ কয়েক বছর আগে টুটু বসু আমায় মোহন বাগানের সদস্য হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বলেছিলাম, এই দ্বিচারিতা আমার দ্বারা হবে না। ইস্ট বেঙ্গলের কট্টর সমর্থক কখনও মোহন বাগনের সদস্য হতে পারে না। মহমেডান স্পোর্টিংয়ের কোনও খেলা মাঠে গিয়ে খেলা। ১৯৭৬ সালে ১৭ সেকেন্ডে করা আকবরের গোলে যেবার ইস্ট বেঙ্গল ডার্বি হারল সেদিন রাতে কিছু খেতে পারিনি। এরকম ছিল ক্লাবপ্রেম। পরে টলি ক্লাবসহ কলকাতার অনেক ক্লাবের মেম্বার হয়েছি। কিন্তু ইস্ট বেঙ্গলের কার্ডই শুধুমাত্র পকেটে রাখি।
নয়ের দশকের শেষদিক থেকেই ইউরোপিয়ান ফুটবল দেখি। দারুণ বললেও কম বলা হয়। বিশ্বকাপের জন্য অপেক্ষা করে থাকি। কিন্তু আবেগের টান তো লাল-হলুদেই। এখন বিভিন্ন কাজের চাপে সবসময় মাঠে যেতে পারি না। কিন্তু নাড়ির টান তো রয়েই গিয়েছে। সে বাঁধন ছিন্ন করবে, এমন সাধ্য কার। রবিবার মর্যাদার ডার্বি। অন্যান্য সমর্থকদের মতো আমার মধ্যেও চাপা টেনশন রয়েছে। তবে দুই দলের অনুরাগীদের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ, মাঠের উত্তেজনা যেন মাঠেই থাকে। সব স্তরে সম্প্রীতি বজায় থাকুক, এটাই আমি চাই। কয়েকজন অবশ্যই এই পারস্পরিক ভালোবাসা নষ্ট করার তাল খোঁজে। তাঁদের প্ররোচনায় পা দেবেন না। ডার্বি হোক মাঠের ভিতরেই। খেলা শেষের পর যেন ইস্ট বেঙ্গল-মোহন বাগান সমর্থকরা যেন নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরতে পারে।
অনুলিখন: সঞ্জয় গঙ্গোপাধ্যায়