সংবাদদাতা, হলদিয়া: শোকের আবহে ভোট দিয়েই খুনের প্রতিবাদ জানাল শেখ মইবুলের পরিবার। শুক্রবার গভীর রাতে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে মহিষাদলের তৃণমূল নেতা মইবুল খুন হন বলে অভিযোগ। মহিষাদলের বেতকুণ্ডু গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তাঁর যথেষ্ট পরিচিতি ছিল। গেঁওখালি জলপ্রকল্পে সামান্য হেল্পারের কাজ করতেন তিনি। কিন্তু কেউ অসুস্থ হলে কিংবা সামাজিক কোনও কাজে সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়তেন মইবুল। তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে বরাবরই ভালো সংগঠক হিসেবে প্রশংসা পেতেন। সেই মইবুল এভাবে রাজনৈতিক আক্রোশে হঠাৎ খুন হয়ে যাবেন, ভাবতে পারছে না ধামাইতনগর ও ধর্মপুর। পঞ্চায়েত অফিসের পাশে মইবুলের বাড়িতে কান্নার রোল। প্লাস্টারহীন দোতলা ছোট পাকা বাড়ি। মইবুলরা পাঁচ ভাই সেখানেই কোনওরকমে থাকেন। মইবুলের স্ত্রী খাদিজা বিবি বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশীরা সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
তমলুকে ময়নাতদন্তের পর এদিন সন্ধ্যা নাগাদ মইবুলের মৃতদেহ পৌঁছয় তাঁর গ্রামে। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য প্রমুখ। মইবুলের বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও মেয়েদের সান্ত্বনা দেন তাঁরা। মইবুলের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। দুই মেয়ে মনসুরা খাতুন ও মেহেবুবা খাতুন বাবার মৃত্যুশোকের মধ্যেও ভোট দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, ইভিএমে বোতাম টিপে বাবার মৃত্যুর জবাব দিয়েছি। আমরা চাই তৃণমূলের প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য জিতুক। বাবার হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি হোক। মইবুলের সন্তান হারা মা বলেন, ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। ছেলেকে যারা খুন করেছে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিবাদ জানিয়েছি। মইবুলের বড় বউদি মিনারা বিবি বলেন, আমরা বাড়ির সবাই একসঙ্গে গিয়ে ভোট দিয়েছি। এটাই আমাদের প্রতিবাদ। মইবুলের স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে, ওকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। এদিন মহিষাদলে খুনের ঘটনার পর শুধু বেতকুণ্ডু নয়, মহিষাদল জুড়েই থমথমে পরিবেশ দেখা গিয়েছে।
তবে শিল্পাঞ্চলে ভোট শান্তিপূর্ণভাবেই হয়েছে। হলদিয়া ও মহিষাদলে মডেল পিঙ্ক বুথে ভোট দিতে গিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে ভোটারদের। মহিষাদলে দেবপ্রসাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিঙ্ক বুথ বিয়েবাড়ির আদলে সেজে ছিল। এমন বুথে ভোট দিয়ে দারুণ খুশি পম্পা সামন্ত প্রামাণিক, হেমলতা সামন্ত, প্রতিমা ঘোড়ইরা। ভোট দেওয়ার পর সোফায় বসে ফ্যানের হাওয়া, ঠান্ডা পানীয় জল পরিষেবা তাঁদের কাছে অভিনব। এদিন হলদিয়া শিল্পাঞ্চল ও লাগোয়া গ্রাম এলাকায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন মানুষ। সকাল সকাল প্রতিটি বুথেই মহিলা ও তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের ভিড় ছিল। বেলা ১২টার মধ্যেই সিংহভাগ ভোট পড়ে যায়। ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগে কয়েকটি জায়গায় পুলিস ও কেন্দ্রীয় বাহিনী তাড়া করে লোকজনকে। সকালে শহরের কয়েকটি এলাকায় পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন সিপিএমের প্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি নেতা শ্যামল মাইতি অভিযোগ করেন, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে গান্ধীনগরে বাবুলাল মণ্ডল নামে এক বিজেপি নেতাকে তৃণমূল মারধর করেছে। যদিও তৃণমূল একথা অস্বীকার করেছে। এদিন দিনভর ১২-১৪টি গাড়ির বিরাট কনভয় নিয়ে হলদিয়ায় চক্কর মেরেছেন বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সকালে হলদিয়ার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ডিঘাসীপুর বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁকে ‘গো ব্যাক’ এবং ‘চোর চোর’ স্লোগান দেয় স্থানীয়রা। পরে বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ হলদিয়ায় ফের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। ২৩২ নম্বর বুথ ভবানীপুর শান্তিশ্রী বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরে প্রার্থীকে দেখে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান ওঠে। পুলিস লাঠি চালিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মেজাজ হারিয়ে বিজেপি প্রার্থীও মহিষাদলের দিকে রওনা দেন। • মহিষাদলের তৃণমূল নেতা মইবুল। -নিজস্ব চিত্র