শরীর নিয়ে চিন্তায় থাকতে হবে। মাথা ও কোমরে সমস্যা হতে পারে। উপার্জন ভাগ্য শুভ নয়। ... বিশদ
মানিকচকের গঙ্গা সংলগ্ন ডোমহাট এলাকায় ১৯০৫ সালে প্রথম শুরু হয় দুর্গোৎসব। তখন ওই এলাকায় ভাঙনের অভিশাপ ছিল না। ছিল না বাস্তুহারা হওয়ার আতঙ্কও। স্থানীয় বাসিন্দারা চারদিন ধরে মেতে উঠতেন মায়ের আরাধনায়। প্রায় ১১৫ বছর ধরে চলে আসা মানিকচক দিয়ারা সর্বজনীন দুর্গোৎসবে প্রথম ধাক্কা লাগে শুরুর প্রায় ৯০ বছর পরে। ১৯৯৫ সালে ভাঙনের কারণে প্রথমবার বাস্তুহারা হন মা দুর্গা। স্থানীয় দাল্লুটোলা গ্রামের মায়ের অধিষ্ঠানের স্থানটি গ্রাস করে নেয় নদী।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব ভোলানাথ মণ্ডল এখনও স্মরণ করেন কীভাবে ভাঙন সাধারণ মানুষের সঙ্গে সঙ্গে কেড়ে নেয় মা দুর্গার মন্দিরও। ১৯৯৫ সালে কাছেই বেচুটোলাতে শুরু হয় দুর্গা আরাধনা। কিন্তু এবারও বাদ সাধে প্রকৃতি। মাত্র ১২ বছরের মধ্যে ভাঙনের করাল গ্রাসে ফের ঠাঁই বদল হয় দেবীর। এবার মায়ের পুজো শুরু হয় ডোমহাট পালপাড়ায়। কিন্তু চার বছরের বেশি স্থায়ী হয়নি নতুন ঠিকানাও। ভাঙনের কারণে ২০১১ সাল থেকে হাড্ডাটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন আমবাগানে শুরু হয় দুর্গাপুজো। কিন্তু পরে সরতে হয় সেই জায়গা থেকেও। ২০১৬ সাল থেকে মায়ের আরাধনা শুরু হয় জোতপাট্টায়। বর্তমানে ডোমহাটে তৈরি হয়েছে দুর্গামণ্ডপ। পুজো হচ্ছে এখানেই।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক প্রদীপ মণ্ডল, বাসিন্দা উজ্জ্বল কর্মকার প্রমুখের বক্তব্য, বারবার জায়গা বদলেছে কিন্তু আমরাও হাল ছাড়িনি। ভাঙন অনেক কিছু কেড়ে নিলেও কেড়ে নিতে পারেনি আমাদের মাতৃ আরাধনার জেদ। ভাঙতে পারেনি আমাদের মনোবল। তাই জায়গা বদলাতে হলেও আমরা মায়ের পুজো চালিয়ে এসেছি। এবারও পুজো হবে। ভাঙন যেমন থাকবে, তেমনই পুজোও থাকবে।
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারা বলেন, এক সময় পুজোর যে জৌলুস ছিল তাতে ভাঁটা পড়েছে। কিন্তু আন্তরিকতা একই রকম রয়েছে। তাঁরা বলেন, ভয়াবহ ভাঙনে অনেকেই বাধ্য হয়েছেন পূর্বপুরুষের ভিটে থেকে অন্যত্র সরে যেতে। কিন্তু যেখানেই সরতে হোক, দুর্গাপুজো কোনওভাবেই বন্ধ হতে দেননি কেউই। এবার তাই করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সাদামাটাভাবে হলেও দুর্গার আবাহনের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন মানিকচক দিয়ারা সার্বজনীন দুর্গোৎসবের সংগঠকরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা রীতিমতো আবেগতাড়িত এই পুজো নিয়ে। তাঁদেরই একজন বলেন, ভাঙন অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। আমাদের সঙ্গে সঙ্গে মা দুর্গাও স্থান বদল করেছেন। আসলে তিনি যেন আমাদের ঘরের মেয়ে। পরিবার যখন ভাঙনে পীড়িত হয়েছে তখন পরিবারের সদস্যদের সেই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে ভাঙনে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলির কাছে আরও বেশি ঘরের মেয়ে উঠেছেন উমা।