শরীর নিয়ে চিন্তায় থাকতে হবে। মাথা ও কোমরে সমস্যা হতে পারে। উপার্জন ভাগ্য শুভ নয়। ... বিশদ
এখানে মা রাজরাজেশ্বরী যোদ্ধাবেশী। তাঁর পরনে টকটকে লাল শাড়ি, গায়ে বর্ম ও হাতে অস্ত্র। ঘোড়ার আদলে গড়া সিংহের উপর দেবী উপবিষ্টা। তাঁর সামনের দু’টি হাত বড়, পিছনের আটটি হাত ছোট। প্রতিমার পিছনে রয়েছে অর্ধ চন্দ্রাকৃতি ছটা, তাতে আঁকা রয়েছে দশমহাবিদ্যা। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পুজোর প্রধান আকর্ষণ অষ্টমীর সন্ধিপুজো আর দশমীর সিঁদুর খেলা। ১০৮টি ঘিয়ের প্রদীপ আর ১০৮টি প্রস্ফুটিত পদ্মে দেবীর সন্ধিপুজো হয়। প্রতি বছর, এক মুহূর্তের জন্য হলেও সুগন্ধি ধুনোর ধোঁয়ায় সম্পূর্ণ ঢেকে যায় মায়ের মুখ। প্রচলিত বিশ্বাস, ওই সময়ই মা আসেন। আগে ১০৮টি নীলপদ্মে পুষ্পপত্র সাজানো হতো। এখন অবশ্য তা আর হয় না।
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির তরফে অমৃতা রায় জানালেন, অন্যান্যবারের মতো এবারও পুজো হবে রীতি মেনেই। তবে পুজোর সময় এবার সদর গেট খুলে রাখা হবে না। পাশের ছোট গেটটি খোলা থাকবে। অবাধে সব জায়গায় ঘোরাফেরার উপরেও থাকছে নিষেধাজ্ঞা। দেবীর উচ্চতাও এবার কিছুটা কমছে।
রাজবাড়ির সূত্র ধরেই একসময় কৃষ্ণনগরের রায়বাড়িতেও দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দ্বিতীয় পুত্র ভৈরবচন্দ্রের তিন কন্যার বিবাহ হয়েছিল রায়বাড়ির তিনটি পরিবারে। রায় পরিবারে পুজো শুরু হয় ১৭৫০ সালে। পুজোর বেশিরভাগ রীতি রাজবাড়ির মতোই। এখানে কাঠামোপুজো হয় উল্টোরথের দিন। মহালয়ার দিন থেকে রঙের কাজ শুরু হয়। ষষ্ঠীর দিন রাতে পরিবারের সদস্যরাই ঢাকের বাদ্যি সহযোগে দেবীকে পাটে তোলেন। সপ্তমীর রাতে হয় অর্ধরাত্রি পুজো। পরিবারের তরফে কৌশিক রায় বলেন, প্রতিমার উচ্চতা এবার আমরাও অনেকটা কমিয়েছি। তাতে বিসর্জনের সময় বেহারা কম লাগবে।
কৃষ্ণনগরের নীলদুর্গা বাড়িতে মা পূজিতা হন নীলদুর্গা রূপে। এই বাড়ির মা নীলবর্ণা হওয়ার পেছনে রয়েছে একটি সুন্দর কাহিনী। তখনও ভারত-বাংলাদেশ ভাগ হয়নি। সেই সময় বাংলাদেশের চিন্তাহরণ চট্টোপাধ্যায় এই পুজো শুরু করেছিলেন। পুজোর আগে মায়ের মূর্তি গড়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিপত্তি ঘটল রং করতে গিয়ে। ক্ষীণ দৃষ্টির কারিগর অন্ধকারে রং করতে গিয়ে ভুল করে দেবীর নীল রং করে দেন। তড়িঘড়ি সেই ভুল শোধরানোর ব্যবস্থা শুরু হয়। কিন্তু ভুল শোধরানোর আগেই রাতে মায়ের স্বপ্নাদেশ পান চট্টোপাধ্যায় বংশের এক পূর্বপুরুষ। স্বপ্নে মা জানান, নীলবর্ণা রূপেই মায়ের পুজো করতে হবে। পরিবারের বর্তমান সদস্য তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, সেই থেকে আমাদের মা নীলবর্ণা। প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ বছরের পুরোনো পুজো এটি।
কৃষ্ণনগরের ‘তিন ইঞ্চি’ দুর্গাবাড়ির পুজোতেও রয়েছে ব্যতিক্রমী ধারা। এখানে সপ্তমীতে হয় শ্যামাপুজো, অষ্টমীতে তাঁর বিসর্জন দিয়ে তবে অষ্টমীপুজো শুরু হয়। এবছর এই পুজো ২৪৬ বছরে পা দিল।
কৃষ্ণনগরের গেটরোড এলাকার এই তিন ইঞ্চি দুর্গাবাড়ির পুজো নিয়ে অনেকেরই কৌতূহল রয়েছে। আসলে খরচ বাঁচাতেই দাস বংশের পূর্বসূরীরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ঠিক হয়, ইটের তিন ইঞ্চি প্রস্থ দিয়ে দেওয়াল গেঁথে গড়া হবে দুর্গাবাড়ি। ১৯৫২ সালে বিজয়কুমার দাস এই বাড়ির প্রতিষ্ঠা করেন। বাড়ির দেওয়াল আজও তিন ইঞ্চিই রয়েছে।