শ্রীকান্ত পড়্যা, তমলুক: মহামারী পরিস্থিতি প্রভাবশালী নেতাদের পুজোকেও এবার জৌলুসহীন করে দিয়েছে। বিগত বছরের মতো বাহারী থিমের চাকচিক্য নেই। উদ্বোধনের পরও আলোর রোশনাই উধাও। এবছর বাড়ি বাড়ি চাঁদা আদায় বন্ধ। অনেক ডাক্তার চেম্বারে চাঁদা দেওয়া সম্ভব নয় বলে পোস্টার সাঁটিয়ে দিয়েছেন। যার ফলে পুজো খাতে আদায় একেবারে কম। খোলামেলা মণ্ডপে চলছে পুজোর আয়োজন। কোন নেতার পুজোয় কতখানি জেল্লা, সেই প্রতিযোগিতা থেকে আপাতত বিরত প্রত্যেকেই। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে জেলার আটটি পুজোর উদ্বোধন করেছেন। তারমধ্যে বেশ কয়েকটি পুজোর মাথায় রয়েছেন বিধায়ক থেকে পুর চেয়ারম্যান, শহর সভাপতির মতো নেতারা। উদ্বোধনের অপেক্ষায় আরও অনেক নেতার পুজো। প্রত্যেকেই জমকালো থিম এড়িয়ে সাদামাটা মণ্ডপের দিকে ঝুঁকেছেন।
চণ্ডীপুর ব্লকের চৌখালি আদি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজোর প্রধান পৃষ্টপোষক হলেন স্থানীয় বিধায়ক অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য। এবার ৬৫বছরে পা দিয়েছে এই পুজো। বেশ জাঁকজমক করে পুজোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু, করোনা সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে। খোলামেলা মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। অমিয়কান্তিবাবু বলেন, অন্যান্য বছর বাহারী থিমের পুজো হতো। বাজেট থাকত ১০-১২ লক্ষ টাকা। এবার পরিস্থিতি অন্যরকম। তাই বাজেট পাঁচ লক্ষ টাকা। তিনদিন খোলা মণ্ডপে প্রতিমা দর্শন করা যাবে।
তমলুকের শঙ্করআড়ায় ইয়ুথ স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো শহরের বিগবাজেটের পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম। তৃণমূলের একঝাঁক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা এই পুজো কমিটির মাথায় আছেন। প্রতিবছর থিমের চমক দেখতে দর্শনার্থীদের ঢল নামে। গত বছর বাজেট ছিল ন’লক্ষ টাকা। এবার একধাক্কায় সেটা আড়াই লাখে নেমে এসেছে। কোনও চাকচিক্য নেই। তিনদিক খোলা মণ্ডপ। ক্লাব সভাপতি তথা ১১নম্বর ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, মহামারী পরিস্থিতিতে এবার বাজেট চার ভাগের এক ভাগ হয়ে গিয়েছে।
পাঁশকুড়ার প্রতাপপুর দুর্গাপুজো কমিটির পুজো পুরসভার চেয়ারম্যান নন্দকুমার মিশ্রের পুজো হিসেবেই পরিচিত। এবছর এই পুজো ৫৫ বছরে পড়ল। থিমের টানে এখানে দর্শনার্থীদের ঢল নামত। গত বছর বাজেট ছিল ১২লক্ষ টাকা। এবছর বাজেট কমে হয়েছে পাঁচ লক্ষ টাকা। একেবারে খোলামেলা মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। নন্দবাবু বলেন, সাধারণের কাছ থেকে চাঁদা আদায় পুরোপুরি বন্ধ। দীর্ঘ লকডাউনে সাধারণ মানুষের রুজিরুটিতে বিরাট ধাক্কা লেগেছে। মহামারী নিয়ে আতঙ্ক রয়েছে। তাই এবার স্বাস্থ্যবিধির উপর জোর দিয়ে সাদামাটা মণ্ডপ হয়েছে।
এগরা ফ্রেন্ডস ইউনাইটেড ক্লাবের পুজোর বৃহস্পতিবারই উদ্বোধন করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুজো কমিটির সভাপতি রয়েছেন এগরা শহর তৃণমূল সভাপতি জয়ন্ত সাহু। খোলামেলা মণ্ডপে এবার করোনার উপর থিম তৈরি হয়েছে। তবে, গত বছরের তুলনায় পুজোর বাজেট এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। উদ্বোধনের পর জমকালো ছবিটা উধাও। জয়ন্তবাবু বলেন, এবার আমাদের পুজো পাঁচ বছরে পড়ল। গতবছর ১৫লক্ষ টাকা বাজেট ছিল। এবার সেটা কমে পাঁচ লক্ষ টাকা।
মহিষাদলের তেরপেখ্যা মোড়ে মাইকো ক্লাবের পুজো জেলার বিগ বাজেটের পুজোগুলির অন্যতম। পুজো কমিটির সভাপতি মহিষাদল ব্লক তৃণমূল সভাপতি তিলক চক্রবর্তী। বিগত বছরগুলিতে এখানকার পুজোর বাজেট ২০ থেকে ২২লক্ষ টাকা থাকত। এবার বাজেট অর্ধেক হয়েছে। মণ্ডপে ঢোকার মুখে করোনার উপর একটি থিম থাকছে। তাছাড়া খোলামেলা মণ্ডপ হচ্ছে। তিলকবাবু বলেন, এবছর পরস্থিতি অন্যরকম। তাই বাজেট অর্ধেক করেছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলামেলা মণ্ডপ হচ্ছে। মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী উদ্বোধন করবেন।