নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি এবং কলকাতা: ত্রিপুরা, গোয়ার পর এবার গেরুয়া শিবিরের ‘স্বপ্নরাজ্য’ উত্তরপ্রদেশ! বিজেপির ‘পোস্টার বয়’ যোগী আদিত্যনাথের গড়ে হানা দিতে যাচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছট পুজোর পরেই ‘রাজনৈতিক এজেন্ডা’ নিয়ে লখনউ পৌঁছবেন বলে সোমবারই শিলিগুড়িতে ঘোষণা করেছেন মমতা। তার আগে উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক পরিসরে জোড়াফুল শিবিরের ‘অবস্থান’ সুনিশ্চিত করতে বড়সড় চমক দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। দু’দিন আগেই অবশ্য তাঁর সেনাপতি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, ত্রিপুরা ও গোয়ার পরে এবার তৃণমূলের গন্তব্য উত্তরপ্রদেশ। সেই অভিষেকের উপস্থিতিতে ইন্দিরা গান্ধীর ‘কিচেন ক্যাবিনেটের’ সদস্য, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত কমলাপতি ত্রিপাঠির নাতি কংগ্রেস নেতা রাজেশপতি ত্রিপাঠি এবং তাঁর পুত্র ললিতপতি ত্রিপাঠির হাতে মমতা তুলে দিয়েছেন জোড়াফুল পতাকা। বলেছেন, ‘কংগ্রেসি রাজনীতির নামকরা পরিবারের দুই সদস্য আমাদের সঙ্গে এলেন। কংগ্রেসের সব পদ ছেড়ে তাঁরা এসেছেন। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই উত্তরপ্রদেশে সংগঠন গোছাব।’ উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি ললিতপতি গত ১৯ সেপ্টেম্বর দলের সংস্রব ত্যাগ করার চিঠি পাঠিয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী, রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কাকে। তারপর থেকেই প্রিয়াঙ্কা-টিমের অন্যতম এই সদস্যের পরবর্তী রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছিল। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেস রাজনীতির জনপ্রিয় ‘ব্রাহ্মণ মুখ’ ললিতপতি ত্রিপাঠি এবং তাঁর বাবা রাজেশপতি ত্রিপাঠি, মোদিশাহসুরমর্দিনী মমতার হাত ধরলেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতা জোড়াফুল শিবিরে আসার আগ্রহ দেখিয়েছেন। আগামী বছর ওই রাজ্যে বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে ‘ঘর গোছানো’র কাজ শুরু করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তার মধ্যেই রাজেশপতি এবং তাঁর পুত্রের দলত্যাগ ‘হাত শিবিরে’র কাছে বড়সড় ধাক্কা। এর আগে উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের ব্রাহ্মণ মুখ বলে পরিচিত প্রাক্তন এমপি অন্নু ট্যান্ডন এবং জিতিনপ্রসাদ কংগ্রেস ছেড়েছেন। এবার ইন্দিরা ঘনিষ্ঠ পরিবার।
কেন ছাড়লেন কংগ্রেস? উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন এমএলসি রাজেশপতি বলেন, ‘গান্ধীজি, ইন্দিরাজির আদর্শকে সামনে রেখে কংগ্রেস করতাম। কিন্তু সেই আদর্শ থেকে সরে এসেছে এখনকার কংগ্রেস। তাই এমন একজনের হাত ধরলাম, যিনি গান্ধীজি-ইন্দিরাজির আদর্শ মেনেই রাজনীতি করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখেই চলবে আমাদের সংগ্রাম।’ প্রাক্তন বিধায়ক ললিতপতি বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশে বর্তমানে যে সাম্প্রদায়িক ও বিভেদকামী শক্তি ক্ষমতায় বিরাজ করছেন, সেই যোগীকে হটাতে পারেন একমাত্র মমতা।’ এমনিতেই ত্রিপুরা-গোয়ায় কংগ্রেসকে পিছনের সারিতে পাঠিয়ে জোড়াফুলকে সামনে নিয়ে আসায় মমতার উপর বেজায় ক্ষিপ্ত ১০, জনপথ। ভিন রাজ্যে তৃণমূলের কোনও জনভিত্তিই নেই—এহেন কটাক্ষে বিঁধেছেন অধীর চৌধুরী থেকে পি চিদম্বরম। জবাব এদিন রাজনৈতিকভাবেই দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘কেউ কেউ আঞ্চলিক দল বলে তৃণমূলকে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না, কটাক্ষ করছেন। কিন্তু জন্ম যেখানেই হোক, কাজের ব্যাপ্তিই আসল পরিচয়। বিজেপি বিরোধী জনমতকে সামনে আনতে তৃণমূল এখন সেটাই করছে।’- নিজস্ব চিত্র