বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে আজকের দিনটা শুভ। কর্মক্ষেত্রে আজ শুভ। শরীর-স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। লটারি, শেয়ার ... বিশদ
পুজো শেষে বেরিয়ে এসে সংবাদমাধ্যমকে জানালেন, গোটা দেশের মানুষের শান্তির জন্য জগন্নাথদেবের কাছে প্রার্থনা করলাম, আর্শীবাদ চাইলাম। কোনও ভেদাভেদ নয়, বিভেদ নয়, সবাই ভালো থাকুক। দেবতার কাছে শুধু এটুকুই চাই। পুরী রওনা দেওয়ার আগে মঙ্গলবার কলকাতা বিমানবন্দরে দিল্লির হিংসা নিয়ে বিচলিত মমতা নিজের উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার কথা জানিয়ে শান্তির আহ্বান করেছিলেন। এদিন দিল্লির ঘটনার উল্লেখ না করলেও, তাঁর আকুতি ধরা পড়েছে কন্ঠে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ হৃদয় কাঁদছিল শান্তির কামনায়। রক্ত নয়, শান্তিই এখন একমাত্র চাহিদা। সবাই মিলে শান্তি ফিরিয়ে আনাটাই হোক একমাত্র প্রয়াস।
এদিন জগন্নাথদেব দর্শনে আসবেন বড়মাপের কেউ একজন, মন্দির চত্বরে কানাঘুষো ছিল সকাল থেকেই। তা নিয়ে পুণ্যার্থীদের মধ্যেও ছিল উৎসাহ। দুপুরের পর থেকে খাকি উর্দিধারী ওড়িশা পুলিসের তৎপরতা আরও বাড়ায় ভিভিআইপি’র আগমন সম্পর্কে নিশ্চিত হন সবাই। বিকেলে যখন জানা গেল, আর কেউ নয়, মমতা আসছেন জগন্নাথদেব দর্শনে, মন্দির চত্বর তখন পুরী ভ্রমণে আসা বাঙালির ভিড়ে ঠাসা। হিমশিম খেতে হচ্ছিল নিরাপত্তারক্ষীদের। বিকেল সওয়া চারটে নাগাদ মন্দির চত্বরে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্দির ট্রাস্টের মাধবচন্দ্র পুজাপণ্ডা, নীলকন্ঠ মহাপাত্র, দুই দৈতাপতি রাজেশ ও জগন্নাথের সঙ্গে মমতাকে স্বাগত জানান পুরীর জেলাশাসক বলবন্ত সিং। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে ধুতি-উত্তরীয় পরিহিত এক ঝাঁক কিশোর তখন নাগাড়ে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ করে চলছিল। বিশালাকায় মঙ্গলদীপ থেকে আর্শীবাদী ‘তাপ’ নিলেন মমতা। একের পর এক পুস্পস্তবকে বরণ করা হল বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে। সিঁড়ি বেয়ে কয়েক ধাপ উঠতেই দু’পাশ থেকে শুধু দিদি, দিদি ডাক আর জয় জগন্নাথ রব। হাতজোড় করে সিঁড়ি ভাঙছিলেন মমতা।
প্রতিদিন বিকেলে নিয়ম করে জগন্নাথ মন্দিরের ধ্বজা বদলানোটা একাদশ শতাব্দী থেকে শুরু হওয়া প্রচলিত রীতি। সেই বিশেষ আচার দেখার জন্য মন্দির চত্বরে তখন কয়েক হাজার ভক্তের জমায়েত। উপরি পাওনা হিসেবে মমতাকে সামনে পেয়ে ভক্তদের তখন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। দিদি, দিদি ডাকের সঙ্গেই শোনা গেল মমতা ব্যানার্জি জিন্দাবাদ ধ্বনিও। প্রত্যুত্তরে সবাইকে নমস্কার করলেন মমতা। জগন্নাথদেবকে দর্শন এবং উপাচার মেনে পুজো শেষে মুক্তিমণ্ডপ, বিমলা মন্দির, মহালক্ষ্মী মন্দিরেও পুজো দিলেন । এরপর রাধাবল্লভ-লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরের দালানে বসে ধ্বজা পাল্টানোর রীতি প্রত্যক্ষ করছিলেন। খুঁটিয়ে জানছিলেন গোটা বিষয়টা। মন্দির ট্রাস্ট্রের কর্তারা চাইছিলেন, বংশ পরম্পরায় ধ্বজা পাল্টাচ্ছেন যিনি, তাঁর সঙ্গে একবার দেখা করুন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। জানানো মাত্রই প্রস্তাবটা লুফে নিয়ে মমতা বলেন, আমি তো সেটাই চাইছিলাম। মন্দির বেয়ে তরতর করে নেমে এলেন সেই ধ্বজাবাহক। জগন্নাথদেবের আর্শীবাদী সেই ধ্বজা তুলে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। বললেন, বাংলার জয় হোক, জয় হোক মমতা ব্যানার্জির। গোটা মন্দির প্রাঙ্গণ জুড়ে তখন শুধুই জয় জগন্নাথ ধ্বনি। গলা মেলালেন মমতাও।